আরেকটা কথা। ভোর রাত চারটের সময় আপনি হাসপাতালে ঢুকলেন কি করে? ঢুকতে দিল?
নার্সকে মিথ্যে বলেছি আমি। বলেছি, জুনের সঙ্গে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছে, এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল টম। কথাটা সত্যি হলে খুশিই হতাম।
শেষ বিকেলে রবিন আর কিশোরকে তদন্তের ফলাফল জানাল মুসা। স্যালভিজ ইয়ার্ডে রয়েছে তিনজনে। রবিনের ফোক্সওয়াগনের ইঞ্জিন পরীক্ষা করছে সে। কিছু জিনিস খারাপ হয়েছে, যার ফলে গোলমাল করছে ইঞ্জিন, সেটাই দেখছে আর কথা বলছে। ফ্যান বেল্টটা প্রায় বাতিল হয়ে গেছে। বদলানো দরকার। পুরানো বাতিল মালের অভাব নেই ইয়ার্ডে। অন্য একটা ইঞ্জিনের বেল্ট খুঁজে বের করে নিয়ে এসেছে মুসা। লাগিয়ে দিয়ে দেখল চলে কিনা। চলছে। অন্তত আগেরটার চেয়ে ভাল। আঙুল দিয়ে টেনেটুনে দেখে বলল, শ দুই মাইল চালাতে পারবে। তারপর ঢিল হয়ে যাবে। রবিন, নতুন একটা কিনে নিয়ো।
ওসব ফ্যান বেল্টের কথার ধার দিয়েও গেল না এখন কিশোর। বলল, আমার কাছে সব চেয়ে আকর্ষণীয় লাগছে যে ব্যাপারটা, তা হলো, টমের একটা গাড়ি আছে।
কিশোর, রবিন বলল। মাঝে মাঝে এত দুর্বোধ্য লাগে না তোমার কথা, কি বলব! মুসা বলছে এক কথা, তুমি চলে গেলে আরেক কথায়। কেন, কারও গাড়ি থাকতে পারে না?
মাথায় কথা রাখতে পারো না, সে জন্যেই তোমাদের কাছে এত কঠিন লাগে। কেন, ভুলে গেলে, জুনের গাড়িটাকে তাড়া করেছিল আরেকটা গাড়ি?
টমকে বাদ দিয়ে রাখতে পারো। ওর গাড়িটার চলারই ক্ষমতা নেই। টায়ারগুলো বসা। ব্যাটারি ডাউন হয়ে আছে দুই হপ্তা ধরে।
সত্যি কথা না-ও তো বলতে পারে?
বলেছে, জোর দিয়ে বলল মুসা। কারণ আমারও সন্দেহ হয়েছিল। তাই ওর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেছি।
ও। তার পরেও আরেকটা ব্যাপার বাকি থেকে যায়। লোকটার মেজাজ ভীষণ খারাপ। তোমাকে যে চেন নিয়ে মারতে এসেছিল, সেটাই তার প্রমাণ।
শ্রাগ করল মুসা। ড্রাইভিং সীটে গিয়ে বসল। ইঞ্জিনের থ্রটল পরীক্ষা করার জন্যে ইগনিশনে মোচড় দিল। মিনিট খানেক ঠিকমতই গুঞ্জন করল ইঞ্জিন, তারপরে বিচিত্র একটা শব্দ করল, মনে হলো বলছেঃ প্লা-হুপ্পা-গ্যাক!
এ রকম করছে কেন? রবিনের প্রশ্ন। হেসে বলল, ইঞ্জিনটাকে জিজ্ঞেস করো তো, এ কথার মানে কি?
বলতে চায়, আমাকে কিনে ভুল করেছ। বেচে দিয়ে আরেকটা কেন। আমি বুড়ো মানুষ, আর পারি না।
অনুরোধ করো না, আর কটা দিন যেন আমাকে একটু সাহায্য করে। আর কিছু পয়সা জমিয়ে নিই। ওকে মুক্তি দিয়ে দেব।
চেষ্টা করলে কিছুটা ভাল হয়তো করা যায়, মুসা বলল। তবে সময় লাগবে। আপাতত এভাবেই চালাও আগামী হপ্তায় দেখি। তার পর? আমার কথা তো বললাম। কিশোর, হেনা তানজামিলা আর হেনরি অগাসটাসের খবর কি?
হাসল কিশোর। হেনাকে ফোন করেছিলাম। অ্যাক্সিডেন্টটা যখন হয়, তখন আরও ছজন লোকের সঙ্গে এলিভেটরে আটকা পড়েছিল। চমৎকার অ্যালিবাই। তবে হেনরি অগাসটাসের ব্যাপারটা চমকে দেয়ার মত। ব্যবসায়ে চিকেন লারসেনের সব চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ সে। দি ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল বলছে, এই কিছুদিন আগে চিকেনের পুরো ব্যবসাটা কিনে নিতে চেয়েছিল হেনরি।
তাই? আশ্চর্য! অবাক হলো রবিন। তাহলে তো রাস্তা থেকে ফেলার কথা লারসেনকে। তার মেয়েকে ফেলতে যাবে কেন?
জানি না, গাল চুলকাল কিশোর। অন্য ভাবে শাস্তি দিতে চেয়েছে হয়তো লারসেনকে। কিংবা ওর মেয়েকে মেরে ফেলে মন ভেঙে দিতে চেয়েছে। যাতে ব্যবসা নিয়ে আর মাথা না ঘামায় লারসেন।
লারসেনের মুরগীতে হেনরিই বিষ মেশাচ্ছে না তো?
না-ও হতে পারে। চিকেন নিজেই মেশাতে পারে। আর আরেকজন চরম সন্দেহভাজন লোক তো রয়েই গেছে। সেই লোকটা, যে হাসপাতালে ঢুকে জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করেছিল। ফারিহাকে নাম বলেনি।
এই সময় হেডকোয়ার্টারে ফোন বাজতে আরম্ভ করল। ধরতে গেল মুসা।
তিন গোয়েন্দা। মুসা আমান বলছি, স্পীকারের সুইচ অন করে দিল সে।
ফারিহা ফোন করেছে হাসপাতাল থেকে। মাত্র তিনটে শব্দ উচ্চারণ করল সে। আর তা-ই তিন গোয়েন্দাকে গাড়ির দিকে ছুটে যেতে বাধ্য করার জন্যে যথেষ্ট। সে বলেছে, জুনের ঘুম ভেঙেছে!
৪
রবিনের ফোক্সওয়াগনে করে হাসপাতালে ছুটল তিন গোয়েন্দা। ভটভট ভটভট করে কোনমতে চলল গাড়ি। যতটা স্পীড দেয়া সম্ভব দেয়ার চেষ্টা করল রবিন। পথে তিনবার বন্ধ হলো ইঞ্জিন। নেমে নেমে ঠিক করতে হলো মুসাকে।
হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামতেই লাফিয়ে নেমে পড়ল কিশোর। দিল দৌড়। তার পেছনে ছুটল অন্য দুজন। অ্যাক্সিডেন্টের রাতে কি ঘটেছিল, আজ জানতে পারবে জুনের মুখ থেকে।
অ্যাই, যাচ্ছ কোথায়! থাম!
তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনে ফিরে তাকাল তিন গোয়েন্দা। সেই লাল চুল নার্স, মারগারেট ইলারসন।
সরি, যেতে পারবে না, আজ আর কর্কশ ব্যবহার করল না। হাসলও মৃদু। মেয়ের সঙ্গে রয়েছেন মিস্টার লারসেন। ডাক্তার পরীক্ষা করছেন জুনকে। তোমাদের অপেক্ষা করতে হবে, রবিনের দিকে তাকাল। খারাপ না লাগলে আমার এখানেই এসে বসতে পারো।
হলের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। পাঁচ মিনিট কাটতেই যেন পাঁচটা বছর লাগল। তারপর দশ মিনিট। এই অপেক্ষা যেন পাগল করে দেবে তাকে।
আর বসে থাকতে পারল না। এককোণে নিচু একটা টেবিলে কিছু পত্রপত্রিকা পড়ে আছে। এগিয়ে গেল সেগুলোর দিকে।