নাম জিজ্ঞেস করেছ? মুসা জানতে চাইল।
করেছি। শুয়োরের মত ঘোৎ ঘোঁৎ করে চুপ থাকতে বলল। ধমক দিয়ে বলল, আমি ওর নাম জেনে কি করব? তারপর জুনের বিছানার চারপাশের পর্দাটা টেনে দিল যাতে আমি কিছু দেখতে না পারি।
তারপর? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
নানারকম খুটুরখাটুর শব্দ শুনলাম। মনে হলো, জুনের ওপাশে যতগুলো ড্রয়ার আছে সব খুলে খুলে দেখেছে।
তাড়াহুড়ো করে, না আস্তে আস্তে?
তাড়াহুড়ো করে।
হাসল কিশোর। তারমানে আন্দাজে কিছু করতে আসেনি। যা করতে এসেছে, জেনে বুঝেই এসেছে। কি খুঁজছিল, জানে।
কিন্তু পায়নি। খালি হাতে ফেরত যেতে দেখেছি।
পায়চারি শুরু করল কিশোর। জুন না জাগলে আর কিছুই জানা যাবে না।
আর জাগলে যেন ভিজিটিং আওয়ারে জাগে, মুসা বলল মুখ বাঁকিয়ে। নইলে যে নার্সের নার্স। এক্কেবারে দজ্জাল। একটা মুহূর্তও আর থাকতে দেবে না আমাদেরকে।
জুনের পর্দার কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিতে আরম্ভ করল রবিন। অবস্থা খুব একটা খারাপ লাগছে না। খবরের কাগজগুলো মন্তব্য করছে, বেঁচে যে আছে এটাই ভাগ্য। অ্যাক্সিডেন্টে গাড়িটার নাকি সাংঘাতিক ক্ষতি হয়েছে, ঘুরে দাঁড়াল সে। দুর্ঘটনার জায়গাটা দেখেছ?
মাথা নাড়ল কিশোর। একভাবে পায়চারি করে চলেছে। এই সময় একগোছা ফুল নিয়ে ঘরে ঢুকল লাল চুলওয়ালা নার্স।
প্রথমে ফারিহার দিকে তাকাল সে, তারপর এক এক করে তিন গোয়েন্দার দিকে। তিনটে ছেলে! ফারিহার দিকে আবার তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, এত বন্ধু জুটিয়েছ কেন? রোগ না সারিয়ে আরও তত বাড়াবে। এতজনে দেখতে আসার কোন দরকার আছে? জুনের বিছানার কাছে ফুলগুলো রেখে দরজার দিকে এগোল সে। বেরোনোর আগে ফিরে তাকিয়ে বলল, আবার আসব আমি, যেন হুমকি দিয়ে গেল।
কেন আসবে? নার্স বেরিয়ে যাওয়ার পর বিড় বিড় করে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল মুসা।
ইনটারেসটিং, রেখে যাওয়া ফুলগুলো দেখতে দেখতে বলল রবিন। হেনরি অগাসটাস পাঠিয়েছে।
তাতে ইনটারেসটিঙের কি হলো? মুসা জিজ্ঞেস করল।
কারণ, অগাসটাস রেস্টুরেন্টের মালিক সে। চিকেন লারসেনের প্রতিযোগী।
তুমি জানলে কি করে? তোমার আর কিশোরের কাছে তো কোন রেস্টুরেন্টেরই কোন মূল্য নেই। আগের রাতে কুপন ছিড়ে ফেলার পর থেকেই বিরক্ত হয়ে আছে মুসা। রাগটা ঝাড়ল এখন।
হেসে ফেলল রবিন। মনে হচ্ছে তোমার খাওয়ায় বাদ সেধেছে কিশোর? ফ্রী কুপন দিয়ে গিয়েছিল নাকি চিকেন লারসেন?
দিয়েছিল, কিশোর জানাল। আজেবাজে জিনিস খেয়ে পেট নষ্ট হয়। সে জন্যে ফেলে দিয়েছি। আর কেউ কিছু মুফতে খেতে দিলেই খেতে হবে নাকি?
শব্দ করে হাসল রবিন। মুসার রাগের কারণ এখন পরিষ্কার। ওর দিকে তাকিয়ে বলল, না, রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে হেনরির সঙ্গে পরিচয় হয়নি। অগাসটাস রেস্টুরেন্টের শুভ উদ্বোধনী দিনে একটা ব্যান্ড পার্টি পাঠাতে হয়েছিল আমাকে। আমিও গিয়েছিলাম সঙ্গে। টাইম যখন দিয়েছিল তার অনেক পরে এসেছিল হেনরি। ওকে ছাড়া কাজ শুরু করা যায়নি। ঝাড়া চারটে ঘণ্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল আমাদের।
শক্রর মেয়েকে ফুল পাঠাল কেন কিছু আন্দাজ করতে পারো?
ওরকম করেই থাকে হেনরি। ব্যবসার কোন ট্রিকস হবে। তবে লোকটাকে বোধহয় তোমারও পছন্দ হবে না। শুনেছি, হেনরি আর চিকেন একজন আরেকজনের ছায়া দেখতে পারে না। লারসেন মরে গেলে তার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হত না। মুখেও বলে সেকথা। লারসেন অতটা খারাপ লোক নন। মুখে কিছু বলেন না বটে, তবে অন্তরের ইচ্ছা একই হবে।
যাক, বাঁ হাতের তালুতে ডান হাতে ঘুসি মারল মুসা। সন্দেহ করার মত কয়েকজন পাওয়া গেল।
তা গেল, বলল কিশোর। কিন্তু কোন অপরাধ তো ঘটেনি। সন্দেহ করে কি হবে?
এই সময় দরজা খুললেন চিকেন লারসেন। ঘরে এত লোক দেখে যেন বরফের মত জমে গেলেন। তবে এক সেকেন্ডের জন্যে।
তার মুখের দিকে তাকাল কিশোর। গোলগাল চেহারা? চোখের কোণে কালি কেন? মেয়ের জন্যে দুশ্চিন্তায়? নাকি উন্মাদের দৃষ্টি? পাগলের চোখেও ও দৃষ্টি দেখেছে সে। খাবারে বিষ মিশিয়ে লাখ লাখ মানুষকে মেরে ফেলার কথা তার মেয়ে বলে ফেলেছে বলেও দুশ্চিন্তা হতে পারে। কোনটা?
দরজায় দাঁড়িয়েই তিনি বললেন, আমি আমার মেয়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই। সুযোগ পাব?
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেরোতে হলো তিন গোয়েন্দাকে। চলে এল হলঘরে। চারপাশে একবার চোখ বোলাল কিশোর। তারপর হলের মাঝে নার্সরা যেখানে বসে সেদিকে এগোল। ডেস্কের পেছনে মাত্র একজন নার্স রয়েছে। সেই লাল চুলওয়ালা মহিলা। তার নেমট্যাগে লেখা রয়েছেঃ মারগারেট ইলারসন, আর এন।
শুনুন, মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করল কিশোর। কাল রাতে এখানে কে ডিউটিতে ছিল বলতে পারবেন?
অবাক কান্ড! ভুরু কুঁচকে ফেলল মারগারেট, তুমি জিজ্ঞেস করার কে? শুনতে চাও? আমি ছিলাম। আমি। আরেকজন যার ডিউটিতে থাকার কথা, সে হঠাৎ করে বিয়ে করে বসেছে। কাজেই দিনরাত এখন আমাকে ডিউটি দিতে হচ্ছে। একটানা চব্বিশ ঘণ্টা।
হাসল কিশোর। তাতে উত্তেজনা মিশে আছে। তাই নাকি। তাহলে তো জুন লারসেনকে যারা যারা দেখতে এসেছে সবার কথাই বলতে পারবেন। ওর বাবা বাদে আর যে তিনজন এসেছিল।
মাথা নাড়ল মারগারেট।!না। রোগীর পারিবারিক ব্যাপারে বাইরের লোকের নাক গলানো নিষেধ।