কিশোর, জুন বলল। এখন তো বুঝতে পারলে, আমার বাবা নির্দোষ। বলো?
হ্যাঁ, অস্বস্তি বোধ করছে কিশোর। লারসেনকে সন্দেহ করেছিল এবং সে কথা বলেছিল বলে। একটা কথা বলবেন? সেদিন স্টুডিওতে কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, ড্রিপিং চিকেন কামড়ে নিয়েও সেটা বার বার ফেলে দিচ্ছিলেন কেন? আমি ভেবেছি, বিষ মেশানো আছে সেটা বুঝতে পেরেই আপনি খাচ্ছেন না।
খাবারের বিজ্ঞাপনের শুটিঙে সবাই ওরকম করে, লারসেন বললেন। ধর তিরিশ বার তোলা হলো এক ছবি। তিরিশবারই যদি তুমি এক কামড় করে খাও, তাহলে তো গলা পর্যন্ত উঠে আসবে খাবার। একতিরিশ নম্বর কামড়টা বসাতেই ইচ্ছে করবে না আর।
বাবার দিকে ফিরল জুন। বাবা, ওদিকে তো লোক বসে আছে। একশোজন সাংবাদিক নিশ্চয় অস্থির হয়ে উঠেছে ড্রিপিং চিকেনের আশায়। কি করা যায়?
বুকের কাছে আঁকা পালকে হাত বোলালেন লারসেন। উপায় খুঁজছেন মনে মনে। হাসলেন। ব্যবস্থা একটা করেই ফেলব।
ছুটে গেলেন তিনি বলরুমে। দাঁড়ালেন গিয়ে স্পটলাইটের নিচে মাইক্রোফোনের সামনে। গুড ইভনিং, লেডিজ অ্যাও জেন্টেলম্যান, বলতে লাগলেন তিনি। আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন, আজ রাতে কেন আপনাদেরকে দাওয়াত করে এনেছি আমি। আপনারা জানেন, আপনাদের মধ্যে অনেকেই ভাবেন আমি দ্রুত টাকা কামানোের তালে থাকি, আর খবরের হেডলাইন হতে চাই। হাহ হাহ হা!
তার হাসিতে যোগ দিল পুরো কক্ষ। চিকেন লারসেনের স্বভাব আর কথাবার্তার ধরন জানা আছে তাদের। কেউ কিছু মনে করল না।
ভদ্রমহোদয়গণ, আমি আজকে আপনাদের দাওয়াত করেছি আমার বিখ্যাত ফ্রাইড চিকেন খাওয়ানোর জন্যে। আর আমি যে ধোকা দিইনি, সেটা প্রমাণ করার জন্যেই কিছুক্ষণের মধ্যে আসছে… পরের শব্দটা বলতে সময় নিলেন তিনি, ভাবতে হয়েছে বোধহয়, পিজা! ঠিক। পিজা! আর শুনে নিশ্চয় আমার মতই আপনারাও অবাক হয়েছেন। কি খাওয়াতে এনে কি খাওয়াচ্ছি ভেবে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন লারসেন। তবে কদ্রমহোদয়গণ, নতুন কিছুর ঘোষণা দিতে পারব বলে গর্ব হচ্ছে আমার। আজ রাতে আমি ঘোষণা করছি চিকেন লারসেন সিটি স্নিকার অ্যাওয়ার্ড। প্রতি বছরই কোন না কোন পুরস্কার ঘোষণা করি, জানা আছে আপনাদের। এবারও করছি। আমাদের আজকের বিজেতারা হলো কিশোর পাশা, মুসা আমান, আর রবিন মিলফোর্ড। রকি বীচের অনেকেই চেনেন তাদের, অন্তত নাম শুনে থাকবেন। ওরা তিন গোয়েন্দা বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। ওদের সম্মানেই আজকের আমার এই পার্টির আয়োজন। কেন পুরস্কারটা দিলাম ওদের, তা নাহয় গোপনই থাক। আড়ালে আড়ালে অনেক বড় কাজ করে ফেলেছে ওরা, লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষকে অকাল মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ওদের প্রতি আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ, সেই মানুষদেরও কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, যদিও ওরা জানেই না কেন থাকতে হবে। ঘুরে তাকালেন তিনি। দরজার কাছে দাঁড়ানো বিস্মিত তিন গোয়েন্দাকে হাত নেড়ে ডাকলেন।
এক এক করে মঞ্চে উঠে এল কিশোর, মুসা, রবিন। স্পটলাইটের নিচে এসে দাঁড়াল। আলোর নিচে থাকার জন্যে গাদাগাদি করে দাঁড়াতে হলো ওদের, কারণ বেশির ভাগটাই জুড়ে রয়েছেন চিকেন লারসেন।
বার বার হাত মেলালেন ওদের সঙ্গে। অনেকগুলো ফ্রী কুপন বিতরণ করলেন, যাতে বিনে পয়সায় গিয়ে লারসেন রেস্টুরেন্টে খেতে পারে। টেলিভিশন ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসলেন, হাত নাড়লেন।
শোন, কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে তিন গোয়েন্দাকে বললেন তিনি, বিরাট বিজ্ঞাপন হলো। কয়েক মাস ধরে চলবে এটা টিভিতে।
আপনি খুশি থাকলেই আমরা খুশি, জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর।
হ্যাঁ, আমরা ধন্য, বিড়বিড় করল রবিন। ঠিক, বলল মুসা।
অমন পেঁচার মত মুখ করে রেখেছ কেন? লারসেন বুললেন। প্রতিদিন আমার সঙ্গে তোমাদেরকেও দেখানো হবে টিভিতে। লোকে চিনে ফেলবে। ভাল হলো না?
না, গম্ভীর হয়ে বলল কিশোর হলো না। চেনা হয়ে গেলে গোয়েন্দাগিরিতে খুব অসুবিধে হয়। সুবিধেও হয় অবশ্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, তবে সেটা কম। এনিওয়ে, মেনি মেনি থ্যাংকস! যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
***