হাঁ করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে লারসেন। রান্নাঘরের সমস্ত খুটুরখাটুর বন্ধ হয়ে গেছে, একেবারে চুপ। তারপর হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন তিনি, হাহ হাহ হাহ হা! বলেছিলাম না! ওকে আমি পালকপুত্র করে নেবই! আমাকে কেমন বাঁচিয়ে দিল, দেখলে তো ডন…
ডন পালাচ্ছে! চিৎকার করে উঠল রবিন।
সবাই ফিরে তাকাল। লাফাতে লাফাতে দরজার দিকে ছুটেছে ডন বারোজ।
প্রথমেই যে জিনিসটা চোখে পড়ল সেটা তুলে নিল কিশোর আর মুসা মিলে। লম্বা বড় একটা ট্রে। ড্রিপিং চিকেনে বোঝাই। এক দুলুনি দিয়েই ছুঁড়ে মারল ডনকে সই করে। থ্যাপাত করে তার পিঠে গিয়ে লাগল ট্রেটা। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল ড্রিপিং চিকেন।
ট্রেটা ছুড়েই ডাইভ দিল মুসা। কাঁধ খামচে ধরল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়া লোকটার। এক হ্যাঁচকা টানে চিত করে ফেলল মেঝেতে। যেখানে ড্রিপিং চিকেন আর ওগুলোর রস গড়াচ্ছে। মাখামাখি হয়ে গেল ডনের শরীরে।
ভয়াবহ অবাধ্যতা! চেঁচিয়ে উঠল ডন, মুসার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করছে। এর জন্যে কোর্ট মার্শাল হওয়া উচিত তোমার!
কোর্টে তো আপনি যাবেন, বারোজ সাহেব, হেসে বলল কিশোর। ড্রিপিং চিকেনে বিষ মেশানোর অপরাধে।
যা খুশি করতে পারো আমাকে নিয়ে। টরচার করতে পারো। নাম, র্যাংক, সিরিয়াল নাম্বার সব ছিনিয়ে নিতে পারো। কিন্তু মুখ খোলাতে পারবে না, বেশ গর্বের সঙ্গেই বলল ডন। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
আপনার মুখ খোলানোর দরকারও নেই। যা বলার আরোলাই বলে দিয়েছে আমাদেরকে। পুলিশ চেপে ধরলে আবারও বলবে। চিকেন লারসেনের খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়ার জন্যে যে আপনি ওকে টাকা খাইয়েছেন, সে কথাও বলবে।
মিথুক! বিশ্বাসঘাতক! গলা ফাটিয়ে চিষ্কার করে উঠল ডন। আমি নাকি! সে-ই তো আমাকে টাকা দিল!
হাসি বাড়ল কিশোরের। তাই নাকি? তাহলে আমি ভুল বলেছি। মানে, ভুল আন্দাজ করেছি।
বলে কি? চোখ বড় বড় হয়ে গেছে লারসেনের। বিশ্বাস করতে পারছেন না। অ্যাই, ভাল চাইলে স্বীকার করো সব কথা! ডনকে আদেশ দিলেন তিনি।
জেনারেল, ডন বলল। আপনার ড্রিপিং চিকেনে এমন এক উপাদান মেশানো আছে, কয়েক বছর আগে যা বিষাক্ত বলে ঘোষণা করে দিয়েছে এফ ডি এ। কেমন লাগছে শুনতে?
তুমি আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছ! গর্জে উঠলেন লারসেন।
করবই তো। আপনি তো আর আমাকে দশ লাখ ডলার দেননি, ডনও জবাব দিল সমান তেজে। কিন্তু ফেলিক্স আরোলা দিয়েছে।
আর সেই টাকা খেয়ে আপনি খাবারে বিষ মিশিয়েছেন, কিশোর যোগ করল।
দশ লাখ অনেক টাকা। বিশ্বাসী সৈনিককেও বেঈমান বানিয়ে দেয়। আসলে, এসব করতে না এসে অনেক আগেই মারসেনারিতে যোগ দেয়া উচিত ছিল আমার।
আর সহ্য করতে পারলেন না লারসেন। ছুটে গেলেন ডনের কাছে। টান দিয়ে দিয়ে ছিড়ে ফেলতে লাগলেন পকেটে লাগানো মেডেলগুলো, যেগুলো তিনি দিয়েছিলেন কাজের পুরস্কার হিসেবে। তোমার ঘাড়টা মুরগীর ঘাড়ের মত মুচড়ে ভাঙতে পারলে এখন আমি খুশি হতাম! চিৎকার করে উঠলেন তিনি।
এগিয়ে এল কিশোর। আর একটা প্রশ্ন। সে রাতে জুনকে আপনিই তাড়া করেছিলেন, তাই না?
করেছিলাম, স্বীকার করল ডন।
কেন করেছিলেন? বাবার হাত আঁকড়ে ধরে রেখেছে জুন। নইলে যেন পড়ে যাবে।
রিপোর্টটা ছিল আমার ডেস্কের ওপর। ড্রিপিং চিকেনে মেশানোর উপাদানের লিস্ট সহ। অফিস ছুটি হওয়ার পরই সেদিন থেকে গিয়েছিলে তুমি। আমার ঘরে ঢুকে টেবিলে দেখে ফেলেছিলে কাগজগুলো। চেঁচামেচি শুরু করেছিলে। কাগজগুলোতে টপ সিক্রেট লেখা ছিল। অন্যায় ভাবে অনুমতি না নিয়ে পড়ার অপরাধে গুলি করে মারা উচিত ছিল তোমাকে। এ তো রীতিমত গুপ্তচরগিরি।
রিপোর্টটা নিয়ে পালাতে চেয়েছিল জুন, কিশোর বলল। আর আপনি ওকে তাড়া করলেন?
করলাম। তবে ওর ক্ষতি করার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না, জুনের দিকে তাকাল ডন। বৃষ্টির মধ্যে তোমার গাড়িটা ঢাল বেয়ে পিছলে পড়ে গেল। ওটা নিছকই দুর্ঘটনা। আমার ব্যাংকের কসম খেয়ে বলছি।
ওকে সাহায্য করলে না কেন তুমি? জিজ্ঞেস করলেন লারসেন।
থেমেছিলাম…সাহায্য করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সবার আগে আমার আইডেনটিটি। ওটা তো বাঁচাতে হবে। কাজেই নিজে কিছু না করে পুলিশকে ফোন করলাম। দুর্ঘটনার পুরো বিবরণ জানালাম। নামটা অবশ্যই গোপন রেখে।
বাবা, হাঁপাচ্ছে জুন। এখন আমার মনে পড়ছে। অ্যাক্সিডেন্ট…ভয়ঙ্কর…! কাঁদতে শুরু করল সে। সান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতে একহাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন লারসেন।
একটা সময় তো আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, কিশোর বলল। এ সবের পেছনে হেনরি অগাসটাসের হাত রয়েছে। তাকে অনুসরণ করে আপনার মুরগীর খামারে চলে গিয়েছিলাম আমরা। ওখানে তাকে বলতে শুনলাম, খামারটা সে কিনে নেবে, মুরগীর খাবার বদলে দেবে।
ওই দুষ্ট মুরগীর ছানাটা কিছু বোঝে না। কোনটা চিকেন ফিড আর কোনটা চিকেন স্যালাড বিন্দুমাত্র ধারণা নেই তার। নিজের খামারের মুরগীদের খাবার কিছুদিন পর পরই বদলাতে থাকে। কতটা ক্ষতি যে করে, বুঝতেই পারে না, লারসেন বললেন। বাজারে গুজব ছড়ায়, আমার ফার্ম সে কিনে নেবে। এসব বলে বলে বোঝাতে চায়, আমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। ও ভাল করেই জানে, খাবার বানিয়ে আমার সঙ্গে পারবে না। আর আমার ব্যবসা কিনে নেয়ার মত অত টাকাও তার নেই। শুধু শুধু শয়তানী করা আরকি।