খেয়ো না, কিশোর, মুসা বলল।
শুনল না কিশোর। মুখে পুরে দিয়ে চুষতে লাগল। বলল, ক্যারামেল।
অত তাড়াহুড়া কোরো না, আরোলা বলল। আরেকটু খাও। ভাল করে বোঝ। তারপর বলো, হাসছে সে।
আরও কিছুক্ষণ চুষল কিশোর। বলল, আরি, তাই তো! বেশ চালাকি করা হয়েছে! ক্যারামেল আপেল। এখন মনে হচ্ছে আপেলের রসই খাচ্ছি।
তোমার কথা মনে রাখব আমি, আরোলা বলল। তোমার সম্মানেই এই ক্যানডির নাম দেব মিস্টার এক্স। ওরকম গালভরা একটা নামই খুঁজছিলাম। দিয়ে সাহায্য করলে আমাকে। থ্যাংক ইউ।
আপনি একজন ব্রিলিয়ান্ট সাইনটিস্ট, বুদ্ধিমান মার্কেটিং ম্যান, কিশোর বলল। কিন্তু ভয়ঙ্কর খুনী।
যা দিনকাল পড়েছে। কাকে যে কখন কি হয়ে যেতে হবে, ঠিকঠিকানা নেই। যাই হোক, আসল কথা হলো, তোমাদেরকে এখন শেষ করে দিতে হবে। কষ্ট লাগছে আমার।
পিস্তলের সেফটি ক্যাচ তো লক করা, কিশোর বলল। অন করে নিন আগে।
তাই নাকি? ওটার দিকে তাকাল আরোলা।
একটা মুহূর্ত দেরি করল না মুসা। সুযোগটা কাজে লাগাল। চোখের পলকে পাশ থেকে এক লাথি ঝেড়ে দিল, কারাতের ভাষায় একে বলে ইওকো-টোবিগেরি। আরোলার হাতে লাগল। উড়ে গিয়ে মেঝেতে আছড়ে পড়ল ওর হাতের পিস্তল।
কিশোর আর রবিনও আক্রমণ করে বসল। কিন্তু লোকটার গায়ে বেজায় শক্তি। কিছু কারাতে-টারাতেও জানে মনে হলো। রবিনের হাঁটুতে লাথি মেরে তাকে বসিয়ে দিল। ঝট করে ঘুরে মুসাকে ঠেকানোর চেষ্টা করল। পারল না। আঘাতটা আটকে ফেলে গন্ধ-বিজ্ঞানীর বুকে প্রচন্ড এক ঘুসি মারল মুসা। নাক কুঁচকে গেল আরোলার। পিছিয়ে গেল।
সময় দিল না মুসা। শূন্যে লাফিয়ে উঠল। মোচড় দিয়ে ওপরে তুলে ফেলেছে ডান পা, একেবারে সোজা। আইইআহ করে কারাতের বিকট চিৎকার করে প্রচন্ড লাথি লাগাল আরোলার বুকে, একই জায়গায়, যেখানে ঘুসি মেরেছিল।
পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়াল আবার আরোলা। পাগলের মত চারপাশে তাকাচ্ছে। কিশোরের এক সেকেন্ড আগে পিস্তলটা চোখে পড়ল তার। দৌড় দিল তুলে নেয়ার জন্যে।
১৬
ডাইভ দিয়ে পড়ল আরোলা। একই সঙ্গে কিশোরও ঝাপ দিল। দুজনেই হাত বাড়াল পিস্তলটা তোলার জন্যে। আগে ধরল আরোলা। তুলে নিয়ে হাসতে আরম্ভ করল হা হা করে। তিন গোয়েন্দার মুখোমুখি হওয়ার জন্যে ঘুরল।
এতক্ষণে লক্ষ্য করল আরোলা, পিস্তলের দিকেই নজর ছিল তার বেশি, যাদের সঙ্গে লড়াই করছে তারা কি করছে খেয়াল করেনি। করার সময়ও ছিল না অবশ্য। ব্রোমিনেটেড সিউডোেফসফেটের একটা ভারি পিপা উড়ে এল তার দিকে।
মুসা আর রবিন দুজনে মিলে তুলে ছুঁড়ে মেরেছে। দড়াম করে আরোলার গায়ে লাগল ওটা, পড়ে গেল সে। মেঝেতে পড়ে ফেটে ভেঙে গেল পিপাটা। ভেতরের শত শত পাউন্ড মালটিসরবিটেন ছড়িয়ে গেল মেঝেতে, কিছু পড়ল আরোলার ওপরও।
নিন শিস দিয়ে উঠল রবিন। নিজের ওষুধ নিজেই খানিকটা খেয়ে চাঙা হোন।
ওর কথা শুনতে পায়নি আরোলা। বেঁহুশ হয়ে গেছে মাথায় বাড়ি খেয়ে। ইলেকট্রিকের এক্সটেনশন কর্ড ছিড়ে তার হাত-পা বেঁধে ফেলল মুসা আর কিশোর মিলে।
হুঁশ ফিরল আরোলার। গোঁ গোঁ করে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
তেমন কিছু না, কিশোর বলল। আমাদেরকে মানসিক অশান্তিতে রেখেছিলেন খানিকক্ষণ। তারপর সামান্য মারপিট হলো। চিত হয়ে গেলেন আপনি। এখন বাঁধা আছেন।
পুলিশকে ডাকার সময় নেই এখন, রবিন বলল। পরে ওদের সঙ্গে দেখা হবে আপনার।
পুলিশ? প্রতিধ্বনি তুলল যেন আরোলা।
হ্যাঁ, কিশোর বলল। আপনার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ করব আমরা। আমাদের পেছনে ভাড়াটে গুন্ডা লাগানো, খাবারে অবৈধভাবে বিষাক্ত উপাদান মেশানো এবং অবশ্যই আমাদেরকে খুন করতে চাওয়ার কথা রিপোর্ট করব। এর যে কোন একটা অভিযোগই আপনাকে জেলে ঢোকানোর জন্যে যথেষ্ট। যাক, সেটা পরে করব, যেন বক্তৃতা দিচ্ছে, এই ভঙ্গিতে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। এখন তাড়াতাড়ি আমাদেরকে বেভারলি হিলটন হোটেলে যেতে হবে। বন্ধ করতে হবে সম্মেলনটা। এই, এসো তোমরা।
আধ ঘণ্টা লাগল। মুসা চালিয়েছে বলেই, রবিন চালালে আরও বেশি লাগত। সে মুসার মত বেপরোয়া চালাতে পারে না। হোটেলের সামনে গাড়ি রেখে দৌড়ে ঢুকল ওরা। কোথায় কি হচ্ছে নির্দেশ রয়েছে নিচের লবিতে। পড়ে জানা গেল এমপায়ার বলরুমে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন চলছে।
প্রথমেই টেলিফোন করে পুলিশ প্রধানকে খবর দিল কিশোর, জানাল ফেলিক্স আরোলার অবস্থা। তারপর ছুট দিল।
বলরুমে ঢুকল না গোয়েন্দারা। দরজার পাশ দিয়ে দৌড়ে গেল রান্নাঘরে। সেখানে দেখতে পেল চিকেন লারসেনকে। পরনে হলুদ জগিং স্যুট। বুকের কাছে লাল আর কমলা পালক আঁকা। অবশ্যই মুরগীর। পাশে দাঁড়িয়ে আছে জুন আর ডন বারোজ। রান্নাঘরের প্রতিটি কাউন্টারে ট্রেতে স্তূপ করে রাখা ধূমায়িত ড্রিপিং চিকেন।
অ্যাই যে, এসে গেছ, ভালুকের মত বিশাল থাবা তুলে এগিয়ে এলেন লারসেন। বাহু দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলেন কিশোরের গলা। সত্যি কথাটা বলবে এর জন্যে জীবনে যদি আর তোমার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে না হয়, কথা বলতে ইচ্ছে না করে আমার, যদি ধ্বংস হয়ে যাই, যাব। তবু, সত্যি কথাটা জানতে হবে।
আপাতত এই সম্মেলনের কথা ভুলে যান, কিশোর বলল। মারাত্মক বিষ মেশানো রয়েছে ড্রিপিং চিকেনে। ভয়াবহ ক্যারসিনোজেন ভরে দেয়া হয়েছে। পার্টি ক্যানসেল করুন। বাজারে ছেড়ে থাকলে এখুনি সেগুলো ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। নইলে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাবে।