চমকার।
এবার আমার পালা, কিশোর বলল। ওই যে ব্রোমিনেটেড সিউডোেফসফেটস লেখা রয়েছে, ওই টিমগুলোতে আসলে রয়েছে মালটিসরবিটেন, তাই না?
হ্যাঁ। তাতে কি?
কিসে ব্যবহার করতে এনেছেন। আমার বিশ্বাস, আপনি নিশ্চয় জানেন ওই জিনিস খাবারে মেশানোর অনুমতি দেয়নি এফ ডি এ।
আরেকটা প্রশ্নের জবাব চাও তো? তাহলে আরেকটা ক্যানডি খেতে হবে। যে কোন একটা তুলে নাও, শয়তানী হাসি হেসে হাত বাড়িয়ে দিল আরোলা।
খেয়ো না, কিশোর, আরেকবার বাধা দিল মুসা। কায়দা করে খাইয়ে নিচ্ছে।
কিশোরের ধারণা হলো, ক্যানডিগুলোতে অন্য বিষ না থাকলেও মালটিসরবিটেন থাকতে পারে। দুএকটা ক্যানডি খেলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। আর হলেই বা কি? কিছু তো আর করতে পারছে না। বরং যতক্ষণ খেয়ে যাবে ততক্ষণ মারবে না আরোলা। আর ওর কাছ থেকে কথা আদায় করারও সুযোগ মিলবে। আরেকটা ক্যানডি নিয়ে মোড়ক খুলে মুখের ভেতর ছুঁড়ে ফেলল।
চেরি জেল-ও। সেই সঙ্গে রয়েছে ব্যানানা ফ্লোটার আর মাখন, চুষতে চুষতে জানাল কিশোর। আপনার জবাব পেয়েছেন। এবার আমার প্রশ্নের জবাব দিন। মালটিসরবিটেনগুলো দিয়ে কি করবেন?
জবাব দিতে সময় নিল আরোলা। দ্বিধা করছে মনে হলো। অবশেষে বলল, বেশ, বলছি। তোমরা তো আর বেঁচে থাকবে না, বেরিয়ে গিয়ে সব বলতেও পারবে না। গোড়া থেকেই বলি, নইলে পরিষ্কার হবে না। বছরখানেক আগে চিকেন লারসেন এসেছিল আমার কাছে। নতুন একটা খাবার তৈরি করতে আমার সাহায্য চাইল। এমন কিছু, যেটার মত সুস্বাদু জিনিস আর কেউ কখনও খায়নি। শুধু খায়নি তা নয়, ভাবতেই পারেনি কেউ, বিশেষ করে হেনরি অগাসটাসের মত লোকে। বলল, লাভের টাকা আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজি আছে। তবে, যে কোন খাবার হলে চলবে না। মুরগীর মাংস দিয়ে তৈরি হতে হবে।
সুস্বাদু করে দিতে বলেছেন, ফোড়ন কাটল রবিন। কিন্তু মিস্টার লারসেন নিশ্চয় বিষ মিশিয়ে দিতে বলেননি।
তুমি চুপ করো! ধমকে উঠল আরোলা। ভেঁপো ছোকরা!, আবার জোরে জোরে দম নিয়ে নিজেকে শান্ত করল সে। মুরগী দিয়ে খাবার তৈরি করা সহজ। সেটা অনেকেই পারে। কিন্তু লোকে বার বার খেতে চাইবে, অর্থাৎ, নেশা হয়ে যাবে, এ রকম কি উপাদান মেশানো যায়? ভাবতে লাগলাম। ফ্লেভার মিশিয়ে যতভাবে সম্ভব সুস্বাদু করার চেষ্টা করলাম। হলো-ও। কিন্তু লারসেন যা চেয়েছে। তা হলো না।
তারপর দিলেন মালটিসরবিটেন মিশিয়ে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
তৃতীয় আরেকটা ক্যানডি খেতে বলল আরোলা। ঘড়ি দেখে বলল, সময় শেষ হয়ে আসছে।… কি মেশালে যে তেমন সুস্বাদু হবে ভেবেই পেলাম না। আমার সাধ্যমত… ও-কি, খাচ্ছ না?
খাব। পরে। বলুন আগে।
কিশোর, সাবধান করল রবিন। খেয়ো না। ড্রিপিং চিকেনে যেমন ক্যারসিনোজেন মিশিয়েছে, ওই ক্যানডিতেও মিশিয়ে থাকতে পারে।
মেশালেই বা কি? ও তো এখনই মরবে এমনিতেই, আরোলা বলল। দশ বিশ বছরের মধ্যে টের পাবে না লোকে, ক্ষতি হবে না। অনেক লম্বা সময়। অনেকে অতদিন বাঁচবে না এমনিতেই। যাই হোক, খাবার যে বিষাক্ত, এটা কোনদিনই টের পাবে না লোকে। ভেবে দেখলাম, ক্যান্সার হয়ে মারা গেলে ধরা পড়ারও কোন আশঙ্কা নেই। ওই রোগ তো আজকাল হরদম হচ্ছে। আমার বানানো খাবার খেয়ে যে হয়েছে, সেটা বোঝার সাধ্য ডাক্তারেরও হবে না। তাই ঠিক করলাম, দেব মিশিয়ে। লারসেনও কিছু জানতে পারবে না। কারণ, তৈরি করা অবস্থায় খাবার আমার কাছ থেকে নিতে হবে তাকে, আগেই বলে দিয়েছি। প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেব তার রেস্টুরেন্টে।
ঘড়ির দিকে তাকাল কিশোর। আটটা বাজতে দেরি নেই। সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। সেই সঙ্গে ফুরিয়ে আসছে ওদের আয়ু।
আরেকটা প্রশ্ন, বলল সে। আজ রাতে এখানে ফিরে এলেন কেন হঠাৎ করে?
দারোয়ানদেরকে ভাল বেতন দিই আমি। তোমরা ওর সঙ্গে কথা বলে অফিসে ঢোকার পর পরই ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলেছে সে। আমার গাড়িতে ফোন আছে, কিশোরের হাতের ক্যানডিটার দিকে তাকাল সে। খেয়ে ফেল। দেরি করলে আর কোনদিনই খেতে পারবে না। স্বাদটা বলে যাও মরার আগে।
মোড়ক খুলল কিশোর। এটা অন্য দুটোর চেয়ে আলাদা। ভারিও বেশি। মিস্টার এক্স আপনার দলের লোক, তাই না? ওই যে, সারাক্ষণ আর্মি ক্যামমাফ্লেজ জ্যাকেট পরে থাকে?
মিস্টার এক্স? হেসে উঠল আরোলা। নামটা তো ভালই দিয়েছ। অবশ্য তোমার সব কিছুই অন্য রকম। ওর নাম জেনার। আমার পাশের বাড়িতেই থাকে। সেনাবাহিনীতে ছিল, বদ স্বভাবের জন্যে বের করে দিয়েছে। মেজাজও খুব খারাপ। অযথাই লোকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। ওকে দলে নেয়া বিপজ্জনক। তবে তার সাহায্য নিই মাঝে মাঝে। টাকার বিনিময়ে। যে মুহূর্তে শুনলাম জুনের কাছে তোমরা ডিটেকটিভ, লারসেনের পার্টিতে, মনে হলো, ওই লোককে দিয়ে তোমাদের ভয় দেখাতে পারি, যাতে আমার ব্যাপারে আর নাক না গলাও। ওকে বললাম। সে প্রথমে টেপ করল তোমাদের টেলিফোন।
হুঁ, মাথা দোলাল কিশোর। এ ভাবেই জেনেছে, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আমরা খাবার কিনতে যাচ্ছি। পিটালুসে যাচ্ছি।
হ্যাঁ। কাজের লোক। খুব চালাক। তবে তোমরা ওর চেয়ে বেশি। তোমাদের সঙ্গে চালাকি করে সুবিধে করতে পারেনি, কিশোরের দিকে পিস্তল নাড়ল। আরোলা। ক্যানডিটা খাও!