কোড না দিলে বোঝা যাবে না। ঝুঁকি নিতেই হবে। চামড়ার ব্যাগটা খুলতে লাগল কিশোর। বলল, একটা ইলেকট্রনিক লক কম্বিনেশন ডিকোডার নিয়ে এসেছি। কীবোর্ডে লাগিয়ে দিলেই কম্বিনেশন পড়ে ফেলতে পারবে। কেমন যেন অবিশ্বাস্য মনে হয়, তাই না? সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখে দেখে বানিয়ে ওঅর্কশপে পরীক্ষা করে দেখেছি। কাজ করেছে। এখানে কি করবে কে জানে!
স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে দ্রুত কীপ্যাডের কভার প্লেট খুলে ফেলল সে। ডিকোডারের দুটো অ্যালিগেটর ক্লিপ লাগিয়ে দিল দুটো বিশেষ তারের সঙ্গে। উত্তেজনায় দুরুদুরু করছে ওর বুক। কাজ করবে তো? সুইচ টিপল। বেশ কিছু টিপটিপ শব্দ আর আলোর ঝলকানির পর যন্ত্রটা কতগুলো নম্বর দিল ওকে।
হয়েছে? দরজার দিকে পা বাড়াল মুসা। চলো, দেখি…
ওর কাঁধ খামচে ধরল কিশোর। দাঁড়াও। কিছু একটা গোলমাল হয়ে গেছে! কালো যন্ত্রটায় হাত বোলাল সে। ঠিকমত কাজ করছে না। যে নম্বরটা দিয়েছে ওটা এখানকার কমবিনেশন নয়। ওঅর্কশপে যে রিডিং দিয়েছিল, সেটা।
ইলেক্ট্রনিক এই যন্ত্রপাতি এ জন্যেই দেখতে পারি না আমি, বিরক্ত হয়ে বলল রবিন। কখন যে বিগড়ে যাবে ঠিকঠিকানা নেই!
সব যন্ত্রই বিগড়ায়, এগুলোর আর দোষ কি? ইলেকট্রনিকস যতটা সুবিধে করে দিয়েছে তার তুলনায় ছোটখাট এসব গোলমাল কিছুই না। হয়তো কোন ক্যাপাসিটর খারাপ পড়েছে, গেছে বাতিল হয়ে, বদলে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো আর সময় নেই…
না, নেই। ওই যে, গার্ডও চলে আসছে।
তাড়াতাড়ি যন্ত্রটা ব্যাগে ভরে শার্টের ভেতরে লুকিয়ে ফেলল কিশোর। গোবেচারা মুখ করে রইল। তার ডেস্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দারোয়ান, এই সময় গিয়ে বেল বাজাল রবিন।
দরজা সামান্য ফাঁক করে তিনজনেরই পা থেকে মাথা পর্যন্ত নজর বোলাল দারোয়ান। তারপর জিজ্ঞেস করল, কি চাই?
কিশোর বলল, আমরা ব্ল্যাক মেসেঞ্জার সার্ভিস থেকে এসেছি। নিজেদের কালো পোশাকের ব্যাখ্যাও দিয়ে ফেলল এক কথাতেই। মিস্টার আরোলার অফিস থেকে কিছু একটা বের করে নিতে হবে আমাদেরকে। তিনি বলেছেন, খুবই নাকি জরুরী।
একটা জিনিস নিতে তিনজন দরকার? দারোয়ানের সন্দেহ গেল না।
আমি কি জানি? হাত ওন্টাল কিশোর। আসতে বললেন, এসেছি। আমাকে তার প্রয়োজন।
ওর গাড়ি নেই, কিশোরকে দেখাল রবিন। তাই আমাকেও আসতে হলো।
আর ওরা কেউ অফিসটা চেনে না, রবিন আর কিশোরের কথা বলল মুসা। আমি চিনি। না এসে আর কি করব?
তাই তো, না এসে কি করবে! অকাট্য যুক্তি! আমি তো জানতাম থ্রী স্টুজেসরা মরে ভূত হয়ে গেছে, বিড়বিড় করল দারোয়ান। তবে আর কথা না বাড়িয়ে দরজা খুলে দিল। যাও। কি নেবে নিয়ে জলদি বিদেয় হও, হলের দিকে দেখিয়ে অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল সে।
দারোয়ানের নির্দেশিত দিকে এগোল তিন গোয়েন্দা। সমস্ত পথটায় কার্পেট বিছানো রয়েছে। বাঁয়ের পথ ধরল ওরা। ওদিকেই অফিসটা, বলেছে দারোয়ান। ডান দিকে চলে গেছে আরেকটা পথ। পথের শেষ মাথায় ওয়াল নাট কাঠের তৈরি একটা দরজার সামনে এসে থামল ওরা। দরজায় লেখা রয়েছেঃ একজিকিউটিভ সুট।
বেশ বড় সাজানো গোছানো ঘর আরোলার। দুধারে বিশাল জানালা, একেবারে মেঝে থেকে ছাত পর্যন্ত। বাতাসে তাজা ফুলের সুবাস, যদিও একটাও ফুল চোখে পড়ছে না কোথাও। ঘরের মাঝখানে রোজউড কাঠের মস্ত টেবিল। তাতে রয়েছে বিল্ট-ইন টেলিফোন আর কম্পিউটার। এককোণে গোছানো রয়েছে নটিলাস কোম্পানির ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি। দেয়ালে ঝোলানো আর তাকে সাজানো রয়েছে অসংখ্য স্মারকচিহ্ন আর পুরস্কার। সুগন্ধ বিশারদ সে। অতীতে কাজের জন্য ওগুলো পেয়েছে। নানা রকম ক্যানডির মোড়ক, আর অন্যান্য খাবারের মোড়ক সুন্দর করে ফ্রেমে বাঁধিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে। বোঝা যায়, ওগুলো সব তার নিজের আবিষ্কার।
ওসব জিনিস কোনটাই চমকৃত করতে পারল না কিশোরকে, করল কেবল আরোলার ফাইলিং সিসটেম।
কি খুঁজতে এসেছি আমরা? টেবিল টেনিস খেলা যায় এতবড় ডেস্কের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
মালটিসরবিটেনের একটা জার হলেই চলবে, কিশোর বলল। ফাইলিং কেবিনেট খুলতে লাগল সে। ড্রিপিং চিকেনে মেশানো হয়েছে, ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে, এ রকম যে কোন জিনিস হলেও চলবে। যে যে উপাদান মেশানো, নিশ্চয় লিখে রেখেছে কাগজে, ফোল্ডারগুলোর পাতা ওল্টাতে শুরু করল সে।
এখানেও একটা কম্পিউটারের টার্মিনাল রয়েছে, বাথরুম থেকে জানাল রবিন। দামী একটা কোলোনের শিশি খুলে বলল। বাহ, চমক্কার গন্ধ!
কি চমৎকার? জানতে চাইল মুসা।
আচমকা চেঁচিয়ে উঠল কিশোর, ব্রোমিনেটেড সিউডোফসফেট!
কি বললে? বাথরুমের দরজায় উঁকি দিল রবিন। ইদানীং আরও জটিল হয়ে গেছে তোমার কথাবার্তা!
সহজ কথাটা বুঝতে না পারলে আমি কি করব? বলছি, ড্রিপিং চিকেনে ব্রোমিনেটেড সিউডোফসফেট মেশানো হয়েছে। কাগজপত্রে তা-ই লেখা রয়েছে। জুন আমাকে যেসব কাগজপত্র এনে দিয়েছে ওগুলোতে।
মুসাও আজকাল ওরকম করে কথা বলে, মুখ বাঁকাল রবিন। গাড়ির ইঞ্জিনের ব্যাপারে ও যে কি বলে, কিচ্ছু বুঝতে পারি না! এই তো, গত হপ্তায় মেরামত করে দেয়ার সময় কি জানি কি হয়েছিল, বলল!
ঠেলে ফাইল কেবিনেটটা লাগিয়ে দিল কিশোর। গত দুই বছরের পারচেজ অর্ডার, ইনভয়েস আর ইনভেনটরি লিস্ট ঘাটলাম। তাতে মিরাকল টেস্ট কোম্পানি কোন উপাদান কিনেছে বা তৈরি করেছে, এ রকম কথা লেখা নেই। গুদামে গিয়ে খুঁজতে হবে। এখনই!