আঙুল মটকাল কিশোর। আমিও তাই আশা করেছি। বের করে আনতে পারবে?
তালার কম্বিনেশন জানি না।
ও। তাকে না জানিয়ে কাগজগুলো বের করতে হবে। সন্দেহ করলেই সরিয়ে কিংবা নষ্ট করে ফেলতে পারেন।
এক মুহূর্ত ভাবল জুন। তারপর হাসল। বাবার সেক্রেটারির সাহায্য নিলে কেমন হয়? অনেক কিছুই হয়তো জানে ও। কম্বিনেশন জানলেও অবাক হব না। বসের অনেক গোপন খবরই রাখে তার সেক্রেটারি। এটা নতুন কিছু না।
চলো, তখুনি যেতে চাইল মুসা।
না, বাধা দিল জুন। আমি একা যাব। তোমাদেরকে দেখলে মুখ খুলবে না। বাবার বিরুদ্ধে একাজ করছি, ঠিক হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না…
হচ্ছে, দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করল যেন কিশোর। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাঁচানোর জন্যে কাজটা করছি আমরা। একে অন্যায় বলা যাবে না। কতক্ষণ লাগবে। তোমার?
এই ঘণ্টা দুয়েক।
দুই ঘণ্টা কেটে গেল। ওদেরকে যা যা করতে বলে গেছে জুন, তাই করল। ওর বাড়িতে বসে ওদের ফ্রিজের খাবার খেল, টিভি দেখল, কথা বলল। বিশ্রাম নিল, কিশোর বাদে। এই কাজটা সে কিছুতেই করতে পারল না। ঢিল দিতে পারল না শরীর।
আরেক ঘণ্টা পেরোল।
অবশেষে দরজা খুলে ঘরে ঢুকল জুন। হাতের কাগজ দেখিয়ে সবার দিকে চেয়ে হাসল।
পেয়েছি, ফিসফিস করে জানাল সে। চারপাশে তাকাল, যেন দেখে নিতে চাইছে ওর বাবা শুনে ফেলছেন কিনা। আলমারি খুলে সব কাগজ দেখেছি। কোথাও লেখা নেই মালটিসরবিটেনের কথা। দেখলে তো? আমার বাবা খুনী নয়।
জুনের কাগজটা নিয়ে পড়তে লাগল কিশোর।
মনে হচ্ছে, মুসা বলল। লোকটাকে আর ধরতেই পারলাম না। কেসের এখানেই ইতি।
কাগজটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিল কিশোর। মুখ তুলে তাকাল জুনের দিকে। কেউ যদি খাবারে বিষ না-ই মিশিয়ে থাকে, ঘোরের মধ্যে বললে কেন একথা? ব্রিফকেসটার জন্যেই এত অস্থির হয়ে গিয়েছিলে কেন? আর ডন বারোজের নাম ছাপা এই মালটিসরবিটেনের রিপোর্টই বা তোমার কাছে কেন?
জানি না, মাথা নাড়ল জুন।
আমরাও জানি না, কিশোরও মাথা নাড়ল। তবে কয়েকটা ব্যাপার জানি। আমাদের সন্দেহের তালিকা দ্রুত ছোট হয়ে আসছে। তোমার বাবাকে বাদ দেয়া যায়। হেনরি অগাসটাসও বাদ, কারণ তার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই তোমার। যোগাযোগও নেই। মালটিসরবিটেনের সঙ্গে তাকে জড়াতে পারছি না কোনভাবে। বাকি থাকল ডন বারোজ। সে সহজেই ওই খাবারে বিষ মেশাতে পারে। তবে সে নির্দোষও হতে পারে। অন্য কেউও করে থাকতে পারে কাজটা। যে লোকটাকে বেশি সন্দেহ করছি, যার ব্যাপারে বেশি আগ্রহ আমার এখন, যে রিপোর্টটা আমাদের হাতে পড়তে দিতে চায়নি, সে হলো রহস্যময় মিস্টার এক্স। যে আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল।
ওই লোকটা কে?, মুসা জিজ্ঞেস করল। বুঝতে পারছ?
আন্দাজ করতে পারছি। ফেলিক্স আরোলা।
তাহলে? ভুরু কোঁচকাল ফারিহা। পুলিশকে ফোন করব?
না। প্রমাণ দরকার। মিরাকল টেস্টে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে আমাদের। কি গোপন করার চেষ্টা করছে আরোলা, জানতে হবে।
কিশোর, হুঁশিয়ার করল মুসা। জায়গাটা একটা দুঃস্বপ্ন! সিকিউরিটি ভীষণ কড়া!
বেশ, তাহলে রাতের বেলা যাব। যখন গার্ডেরা সতর্ক থাকবে না। ঘুম থাকবে চোখে।
তাহলে আজ রাতেই করতে হবে কাজটা, জুন বলল। বাবার সেক্রেটারি আরেকটা কথা বলেছে আমাকে, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আজ সন্ধ্যায় বিরাট এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ড্রিপিং চিকেনের খবর দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দিতে চায় বাবা। বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে।
তাই নাকি! সর্বনাশ! বলে উঠল ফারিহা।
চিকেন লারসেনের কথা মনে পড়ল কিশোরের। তিনি বলেছেনঃ লোকে জানতেও পারবে না কিসে আঘাত করেছে ওদেরকে!
১৪
বিকেল পাঁচটা। রবিনের গাড়িতে বসে আছে গোয়েন্দারা। লং বীচে মিরাকল টেস্টের অফিস আর গুদাম থেকে কিছু দূরে। জুনদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যার যার বাড়ি গিয়েছিল। কালো শার্ট প্যান্ট পরে এসেছে। কিশোরের হাতে কালো চামড়ার একটা হাতব্যাগ। কোলের ওপর রেখেছে। জিনিসটা নতুন দেখছে রবিন আর মুসা।
আরোলা বেরোলেই আমরা ঢুকব, ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে বলল কিশোর।
ও আছে কি করে জানলে? রবিনের প্রশ্ন।
আছে, জবাবটা মুসাই দিয়ে দিল। ওর গাড়ি দেখছ না? ওই যে। চিনি।
তুমি চিনলে কি করে? রবিন অবাকই হলো।
সেদিন চিকেন লারসেনের বাড়িতে পার্টির পর ওকে অনুসরণ করেছিলাম। ওই গাড়িতে করে মিরাকল টেস্টে এসেছিল সে।
আস্তে আস্তে মিরাকল টেস্টের পার্কিং লট খালি হয়ে যেতে লাগল। ছটার সময় বেরোল আরোলার ধূসর রঙের ক্যাডিলাক অ্যালানটে গাড়িটা। চলে গেল লস অ্যাঞ্জেলেসের দিকে।
চিকেন লারসেনের সাংবাদিক সম্মেলনে গেল হয়তো, অনুমানে বলল মুসা।
গাড়ি থেকে নামল তিনজনে। প্রায় দৌড়ে চলে এল মিরাকল টেস্টের পার্কিং লটে। ঢোকার মুখে এসে দাঁড়িয়ে গেল রবিন। পাহারায় রইল। দরজাটা পরীক্ষা করতে গেল মুসা আর কিশোর।
সিকিউরিটি দেখেছ? গুঙিয়ে উঠল মুসা।
দেখছে। তিনজনেই তাকিয়ে রয়েছে ছোট একটা ইলেকট্রনিক প্যানেলের দিকে। আলোকিত একটা কীপ্যাড রয়েছে সেখানে। কাচের দরজার পাশে ক্রোমের দেয়ালের মাঝে। দরজার ওপাশে গার্ডের ঘর। কাউকে চোখে পড়ছে না।
টহল দিতে গেছে হয়তো, রবিন বলল। এইই সুযোগ। ঢুকে পড়া দরকার।
কীপ্যাডের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। নিশ্চয় ওর মধ্যে কোন বিশেষ কোড ঢোকাতে হয়। তাহলেই খুলবে। কিন্তু ভুল কোড যদি ঢোকে, কি আচরণ করবে? দারোয়ানকে সতর্ক করার জন্যে সিগন্যাল দিতে আরম্ভ করবে না তো?