ট্যালেন্ট এজেন্সিতে বড় বেশি সময় দিচ্ছে রবিন, গানের কোম্পানিটার কথা বলল কিশোর, যেটাতে পার্টটাইম চাকরি নিয়েছে নথি-গবেষক।
হ্যাঁ, মুচকি হাসল মুসা। আরেকটা চাকরিতেও বড় বেশি সময় নষ্ট করছে আজকাল। মেয়েদের পেছনে। রবিনটা যে এমন হয়ে যাবে, কল্পনাই করতে পারিনি।
কি আর করা যাবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল কিশোর। এটা আমেরিকা। যে দেশের যা সমাজ। ও তো আর আমার মত নয় যে মেয়েদের সঙ্গে ডেটিং অপছন্দ করবে…
তোমাকেই বা কে মানা করেছে?
করেনি। তবে আমার এসব ভাল লাগে না। একটা ব্যাপারেই কষ্ট হয়, রবিনকে আর আগের মত পাচ্ছি না আমরা।
কই, পাচ্ছি না কোথায়? তিন গোয়েন্দার কাজের সময় তো ঠিকই এসে হাজির হয়। আমি একটা কথা লিখে দিতে পারি, দেখ, ট্যালেন্ট এজেন্সিতে বেশিদিন টিকবে না ও। ব্যাপারটা সাময়িক। ও আবার ফিরে যাবে লাইব্রেরিতে, বইয়ের জগতে।
তাই যাওয়া উচিত। যেখানে যাকে মানায়।
আর কথা বাড়াল না। কিছু কাজ আছে ওদের। ছোট একটা যন্ত্র মেরামত করতে বসে গেল কিশোর। ওটা দিয়ে ইলেক্ট্রনিক লক কম্বিনেশন পড়া সম্ভব কিছু যন্ত্রপাতি এদিক ওদিক করে নিলে, কিশোরের অন্তত সে রকমই ধারণা। ওকে বিরক্ত করল না মুসা। একটা ফুয়েল ইনজেকটরের স্পেয়ার পরিষ্কারে লেগে গেল। ওর গাড়ির জন্যে কাজে লাগবে।
বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারল না। কথা বলতে বলতে কাজ করে চলল দুজনে। কিশোরের একটা গাড়ি দরকার, সে কথা আলোচনা করল কিছুক্ষণ। আরও খানিকক্ষণ আফসোস করল রবিনকে আগের মত করে পাচ্ছে না বলে। এক সময় চলে এল চিকেন হার্বার্ট লারসেনের কথায়। জুন লারসেনের দুর্ঘটনার ব্যাপারটা এখনও মাথায় ঘুরছে কিশোরের। পুরোপুরি জানতে পারেনি বলে খুঁতখুঁত করছে মনটা।
হঠাৎ বাজল টেলিফোন। চমকে দিল দুজনকেই। ঘড়ির দিকে তাকাল। প্রায় মধ্যরাত। এত রাতে কে করতে পারে, বিশেষ করে শুক্রবারের রাতে?
পুরানো একটা সুইভেল চেয়ারে বসেছে কিশোর। ওটাকে ঘুরিয়ে ফোনের দিকে হাত বাড়াল। হ্যালো, তিন গোয়েন্দা।
কিশোর, ফারিহা বলছি। তোমাদের স্পীকারের সুইচ দিয়ে দাও। দুজনকেই শোনাতে চাই।
ফারিহা, টেলিফোন লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সুইচ অন করতে করতে মুসাকে জানাল কিশোর। আরও একটা বিশেষ নতুন ব্যবস্থা করেছে সে, যাতে এপাশে যতজন থাকবে, সবাই ওপাশের লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবে।
মুসাও তারই মত অবাক হলো। জিজ্ঞেস করল, ফারিহা, কি হয়েছে? এত রাতে?
আবার সেই অনুভূতিটা হলো কিশোরের, রহস্যের গন্ধ পেলে যেমন হয়। তবে নিশ্চিত হতে পারছে না।
অদ্ভুত একটা কান্ড করছে জুন, জবাব দিল ফারিহা। ঘুমের মধ্যে গোঙাচ্ছে, আর বিড়বিড় করে কথা বলছে।
ওরকম অ্যাক্সিডেন্টের পর প্রলাপ বকাটাই স্বাভাবিক, কিশোর বলল।
তা ঠিক। তবে যা বলছে, তাতে ভয় লাগছে আমার। বলছে, হাজার হাজার, লাখ লাখ লোক মারা যাবে! বার বার বলছে একই কথা।
চুপ হয়ে গেল কিশোর আর মুসা। জবাব দিতে পারছে না।
ফারিহা বলছে, এই শেষ নয়। ও বলছে, মুরগীতে বিষ মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা ঠিক না! এটা অন্যায়! এমন ভঙ্গিতে বলছে, যেন নিজের চোখে বিষ মেশাতে দেখেছে। ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকছে বলে মনেই হয় না!
মৃদু শিস দিয়ে উঠল মুসা। সাংঘাতিক কথা!
ওর দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে কিশোর বলল, কি, বলেছিলাম না? আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে?
বলেছ। কিন্তু কে জানত, চিকেন কিং আমার প্রিয় খাবারে বিষ মেশাচ্ছেন?
২
অ্যাই, শুনছ? কিশোরের ওয়ার্কশপে স্পীকারে ভেসে এল ফারিহার গলা। আছ নাকি ওখানে?
আছে ঠিকই, তবে জিভ যেন জড়িয়ে গেছে। কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। কতবার খেয়েছে চিকেন কিঙের রেস্টুরেন্টে? শতবার? হাজার বার? কিশোরই খেয়েছে এতবার, খাবারের প্রতি যার ঝোক নেই তেমন। আর মুসা যে কতবার খেয়েছে তার তো হিসেবই করতে পারবে না। চোখে ভাসছে, টিভির পর্দায় দেখা হার্বার্ট লারসেনের চেহারা। চেহারাটাকে নিস্পাপ করে তুলে নিরীহ কণ্ঠে বলেন, আমার মুরগী সেরা মুরগী। খেয়ে খারাপ বলতে পারলে পয়সা ফেরত।
চিকেন লারসেন… খাবারে বিষ মেশায়…? বিড়বিড় করছে মুসা। বিশ্বাস করতে পারছে না। আনমনে মাথা ঝাঁকিয়ে চলেছে। আমার বিশ্বাস হয় না!
হওয়ার কথাও নয়, কিশোর বলল। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার চিন্তিত ভঙ্গিতে। চাচী প্রায়ই বলে, আপাতদৃষ্টিতে যেটা ঠিক মনে হরে সেটা ঠিক -ও হতে পারে। কেন একেবারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি আমরা?
মানে?
মানে, চিকেন লারসেনকে দোষ দিচ্ছি কেন আমরা? ঘোরের মধ্যে তাঁর কথাই বলছে জুন, কি করে জানছি? নাম তো আর বলেনি। অন্য কারও কথাও বলে থাকতে পারে, যে খাবারে বিষ মেশাচ্ছে। মস্ত একটা শক খেয়েছে সে। নানারকম ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ওষুধের কারণেও দুঃস্বপ্ন দেখে অনেক সময় রোগী। হতে পারে ব্যাপারটা পুরোই দুঃস্বপ্ন।
অ্যাই, শোনো, ফারিহা বলল। জুনের মুখের কাছেই নিয়ে যেতে পারতাম। তাহলে নিজের কানেই শুনতে পারতে। কিন্তু কর্ডটা অতদূর যায় না। যতটা সম্ভব কাছে নিয়ে যাচ্ছি।…শোননা। শুনতে পাচ্ছ?
মাথা নাড়ল মুসা। কিশোর বলল, না। কি বলে?
আবার সেই একই কথা, ফারিহা বলল। বলছে, না না, দিও না…লোক মারা যাবে! ওকাজ কোরো না!