ঠিক। ফ্রী স্যাম্পল। মার্কেটে ছাড়েনি এখনও। দুটো সম্ভাবনা ধরা যায়। এক, পার্টিতে উপস্থিত ছিল মিস্টার এক্স, আমাদের মতই ফ্রী স্যাম্পল পেয়েছিল। নয় তো, একসঙ্গে কাজ করছে আরোলা আর মিস্টার এক্স।
করুকগে, মুসা বলল। সেটা পরেও আলোচনা করা যাবে। প্লেন ধরতে হবে আমাদের, বাড়ি যেতে হবে, ভুলে গেছ?
জাংক ইয়ার্ডে ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত হয়ে গেল। বাইরে গিয়ে তদন্ত করার সময় নেই আর তখন। মুসা চলে গেল ওদের বাড়িতে। এত তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না কিশোরের। তাই লক কমবিনেশন ডিকোডার নিয়ে কাজে বসল সে। অনেকক্ষণ পর, ক্লান্ত হয়ে উঠে বাতি নিভিয়ে ওঅর্কশপ বন্ধ করতে যাবে, এই সময় বাজল টেলিফোন।
অন্ধকারেই রিসিভার তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল সে, হ্যালো?
কিশোর, মুসার কণ্ঠ। ফারিহা কথা বলতে চায়।
আবার আলো জ্বালল কিশোর।
হাই, কিশোর, এত রাতেও ফারিহার গলার জোর শুনে অবাক হলো কিশোর, বিন্দুমাত্র ক্লান্তির ছাপ নেই। শোননা, কি হয়েছে। জুন লারসেন আজ লাঞ্চ খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল আমাকে…
কল্পনায় পরিষ্কার দেখতে পেল কিশোর, ফারিহা এখন কি করছে। লম্বা চুলের একটা গোছা আঙুলে পেঁচাচ্ছে আর কথা বলছে। বকবক করে যাবে, করেই যাবে এক গল্প শেষ করতেই রাত কাবার। কম কথায় আর শেষ করতে পারে না। অতক্ষণ কানে রিসিভার ঠেকিয়ে রাখার ধৈর্য নেই কিশোরের। তাই স্পীকারের লাইন অন করে দিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখল সে। যাতে প্রয়োজনে শুনতে শুনতে পায়চারিও করতে পারে।
… অনেক কথাই বলেছে, জুন বলে যাচ্ছে। তবে এখনও মনে করতে পারছে না অ্যাক্সিডেন্টের দিন কোথায় গিয়েছিল আর ব্রিফকেসটা কোথায় রেখেছিল। একটা কথা অবশ্য আবছাভাবে মনে করতে পারছে, সেদিন একটা গাড়ি পিছু নিয়েছিল ওর।… যাই হোক, লাঞ্চের পর আমাকে গাড়িতে করে বাড়ি পৌছে দিয়েছে সে। দারুণ একটা গাড়ি। নতুন একটা মাসট্যাং কনভারটিবল কিনে দিয়েছেন তাকে চিকেন লারসেন।
আর জানো কি ইঞ্জিন? পেছন থেকে বলে উঠল মুসা, ফাইভ-লিটার ভি এইট ইঞ্জিন…
মুসা, প্লীজ, ওকে থামতে অনুরোধ করল ফারিহা। কিশোর আমার গল্পটা শুনতে চাইছে। এক কথার মাঝে আরেক কথা ঢুকিয়ে দিও না। হ্যাঁ, কিশোর, কি যেন বলছিলাম? ও, মনে পড়েছে। গাড়িতে ওঠার আগে ট্রাঙ্ক খুলে পার্সটা ভেতরে ছুঁড়ে দিল সে। অদ্ভুতই লাগল আমার কাছে। জিজ্ঞেস করলাম, ওরকম করল কেন? লোকে পার্স রাখে হাতে। গাড়ি চালানোর সময় পাশের সীটে রাখে, কিংবা কোলের ওপর রাখে। জবাব দিল ওটা ওর স্বভাব। ভাবলাম, এখন যদি ওর গাড়িটাকে পাহাড় থেকে উল্টে ফেলে দেয় কেউ, তাহলে সহজেই ট্রাঙ্ক থেকে পার্সটা বের করে নিতে পারে। নেয়ার ইচ্ছে থাকলে। কি বললাম, বুঝতে পেরেছ?
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে কিশোরের চোখ। ট্রাঙ্ক! ব্রিফকেসটা ট্রাঙ্কে থাকতে পারে!
হ্যাঁ, বুঝেছি, জবাব দিল সে। বুদ্ধি আছে তোমার। শিখতে আরম্ভ করেছ।
হেসে উঠল ফারিহা।
দেখি, লাইনটা মুসাকে দাও। মুসা ধরলে কিশোর বলল, শোননা, কাল সকালে উঠেই চলে আসবে। অটো স্যালভিজ ইয়ার্ডে যাব। জুনের গাড়ির ট্রাঙ্কটা দেখার জন্যে।
জানতাম, একথাই বলবে। ঠিক আছে, আসব।
পরদিন সকাল নটায় রবিনের ফোক্সওয়াগনে করে হাজির হলো রবিন আর মুসা। কিন্তু কিশোর তখনও তৈরি হতে পারেনি। রিসিভার তুলে ডায়াল করল থানায়। চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে চাইল। তিনি ধরলে জানাল, জুনের ব্রিফকেস খুঁজতে যাচ্ছে।
ব্রিফকেসের কথা তো নতুন শুনলাম, চীফ বললেন।
হ্যাঁ। অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায় নিশ্চয় পাননি। খোজাখুঁজি তো করেছেন। গাড়ির ভেতর থেকে কিছু পড়ে গেল কিনা দেখেছেন।
নিশ্চয়, অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন চীফ।
গাড়ির ভেতরে খুঁজেছেন?
কিশোর, আমার পুলিশে চাকরির বয়েসই তোমার বয়েসের চেয়ে বেশি। আমি আমার কাজ জানি। যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তারাও জানে। রিপোর্ট করেছে, গাড়ির ভেতরটা খালি ছিল।
আসলে শিওর হতে চাইছি আমি, কোথাও কিছু বাদ পড়ে গেল কিনা।
বাদ পড়েনি। এই একটা কেসে তুমি সুবিধে করতে পারবে না, হাসলেন চীফ।
না পারলে, রহস্যময় কণ্ঠে কিশোর জবাব দিল, কোন দিন আর চিকেন লারসেনের মুরগী আপনি খেতে চাইবেন না। পরে সব বলব, লাইন কেটে দিল সে।
গাড়িতে এসে উঠল কিশোর। দুই সহকারীর সঙ্গে রওনা হলো মিলার অটো রেকেজ ইয়ার্ডে।
বিশাল এলাকা নিয়ে ইয়ার্ড। কাঠের বেড়া দিয়ে ঘেরা। একধারে স্তূপ করে রাখা হয়েছে নতুন নষ্ট হওয়া গাড়িগুলো। টুকরো টুকরো হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে যেন। সবখানে ছড়িয়ে রয়েছে গাড়ির নানা জিনিস। কোথাও টায়ারের স্তূপ, কোথাও ফেনডার, কোথাও বা বডির অন্যান্য অংশ। ইয়ার্ডের পেছনে বাঁ দিকে রয়েছে বিশাল এক কমপ্যাক্টর মেশিন আর দুশো ফুটের ক্রেন।
একেবারে গল্পের মত ঘটে গেল ঘটনা। টেলিভিশনের থ্রিলারের গল্পে যে রকম হয়।-তিন গোয়েন্দা ইয়ার্ডে ঢুকতেই কাকতালীয় ভাবে জুনের ছোট নীল মাসট্যাংটা তুলে নিল ক্রেন।
ম্যাশারে নিয়ে গিয়ে ফেলবে! চিৎকার করে উঠল মুসা। চাপ দিয়ে চ্যাপ্টা বানিয়ে ফেলবে!
ট্রাঙ্কের চিহ্নই আর থাকবে না! দৌড় দিল রবিন। কিচ্ছু বের করতে পারব না!
ক্রেনের দিকে দৌড়াচ্ছে তিনজনে। চিৎকার করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে ক্রেন অপারেটরের। কাছে গিয়ে দেখল ক্রেন চালাচ্ছে পল মিলার। ইয়ার্ডের মালিকের ছেলে। বছরখানেক আগে রকি বীচ হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছে।