মোড় নিয়ে উঠে গেছে পথটা। আরেকটু উঠতেই খেয়াল হলো মুসার, সামনের কুয়াশার ভেতরে ঢুকতে হবে। ভ্রাম করে বাড়ি লাগল আবার।
বাপরে বাপ, এমন কুয়াশা জিন্দেগিতে দেখিনি, গাড়ির গতি কমিয়ে ফেলল সে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। এতই ঘন কুয়াশা হেডলাইটের তীব্র আলোও সামনে ফুটখানেকের বেশি ভেদ করতে পারে না। একবার ভাবল, গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যায় আবার যে পথে এসেছে। কিন্তু ঘোরানোর জায়গা নেই। আর মিস্টার এক্সও ওদেরকে সে সুযোগ দেবে না।
ধ্রাম!
পেছনে তাকাল কিশোর। কুয়াশার জন্যে দেখাই যাচ্ছে না ক্যাভেলিয়ারটাকে। এমনকি হেডলাইটও দেখতে পাচ্ছে না। গুতো মারছে বলেই বুঝতে পারছে, ওদের পেছনে রয়েছে মিস্টার এক্স।
তারপর একসময় থেমে গেল গুতো মারা। কয়েক মিনিট পেরিয়ে গেল, একটিবারও আর তো লাগল না।
কি ব্যাপার? ফিসফিস করে বলল মুসা।
বুঝতে পারছি না। কিছুই দেখতে পাচ্ছি না পেছনে। চালাতে থাকো।
আরও শক্ত করে স্টিয়ারিং চেপে ধরল মুসা। একটা মোড় এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারছে না সে। কিছুই দেখার জো নেই। পথের কিনারে হঠাৎ করে কোনখান থেকে খাড়া নেমে গেছে ঢাল, তা-ও জানে না।
মোড়ের কাছাকাছি চলে এসেছে সে…মোড় পেরোচ্ছে… এই সময় কুয়াশার ভেতর থেকে উদয় হলো আবার লাল কনভারটিবলটা, বাঁ দিক থেকে ঠেলে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করল ওদের গাড়িটাকে।
চিৎকার করে উঠল কিশোর।
বাঁয়ে কাটল মুসা। টায়ারের কর্কশ আর্তনাদ তুলে সরে এল গাড়ি। মোড়টা পেরিয়ে এসেছে। এমনিতেও মরবে ওমনিতেও, কাজেই ঝুঁকিটা নিতে আর বাধল না ওর। তীব্র গতিতে কুয়াশার ভেতরে অন্ধের মত চালিয়ে দিল গাড়ি।
পাহাড়ের ওপরে উঠতেই নেমে গেল কুয়াশা। আসলে বেরিয়ে এসেছে কুয়াশার ভেতর থেকে।
ধড়াস ধড়াস করছে বুক। সামনে একটা পার্কিং লট। ওখানে গাড়ি রেখে নিচের দৃশ্য দেখে দর্শকরা। সোজা সেখানে গাড়ি ঢুকিয়ে দিল সে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘাম মুছল কপালের।
এইবার আসুক দেখি ব্যাটা! সমস্ত ক্ষোভ ঝরে পড়ল কণ্ঠ থেকে। বাপের নাম ভুলিয়ে ছেড়ে দেব!
হ্যাঁ, কিশোরের কণ্ঠও কাঁপছে, যদি পিস্তল না থাকে!
১২
চুপ করে বসে আছে দুই গোয়েন্দা। গাড়ির ইঞ্জিন চলছে। বেশ কিছু দর্শক রয়েছে। ওখানে। কিছু করার সাহস পাবে না মিস্টার এক্স। ভয় চলে যেতেই রাগে ফুটতে আরম্ভ করেছে মুসা।
সাহস আছে হারামজাদার, দাঁতে দাঁত চাপল সে। কুয়াশার মধ্যে ঠিকই গুতোগুতি করল। গাড়ি নিয়ে শয়তানী করেছে বলে পার পেয়ে গেছে। এখন আসুক…আসে না কেন? এত দেরি? করছেটা কি?
জানি না, চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। অনেক কারণ থাকতে পারে…
আধ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। ক্যাভেলিয়ারের দেখা নেই।
হঠাৎ ড্যাশবোর্ডে চাপড় মারল কিশোর। এখুনি এয়ারপোর্টে যেতে হবে আমাদের, প্লেন ধরতে হলে!
কিন্তু মিস্টার এক্স?
ও আসবে না। বুঝতে পেরেছে, এখানে আমাদের কিছু করতে পারবে না। কাজেই ফিরে চলে গেছে।
হতাশ হলো মুসা। সমস্ত রাগ যেন গিয়ে পড়ল স্টিয়ারিঙের ওপর। ওটাকেই কিল মারল। তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে বের করে আনল পার্কিং লট থেকে।
সাবধানে থাকবে, কিশোর বলল। বলা যায় না, ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। কোথাও। মহা পাজি লোক।
তবে পথে আর বিপদ হলো না। নিরাপদেই বিমান বন্দরে পৌঁছল ওরা। যেখান থেকে গাড়িটা ভাড়া করেছে সেখানে ফিরিয়ে দিতে গেল। গাড়িতেই চাবি রেখে অফিসের দিকে পা বাড়াল দুজনে। ভাড়া মিটিয়ে দেবে। কিন্তু ঢোকার আগেও মুহূর্তে কিশোরের হাত ধরে টান মেরে ঘুরিয়ে ফেলল মুসা। ওই যে! লাল ক্যাভেলিয়ার!
কিশোরও দেখল। কিন্তু ওটাই কি আমাদের পিছে লেগেছিল? চলো, দেখি।
গাড়িটার কাছে এল ওরা। শূন্য। ভেতরে কেউ নেই। চারপাশে ঘুরে দেখল। লাইসেন্স প্লেট দেখে কিশোর বলল, এটাই! জলদি অফিসে যাও! এখনও থাকতে পারে ব্যাটা! না পেলে ক্লার্ককে জিজ্ঞেস করবে, লাল কনভারটিবলটা যে ভাড়া করেছিল তার নাম কি। যাও, আমি আসছি।
চলে গেল মুসা। লাল গাড়িটার দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিল কিশোর। ভেতরে এমন কিছু কি আছে যেটা সূত্র হতে পারে? খুঁজতে লাগল সে। কার্পেটের পেছনে দেখল, উল্টে নিচে দেখল, সামনের সীটের নিচে ওপরে সবখানে দেখল। অ্যাশট্রে, গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট কিছু বাদ দিল না। এমনকি আঙুল আর হাত ঢোকে ওরকম কোন ফাঁকফোকরই বাদ রাখল না।
তবে কষ্ট বিফলে গেল না। মিস্টার এক্স কে, তা জানা যাচ্ছে না, তবে কোথায় পাওয়া যাবে একথা জানা গেল। অফিসের দিকে দৌড় দিল কিশোর। বেরিয়ে আসছে তখন মুসা।
ক্লার্ক কি বলল? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হ্যাভ আ নাইস ডে, জবাব দিল মুসা। বাংলা করে বলল-ভাল বাংলা বলতে পারে আজকাল, দিনটা ভাল কাটুক।
লাল গাড়িটার কথা কি বলল? অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল কিশোর।
হ্যাভ আ নাইস ডে। মানুষ নয়। একটা কম্পিউটার।
দেখো, আমি কি পেয়েছি। এক টুকরো দোমড়ানো কাগজ বের করে দেখাল কিশোর। একপাশ চকচকে প্লাস্টিকের মত, আরেক পাশ সাদা, সাধারণ কাগজ।
ক্যানডির মোড়ক। হাতে ডলে কাগজটা সমান করল মুসা। লেখাগুলো যাতে পড়া যায়। রূপালি রঙে লেখা রয়েছে, পড়ল, মিরাকল টেস্ট! আরে ওই রকম ক্যানডির মোড়ক, চিকেন লারসেনের পার্টিতে যে জিনিস বিতরণ করেছিল। ফেলিক্স আরোলা!