এমন ভারি করা করেছে, নড়তেই তো পারছে না…
এই সময় তিনজন লোক ঢুকল ঘরে। চার পাশে তাকাতে শুরু করল। খানিক আগে যে ছোট জাতের মুরগীগুলোর কাছে ছিল কিশোর আর মুসা, সেখানটায় এসে দাঁড়িয়েছে ওরা।
কুইক, কিশোর বলল। কাজ করার ভান কর!
কিছুই তো করার নেই। মেশিনেই করছে।
তাহলে লুকিয়ে পড়!।
বেড়া দিয়ে আলাদা করা এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগকে। একটা বেড়ার আড়ালে লুকিয়ে পড়ল দুজনে। বেড়াটা নিচু। ইচ্ছে করলে মাথা তুলে দেখতে পারে লোকগুলো কি করছে। বিরক্ত করতে লাগল মুরগীগুলো। কেবলই পায়ের ওপর এসে পড়ছে। অযথাই ঠোকর মারছে, খাবার আছে মনে করে।
বেরোতে হবে এখান থেকে, আচমকা বলে উঠল। যতবার সাদা মুরগীগুলো দেখছি, কাল রাতের ওটার কথা মনে হয়ে যাচ্ছে আমার।
এগিয়ে আসছে লোকগুলো। একজনের গায়ে লাল শার্ট, খাকি প্যান্ট। মাথায় সাদা ক্যাপ, তাতে লারসেন মনোগ্রাম আর সুতো দিয়ে তোলা লাল অক্ষরে নাম লেখা রয়েছে ডরি। অন্য দুজনকে এই পরিবেশে একেবারেই মানাচ্ছে না। গাঢ় নীল স্যুট পরনে, একজনের চোখে বৈমানিকের সানগ্লাস। এই লোকটার বয়েস কম। খাটো করে ছাঁটা কালো চুল। সানগ্লাসটা খুললে দেখা গেল নীল চোখ যেন জ্বলছে।
ডরি বলল, মিস্টার অগাসটাস, আর কিছু দেখার প্রয়োজন আছে আপনার?
হেনরি অগাসটাস? কান খাড়া করল কিশোর। একটা কথাও এড়াতে চায় না।
ডরির দিকে তাকাল হেনরি। তারপর অন্য লোকটার দিকে। না, অনেক দেখেছি, কণ্ঠস্বরেই বোঝা যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি। নোট লেখ। অনেক কিছু বদলাতে হবে এখানকার। দেখতেই পাচ্ছি।
লিখছি, বলে তাড়াহুড়ো করে পকেট থেকে নোটবুক আর কলম বের করল নীল স্যুট পরা অন্য লোকটা।
আবার সানগ্লাসটা নাকের ওপর বসাল হেনরি। ডরিকে জিজ্ঞেস করল, প্রোডাকশন কেমন তোমাদের?
হপ্তায় পঞ্চাশ হাজার করে জবাই করার উপযোগী পাওয়া যায়।
নাহ, যথেষ্ট নয়, হেনরি বলল। দ্বিগুণ করা দরকার।
কথাটা লিখে নিল তার সহকারী।
মিস্টার লারসেন বলেন ভিড় বাড়িয়ে ফেললে মুরগীর অসুবিধে হবে, ডরি বলল।
এটা মুরগীদের রেস্ট হাউস নয়, হাসল হেনরি। কুৎসিত লাগল হাসিটা। এটা কারখানা। যত বেশি প্রোডাকশন দেয়া যাবে, তত বেশি টাকা আসবে।
আরেকবার ঘরটায় চোখ বোলাল হেনরি। মাথা নাড়ল। তারপর নিচু হয়ে খাবারের পাত্র থেকে একমুঠো দানা তুলে নিয়ে দেখল। ডরির দিকে তাকাল আবার। খাবারও বদলাতে হবে। আমি নিজে দেখব সেদিকটা। কি দেব ভেবেই রেখেছি।
লেখা শেষ করে তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল তার সহকারী। দরজা খুলে ধরল। লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে গিয়ে বাইরে দাঁড়ানো একটা মার্সিডিজ গাড়িতে উঠল হেনরি। গাড়িটা ঘুরে চলে যাওয়ার সময় ওটার লাইসেন্স প্লেটের দিকে তাকাল কিশোর।
লেখা রয়েছেঃ প্লাকার-১।
১১
লোকটার মধ্যে মানবিকতার ছিটেফোঁটাও নেই, কিশোর বলল। দক্ষিণে স্যান কাউন্টারের ফ্র্যান্সিসকোর দিকে চলেছে ওরা। প্রচন্ড স্বার্থপর।
যা বলেছ। তবে সঙ্গে জানোয়ার শব্দটা যোগ করতে পারতে।
আর তেমন কোন কথা হলো না। নীরবে গাড়ি চালাল মুসা। সাতটা বাজে। শহর থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে রয়েছে। আচমকা চিৎকার করে উঠল কিশোর, রাখ! রাখ!
কি হয়েছে? পথের পাশে গাড়ি নামিয়ে এনে জিজ্ঞেস করল মুসা। তারপর চোখে পড়ল নির্দেশকটা। একটা বাড়ির লাল রঙ করা ছাতে বসানো একটা মুরগী। ভেতরে জ্বলছে নিয়ন আলো। চিকেন লারসেন রেস্টুরেন্টের চিহ্ন।
সেদিকে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে গেল মুসা। সে পার্ক করে বেরোতে বেরোতে রওনা হয়ে গেছে কিশোর। একটা সেকেন্ড দেরি করেনি।
দরজায় দাঁড়িয়ে লম্বা দম নিল। খাবারের সুগন্ধে ভুরভুর করছে বাতাস।
আরে সর না, মুসা বলল। জায়গা দাও। লোকে ঢুকবে তো।
কাউন্টারের কাছে এগিয়ে গেল দুজনে। সতেরো-আঠারো বছরের একটা মেয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে হাসল। গায়ে লাল শার্ট। পরনে খাকি প্যান্ট। মাথায় সাদা ক্যাপ। সামনের দিকের বাড়তি অংশটা মুরগীর ঠোঁটের মত। ক্যাপে লাল সুতোয় তোলা লেখা পড়ে বোঝা গেল ওর নাম নেলি।
মোলায়েম ভদ্র গলায় ওদেরকে জিজ্ঞেস করল মেয়েটা, কি দেব?
বিষাক্ত খাবার, বিড়বিড় করল মুসা অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে।
কী?
আঁ! ও, মুরগী। আর কি। এখানে তো ওটাই স্পেশাল। কিশোরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল মুসা, খাবে তো? তোমার পেট…
চুলোয় যাক পেট। অনেক সয়েছি। আর না। এত সুগন্ধ, না খেয়ে আর পারব না।
জানালার কাছে একটা টেবিল বেছে নিল দুজনে। খাবার এল। কিন্তু আসার সঙ্গে সঙ্গে যার ঝাপিয়ে পড়ার কথা সে-ই ছুঁল না। হাত গুটিয়ে বসে রইল মুসা।
কি ব্যাপার? ভুরু নাচাল কিশোর।
বলা যায় না। এখানকার খাবারেই হয়তো বিষ মিশিয়েছে। যদি থাকে?
তা থাকতেই পারে। তবে জীবনটাই ঝুঁকিপূর্ণ। রিস্ক তো নিতেই হবে, বলে আর কথা না বাড়িয়ে মুরগীর মাংসে কামড় বসাল কিশোর।
শ্রাগ করল মুসা। তারপর সে-ও আর দ্বিধা করল না।
এই কেসের সমস্ত রহস্যের সূত্র লুকানো রয়েছে জুনের ব্রিফকেসে, চিবাতে চিবাতে বলল কিশোর। আমার বিশ্বাস। কি ছিল জানতে পারছি না। ওর অ্যামনেশিয়া না কাটলে বলতে পারবে না। যে লোকটা বিষ মেলাতে চায় সে জানে আমরা এ কেসের তদন্ত করছি। আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে সরাতে না পারলে তার পরিকল্পনা বদল করবে। সময়টা এগিয়ে নিয়ে আসবে।