ওর দিকে তাকিয়ে হাসল কিশোর। হঠাৎ হাত বাড়িয়ে বলটা নিল মুসার হাত থেকে। তারপর ছুঁড়ে মারল জাল সই করে। নেটের ধারেকাছে গেল না বল।
হচ্ছে, ভরসা দিল মুসা। একটু প্র্যাকটিস করলেই পারবে…
এক মাইল দূর দিয়ে গেল, আর তুমি বলছ পারব…
ড্রাইভওয়েতে ঢুকল রবিনের ফোক্সওয়াগন। ভটভট ভটভট করছে ইঞ্জিন। হর্ন বাজাল একবার সে। তারপর ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল।
অ্যাই, কেমন আছ তোমরা? এগিয়ে এসে বলল সে। সকালের কাগজ দেখেছ? ভাঁজ করা একটা খবরের কাগজ কিশোরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, পয়লা পাতার বিজনেস সেকশনটা দেখো।
বল নিয়ে ব্যস্ত হলো মুসা। বার বার জালের মধ্যে ছুঁড়ে দিতে লাগল।
কিশোর পড়তে লাগল লেখাটা।
চমৎকার, কয়েক মিনিট পর মুখ তুলে বলল সে। একেবারে সময়মত দিয়েছে। তাহলে এই ব্যাপার। লারসেনের রেস্টুরেন্ট কেনার জন্যে খেপেই গেছে মনে হচ্ছে হেনরি অগাসটাস। হমম…একটা ফোন করা দরকার।
পাঁচ মিনিট পর মুসাদের বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। মুখে বিচিত্র হাসি।
কাকে করেছিলে? জানতে চাইল মুসা।
হেনরি অগাসটাসকে। মনে হলো, ওর ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়ার সময় হয়েছে। চিকেন লারসেনের রেস্টুরেন্ট কিনে নিতে না পারলে খাবারে বিষ মিশিয়ে সে তার ব্যবসা নষ্ট করার চেষ্টা করতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক।
সে কি বলল?
তার সঙ্গে কথা হয়নি। নেই অফিসে। সেক্রেটারি বলল, শহরের বাইরে গেছে। কোথায়, জানো?
আমি জানব কি করে? আমি তো এখানে বল খেলছিলাম।
পিটালুমায়, ঘোষণা করল যেন কিশোর। স্যান ফ্রান্সিসকোর উত্তরে। ওখানেই চিকেন লারসেনের মুরগীর খামার।
ঘণ্টাখানেক পরেই স্যান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার প্লেনে চাপল কিশোর আর মুসা। জুনকে ফোন করেছে রওনা হওয়ার আগে। তদন্ত করতে যা খরচ হবে, দিতে রাজি হয়েছে জুন। ও কল্পনাও করতে পারেনি, ওর বাবার ব্যাপারেও খোঁজ নিচ্ছে তিন গোয়েন্দা।
রবিন সঙ্গে আসতে পারেনি। সেই একই কারণ। অফিসে কাজ বেশি, ঝামেলা। দুটো বিবাহ উৎসবে একই ব্যান্ডের বাজনা বাজানোর কথা একই দিনে, ব্যবস্থা করাটা বেশ কঠিন। সময়ের একটু হেরফের হলেই সব পন্ড হয়ে যাবে। আর ব্যর্থতার দোষটা তখন এসে পড়বে ওর ঘাড়ে। এসব চাপ যখন পড়ে, তখনই ভাবতে আরম্ভ করে সে, ট্যালেন্ট এজেন্সির চাকরিটা ছেড়েই দেবে।
স্যান ফ্রান্সিসকো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নেমে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করল কিশোর। মুসাকে নিয়ে চেপে বসল। ওখান থেকে উত্তরে ঘণ্টাখানেকের পথ পিটালুমা। চিকেন লারসেনের খামার খুঁজে বের করতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হলো। বিরাট এক র্যাঞ্চ ছিল একসময়ে ওটা। ওই এলাকার সবাই চেনে।
দেখতে মোটেও মুরগীর খামারের মত লাগল না। বরং মোটরগাড়ির কারখানা বললেই বেশি মানায়। বড় বড় দুটো বাড়ি আছে, দুটোই দোতলা, আর অনেক বড়। ঘিরে রেখেছে তারের বেড়া।
বেড়ার বাইরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রয়েছে দুই গোয়েন্দা। শনিবার বলেই বোধহয় কাউকে দেখা গেল না। গেটে পাহারা নেই। নিজেরাই গেটের পাল্লা খুলে ভেতরে ঢুকল। প্রথম বাড়িটার দিকে এগোল পঞ্চাশ গজ মত। চট করে তাকিয়ে দেখে নিল এদিক ওদিক, কেউ দেখছে কিনা। তারপর ঢুকে পড়ল ভেতরে।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না ওরা। কিংবা বলা যায় নিজের কানকে। ভেতরে অনেক মুরগী থাকবে জানত। কিন্তু এত বেশি থাকবে, আর ওগুলোর মিলিত কক কক এত জোরাল হবে, কল্পনাই করতে পারেনি। কানে তালা লেগে যাবার জোগাড়। গ্রীন হাউসের মত কাচের ছাত দিয়ে আলো আসছে। পুরো এয়ারকন্ডিশন করা। ফলে তাপমাত্রার কোন হেরফের হচ্ছে না।
দরজার কাছে দেয়ালে অনেকগুলো হুক লাগানো। তাতে ঝুলছে লারসেন কোম্পানির পোশাক। যারা মুরগীর সেবা-যত্ন করে তাদের ইউনিফর্ম। দুটো নামিয়ে নিয়ে পরে ফেলল দুজনে। কোম্পানির কর্মচারীর ছদ্মবেশে শুরু হয়ে গেল খোঁজাখুঁজি।
প্রথমেই যেটা বুঝতে পারল, তা হলো, এই বিল্ডিঙে মানুষের চলাফেরার বড়ই অসুবিধে। মুরগীর পাল তো আছেই, তার চেয়ে বেশি অসুবিধে করছে মেঝেতে বসানো লাল প্লাস্টিকের পাইপ। কয়েক ইঞ্চি পর পরই। যেন লাল খুঁটির মত বেরিয়ে আছে, কিংবা গজিয়ে আছে। হাঁটার সময় ওগুলো ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে যেতে হয়। খাবার সরবরাহ করা হয় ওসব পাইপ দিয়ে। প্রতিটি পাইপের মুখের কাছে কায়দা করে লাগানো রয়েছে লাল প্লাস্টিকের পাত্র, আঠারো ইঞ্চি পর পর। পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে পাইপের সাহায্যে। পানি খেতে অসুবিধে হয় না মুরগীগুলোর। পুরো ব্যবস্থাটাই এমন, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটা মুরগীগুলো নিজেই সারতে পারে, বাইরের কারও সাহায্য প্রয়োজন হয় না। সে জন্যেই কোন লোককে দেখা গেল না আশপাশে।
অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে ঘরটাকে। একেক ভাগে রয়েছে একেক বয়েসের আর আকারের মুরগী। এক জাতের সঙ্গে আরেক জাত মিশতে পারছে না কোনমতেই। এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ঘুরে বেড়াতে লাগল দুজনে।
কিছু কিছু মুরগী খুব অদ্ভুত, তাই না? মুসা বলল। ওই যে ওটাকে দেখো। ডানা কি রকম ছোট। এত ছোট ডানার মুরগী আর দেখিনি।
একটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়, কিশোর বলল। একে বলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। এক জাতের সঙ্গে আরেক জাতের প্রজনন ঘটিয়ে, খাবারের পরিবর্তন করে ওরকম করা হয়। এতে ডানা ছোট হয়ে যায়, বুকের মাংস যায় বেড়ে। অনেক বেশি মাংস পাওয়া যায় ওগুলো থেকে।