চলতে শুরু করল গাড়ি। ওফ, বড় বাঁচা বাঁচলাম! এখনও হাঁপাচ্ছে রবিন।
কথা বলতে পারছে না কিশোর, এতই হাঁপাচ্ছে। মনে হচ্ছে বুকের খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে পড়বে হৃৎপিন্ডটা।
পুরোপুরি শান্ত হতে হতে গাড়িটা সরে চলে এল কয়েক মাইল দূরে। বলল, লাভ হলো না। দেখতে পারলাম না কিছু। একটা কথাই জেনে এলাম, ডনের বাড়িতে সিকিউরিটি খুব কড়া। কেন? চলো, হেডকোয়ার্টারে। ওখানে বসেই আলোচনা করব।
অনেকক্ষণ পর ওয়ার্কশপে বসে ডনের বাড়িতে ঢোকার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা মুসা এবং ফারিহাকে জানাল কিশোর আর রবিন।
এরপর মুসার রিপোর্ট করার পালা এল। সে বলল, চিকেন লারসেনকে অনুসরণ করে তো গেলাম। ভেগ আউট রেস্টুরেন্টটা চেনো তো? ওখানে ঢুকল। একটা শেফস সালাদ কিনে নিয়ে সোজা গেল ফেলিক্স আরোলার অফিসে।
মিরাকল টেস্টে? ভুরু কোঁচকাল কিশোর।
হ্যাঁ। আরোলার অফিসটা লং বীচে। ল্যাবরেটরি আছে, একটা গুদামঘর আছে।
নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেমন?
দারোয়ানগুলোকে তো তেমন কড়া মনে হলো না। নিরীহ, গোবেচারা চেহারা। তবে ঢোকার মুখে সিকিউরিটি সিসটেম ভীষণ কড়া। অনেকগুলো অ্যালার্ম আর একটা কম্পিউটার কীপ্যাড পেরিয়ে যেতে হয়।
ফারিহার দিকে তাকাল কিশোর। কিছু জিজ্ঞেস করল না, তবে ভঙ্গিটা তোমার-কি-খবর?
ব্যবস্থা করে এসেছি, মাথা কাত করে হাসল ফারিহা। কাপড়গুলো আমাকে ফিরিয়ে দিল জুন। কি করি ভাবতে লাগলাম। শেষে কায়দা করে ওগুলোতে কফি ফেলে দিলাম। যেন হঠাৎ করে হাত ফসকে পড়ে গেছে এমন ভাব করলাম। ও কিছু বোঝেনি। আহা উহু করল খানিক। শেষে বলল, ধুয়ে দেবে। কিছুতেই আমাকে আনতে দিল না। কাল আবার যাব আনার জন্যে।
পরের দিন গেলেও পারো, কিশোর বলল। কিংবা তার পরের দিন। যাক, ভাল কাজই করে এসেছ, হঠাৎ ওয়ার্কশপের দরজার দিকে ঘুরে তাকাল সে। ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ থাকতে ইশারা করল মুসাকে। তার সঙ্গে যেতে বলল। দ্রুত এগিয়ে গেল দুজনে। দুপাশের দরজার কাছে পজিশন নিয়ে দাঁড়াল। তারপর হ্যাঁচকা টানে তার কাছের দরজাটা খুলে ফেলল কিশোর।
বাইরে অন্ধকার। কেউ নেই। জুতোর বাক্সের চেয়ে বড় একটা বাক্স পড়ে আছে। বাদামী কাগজে মোড়া। লাল সুতো দিয়ে বাঁধা। হাতে লেখা একটুকরো কাগজ লাগানো রয়েছে; কিশোর পাশার জন্যে।
পাশে এসে দাঁড়াল মুসা। জুতোর ডগা দিয়ে ছুঁয়ে দেখল। তারপর ঠেলে সরিয়ে দিল।
বেশ ভারি।
ঝুঁকে তুলে নিল বাক্সটা কিশোর। হ্যাঁ, ভারিই।
খুলবে নাকি? কিশোরকে ওটা বয়ে আনতে দেখে জিজ্ঞেস করল রবিন।
না, খুলো না! বাধা দিল ফারিহা। বোমাটোমা থাকতে পারে! একটা মিনিট চুপ করে রইল কিশোর। কান পেতে শুনছে বাইরে কোন শব্দ শোনা যায় কিনা। অনুমান করার চেষ্টা করছে বাক্সের ভেতর কি আছে। বাইরে কি কেউ অপেক্ষা করছে এখনও? সতর্ক রয়েছে মুসা আর রবিন। টান টান হয়ে আছে স্নায়ু। বিপদ দেখলেই প্রতিরোধ করার জন্যে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কিশোর। সুতোটা খুলল। হাতের তালুতে রেখে আরেকবার আন্দাজ করার চেষ্টা করল। যা-ই আছে, বাক্সটা কাত করলেই নড়ছে ভেতরে। আস্তে আস্তে বাদামী কাগজের মোড়ক খুলল সে। বুঝতে পারেনি, মুখের দিকটা কাত করে রেখেছিল। টপ টপ করে কয়েক ফোঁটা তরল পদার্থ পড়ল পায়ের ওপর।
চিৎকার করে উঠল ফারিহা।
কিশোরের মুখ সাদা হয়ে গেল।
কিশোরের জুতোয় পড়েছে কালচে লাল রক্তের ফোটা। বাক্সের ভেতর থেকে বেরোল একটা মরা মুরগী, সদ্য গলা কেটে খুন করা হয়েছে। ভেতরে একটুকরো কাগজ পাওয়া গেল, রক্তের ছোপ লেগে আছে।
কাগজটার ভাঁজ খুলল কিশোর। লেখা রয়েছেঃ
কিশোর পাশা-
তোমার স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভাল। বেশ মোটাতাজাও হয়েছ, জবাই করার উপযুক্ত। মুরগী মোটাতাজা হলেই তো জবাই করে লোকে।
খাঁচার বাইরে আছ, বাইরেই থাকো। ঢোকার চেষ্টা কোরো না।
অন্যের ব্যাপারে নাক গলিও না। শেষবারের মত সতর্ক করলাম!
১০
থ্রপ! থ্রপ! থ্রপ! গ্যারেজের দরজায় বার বার বলটা ছুঁড়ে মারছে মুসা। সুন্দর সকাল। উজ্জ্বল রোদ। কয়েকবার ওরকম করে দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে উঠে জালের ভেতর দিয়ে বলটাকে গড়িয়ে দিল সে। ফিরে তাকাল কিশোরের দিকে। অ্যাই, কিশোর, কি ভাবছ? খেলবে?
আমি ভাবছি কাল রাতের কথা। গলাকাটা মুরগীর কথা।
জানি আমি। হপ্তাখানেক দুঃস্বপ্ন দেখার জন্যে যথেষ্ট। সে জন্যেই তো খানিকটা ব্যায়াম করছি। ব্যায়াম দুশ্চিন্তা দূর করে। তোমার জুতো থেকে রক্ত মুছেছ?
বীভৎস দৃশ্যটার কথা মনে পড়ল আবার কিশোরের। কাটা গলা থেকে টপ টপ ঝরছে রক্তের ফোটা। মানুষের গলা কাটলেও ওরকম করেই ঝরবে। যেমন ধরা যাক, তার…।
আরেকবার বলটা নিয়ে নেটের দিকে দৌড়ে গেল মুসা।
দুশ্চিন্তাটা আপাতত থাক না, কিশোর বলল। ব্যায়াম না হয় না-ই করলাম। ভাবছি, কে পাঠাল ওটা? চিকেন লারসেনের কাছ থেকে দূরে থাকতে কে বলছে আমাকে? লারসেন নিজে এই কাজ করেছে এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি বরং আমাদেরকে কাছে ঘেঁষতেই বলেন। আমাকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করানোরও ইচ্ছে আছে।
কিশোর, জবাবগুলো কি আমার কাছে চাইছ? মাথা নাড়ল, আমাকে মাপ করে দাও। ওকাজগুলো তুমিই সার। ধাঁধা সমাধানের ব্যাপারে যে আমি কত বড় এক্সপার্ট, ভাল করেই তো জানো।