ঘুরে তাকাল কিশোর। ডন বারোজ আর চিকেন লারসেন, রবিন বলল। কেন খাচ্ছে না? দ্বিধা করতে গিয়েই সুযোগটা হারাল কিশোর। অল্প বয়েসী এক মহিলা এগিয়ে এসে এক্সকিউজ মী বলে সরিয়ে দিল তাকে প্রায় ছোঁ মেরে নিয়ে নিল প্লেটের অবশিষ্ট দুটো স্যান্ডউইচ। ভাবছিলাম, একটা নিয়ে যাব, আমার এক বন্ধুর জন্যে। কিন্তু এতই মজা, নিতে ইচ্ছে করছে না, বলে কিশোরের মুখের ওপরই কামড় বসাল একটাতে। আরেকটাও খাবে, বোঝা যাচ্ছে।
পরস্পরের দিকে তাকাল রবিন আর কিশোর। নিরাশার দৃষ্টিতে।
কোনমতে কণ্ঠস্বর শান্ত রেখে বলল, থাক, অত ভাবনা নেই। খেতে ইচ্ছে করলে যখন তখন গিয়ে লারসেনের রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আসতে পারব।
শেষ হয়ে আসছে পার্টি। বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। বদ্ধ জায়গায় থেকে দম আটকে আসছিল, খোলা বাতাসে বেরিয়ে যেন বাঁচল। গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছে ফারিহা আর জুনের জন্যে।
বেরিয়ে এল দুজনে। কথা বলতে বলতে আসছে। কিশোরদের কাছে এসে ফারিহা তার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, আমি জুনদের বাড়িতে যাচ্ছি। কাপড়গুলোর জন্যে।
এটা ভাল লাগল না কিশোরের। সে চায়, কোন একটা ছুতে রেখে দিক ফারিহা, যাতে দরকার পড়লেই জুনের ওখানে যেতে পারে। জুন আরেক দিকে ফিরতেই মাথা নেড়ে ফারিহাকে ইশারা করল সে। বুঝল মনে হলো ফারিহা। কারণ কিশোরের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকাল। তারপর গিয়ে উঠল জুনের গাড়িতে। গাড়ি বটে একখান, মুসা বলল। চিকেনমাোবাইল নাম রেখে দেয়া যায়। অর্ডার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ক্যাডিলাক কনভারটিবলটা। হলুদ আর কমলা রঙের বডি। হুডের ওপর বড় করে আঁকা রয়েছে মুরগীর ছবি আর চিকেন লারসেন রেস্টুরেন্টের নাম। সামনের গাড়িকে সরার জন্যে হর্ন টিপলেন লারসেন। কুকুরুককুক করে মোরগের ডাক দিয়ে উঠল বাঁশিটা।
যাচ্ছেন কোথায়? কিশোরের প্রশ্ন।
হয়তো ডিনার খেতে, জবাব দিল মুসা।
মুসা, পিছু নেয়া দরকার, গাড়িটার দিকে তাকিয়েই রয়েছে কিশোর। তুমি যাও। আমি আর রবিন ডন বারোজের পিছু নেব। দেখি কে কোথায় যায়? মুসা রওনা হয়ে গেল। রবিনের ফোক্সওয়াগনে উঠল কিশোর। ডন গাড়ি নিয়ে রওনা হতেই তার পিছু নিল। ওর গাড়িটাও বিচিত্র। লম্বা শরীরের একটা লিঙ্কন টাউন কার। দুই পাশে আঁকা লারসেন রেস্টুরেন্টের মনোগ্রাম।
কয়েক ঘণ্টা ধরে তার পেছনে লেগেই রইল রবিন আর কিশোর। প্রথমে সাগরের ধারের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার খেলো ডন। একা। তারপর গেল শুগারলোফ ক্যানিয়নে পাহাড়ের কোলে তৈরি একটা ছোট বাড়িতে। অন্ধকার হয়ে গেছে তখন। আরও বাড়িঘর আছে ওখানে। কিন্তু এত দূরে দূরে, দেখে মনে হয় ওখানে যারা বাস করে তারা পড়শীদের এড়িয়ে চলে। কিংবা নিঃসঙ্গ থাকতে ভালবাসে। ডনের বাড়ির নিচে পাহাড়ের উপত্যকায় গাড়ি রাখল রবিন। দুজনেই ভাবছে, এরপর কি করবে?
ভেতরে তো ঢুকছে না, রবিন বলল। দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে একটা ঘন ঝোপে ঢুকে নজর রাখছে। পেছনে চলে যাচ্ছে কেন?
চলো, দেখি, উঠে দাড়াল কিশোর।
আরেকটা মিনিট সময় দিল ওরা ডনকে। তারপর এগোল। লম্বা ড্রাইভওয়ে। পেরিয়ে বাড়ির পাশ ঘুরে সরু একটা পথ ধরে চলল ডন যেদিকে গেছে। বাড়ির ভেতর অন্ধকার। পেছন দিকে এসে দেখল, বাইরেটা আলোকিত করার ব্যবস্থা রয়েছে গাছের ডালে বাল্ব ঝুলিয়ে।
বেড়া, দেখতে দেখতে বলল কিশোর। আকার-আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে। ওপাশে সুইমিং পুল আছে।
তার কথা শেষও হলো না, ঝপাং করে শব্দ হলো পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার।
আয়, জলদি আয়, ডনের গলা শোনা গেল। ওরকম করছিস কেন?.. ওয়ান-টু-থ্রী..নাম!
আরেকবার ঝপাং শোনা গেল। ওর সঙ্গে কারা আছে? রবিনের প্রশ্ন। তাকাল কিশোরের দিকে। চলো, দেখি।
মাথা ঝাকিয়ে সায় জানাল রবিন। এগোল দুজনে। আস্তে করে গেট খুলে ঢুকে পড়ল ভেতরে। একটা আউটডোর শাওয়ার আর স্নানের উপযোগী ছোট্ট একটা ঘর আড়াল করে রেখেছে পুলের গভীরতম অংশটা। পা টিপে টিপে ঘরটা দিকে এগোল দুজনে। পাশ থেকে উঁকি দিয়ে দেখার ইচ্ছে।
হঠাৎ প্লাস্টিকের একটা হোস পাইপে পা বেধে গেল কিশোরের। হুমড়ি খেয়ে পড়ল। চোখের পলকে আবিষ্কার করে ফেলল দুই গোয়েন্দা, কাদেরকে গোসল করাচ্ছিল ডন। প্রচন্ড ঘেউ ঘেউ শোনা গেল। পানিতে দাপাদাপি করে দ্রুত সাঁতরে উঠে এল কুকুরদুটো। যা তা কুকুর নয়। ডোবারম্যান পিনশার!
ধর! ধর! চিৎকার করে আদেশ দিল ডন। নিশ্চয় চোর!
হাঁচড়েপাঁচড়ে উঠে গেটের দিকে ছুটল কিশোর। কনুই যে ছড়ে গেছে খেয়ালই করল না। ওর আগেই ছুটতে শুরু করেছে রবিন। ছুটছে আর চিৎকার করছে সাহায্যের জন্যে। কিন্তু কে শুনবে ওদের চিৎকার? সব চেয়ে কাছের পড়শী রয়েছে মাইলখানেক দূরে।
বাড়ছে কুকুরের ঘেউ ঘেউ। গেটটা কোথায়? সরিয়ে ফেলল নাকি কেউ? আসলে, এতই ভয় পেয়েছে ওরা, সামনে কয়েক ফুট দূরের গেটটাও যেন চোখে পড়ছে না। ওদের মনে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে কেবল দৌড়েই চলেছে, পথের শেষ আর মিলছে না।
অবশেষে গেটের কাছে পৌঁছল রবিন। কিশোর বেরোতেই ধাক্কা দিয়ে লাগিয়ে দিল ওটা। ভেতরে আটকা পড়ল কুকুরগুলো। একটা মুহূর্ত নষ্ট করল না ওরা। গাড়ির দিকে ছুটল।
এবারও আগে পৌঁছল রবিন। ড্রাইভিং সীটে বসেই ঠেলে খুলে দিল প্যাসেঞ্জার সীটের দরজা। কিশোর উঠে দরজা লাগানোর আগেই ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে স্টিয়ারিং ঘোরাতে শুরু করে দিল।