যে-লোক এই কাজ করছে, মুসা অনুমান করল। সে আর্মি ক্যামমাফ্লেজ জ্যাকেট পরে, পোরশে কনভারটিবল গাড়ি চালায়। ঠিক?
হলে অবাক হব না। আমাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখে সে।
কিশোরের কথা শেষ হতে না হতেই ফোন বেজে উঠল। চমকে দিল তিনজনকেই। রিসিভার তুলে নিল কিশোর। কানে ঠেকিয়ে বলল, তিন গোয়েন্দার কিশোর পাশা বলছি।
তোমাকেই খুঁজছি! অন্য প্রান্তে গমগম করে উঠল একটা কণ্ঠ। চিকেন হার্বার্ট লারসেনের সঙ্গে কথা বলছ তুমি, পুত্র।
রিসিভারের মাউথপিসে হাত চাপা দিয়ে দুই সহকারীকে ফিসফিস করে জানাল গোয়েন্দাপ্রধান, চিকেন!
কি জন্যে করেছে জিজ্ঞেস কর, মুসা বলল। কুকির মোড়কের লেখাটার কথাটা জানে কিনা তা-ও জিজ্ঞেস কর।
মাথা নেড়ে মুসাকে চুপ থাকতে বলল কিশোর।
শোননা, লারসেন বললেন। একটা সুখবর আছে তোমাদের জন্যে। কাল ড্রিপিং চিকেনের বিজ্ঞাপন তৈরি হবে। টিভিতে যাবে। চিকেন হিস্টরি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। হলে তোমাকে ছাড়া পারব না।
নিজের সৌভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছে না যেন কিশোর। ঠিক এ রকম সুযোগই চাইছিল সে। চিকেন লারসেনের কাছাকাছি থেকে তাঁর ওপর নজর রাখতে পারে এমন কিছু।
কখন? কোথায়? জিজ্ঞেস করল সে।
আল্টা ভিস্টা ড্রাইভের মালটিন মিক্স স্টুডিওতে। একটায়। সময়মত হাজির হয়ে যাবে আমার টিম।
কেটে দেয়া হলো লাইন।
সেদিন অনেক রাতে, মুসা আর রবিন চলে যাওয়ার পর চিকেন লারসেনের বিজ্ঞাপনগুলো রেকর্ড করে রাখা একটা ভিডিও ক্যাসেট চালিয়ে দেখতে বসল কিশোর। বড় একটা ডেস্কে বসেন তিনি। ওপরে জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো, খুবই অগোছাল। যেন একাধারে ওটা একটা অফিস, লাইব্রেরি আর গেম রুমের মিশ্রণ। নানা ধরনের বেশ কিছু বিজ্ঞাপন আছে। কিশোরের পছন্দ হেট আ হ্যাঁমবারগার উইক নামের বিজ্ঞাপনটা, যেটাতে একটা গরুর মুখে গলিত মাখন ছিটিয়ে দেন লারসেন। আরেকটা ভাল বিজ্ঞাপন আছে। সেটাতে ক্যামেরার দিকে, সারাক্ষণ পিঠ দিয়ে থাকেন, কারণ তিনি বোঝাতে চান রেগে গেছেন, জন্মদিনের তারিখ ভুল করে ফেলেছেন বলে।
তবে তার সব চেয়ে পছন্দ, যেটাতে লারসেন দুটো নতুন ধরনের খাবার পরিবেশন করেন। একটার নাম ক্র্যাকলিন ক্রাঞ্চি, আরেকটা বার্নিং বারবে। লাস ভেগাস-এর এক মন্ত্রীর বিবাহবার্ষিকীতে ভোজ দেয়া হয়। তাতে আস্ত দুটো মুরগীকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে দেয়া হয়। একটাকে পরানো থাকে বরের পোশাক, আরেকটাকে কনের। কাপড় দিয়ে নয়। মাখন আর খাবার উপযোগী অন্যান্য মালমশলা দিয়ে। সেখানে উপস্থিত থাকেন চিকেন লারসেন। নানা রকম মজার মজার কথা বলেন।
টেপটা শেষ হয়ে গেলে ভিসিআর বন্ধ করে শুতে গেল কিশোর। কিন্তু অস্থির একটা রাত কাটাতে হলো। ভাবনার মধ্যে কেবলই ঘুরে ফিরে আসতে লাগল জুনের কথা। ঘোরের মাঝে কি বাবার কথাই বলেছিল সে? লারসেনই খাবারে বিষ মেশানোর পরিকল্পনা করেছেন? তিনিই যদি করে থাকেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারার সিদ্ধান্ত তিনি কেন নিয়েছেন?
পরদিন কাঁটায় কাঁটায় একটায় বেভারলি হিলের কাছে মালটিন মিক্স স্টুডিওতে হাজির হলো রবিন আর কিশোর। দুই মিনিট পরে মায়ের গাড়িটাতে করে এল মুসা আর ফারিহা।
এই দেখ, কিশোরকে বলল রবিন। গাড়ি নেই দেখে তোমার কত অস্থিরতা। মুসারটা যে থেকেও নেই? খালি খালি তো গজগজ করো..
ও তো ওর মায়েরটা নিয়ে এসেছে।
তুমিও ইয়ার্ডেরটা নিয়ে আসতে পারো।
ওই ভাঙা পিকআপ কে চালাতে যায়, এক মুহূর্ত চুপ থাকল কিশোর। বেশ, মুসার গাড়িটা যতদিন ঠিক না হয়, চুপ থাকব। হলেই আবার শুরু করব।
তোমাকে কে কিনে নিতে মানা করেছে?
এই প্রশ্নটা করলেই চুপ হয়ে যায় কিশোর। কারণ সে যেভাবে যে জিনিস চায়, সেটা অল্প পয়সায় জোগাড় করা কঠিন। ও চায়, এমন একটা গাড়ি, যাতে অনেক ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি সাজানো থাকবে। গোয়েন্দাগিরির অনেক সুবিধে হবে। অর্ডার দিয়ে বানাতে হবে সে সব। অত টাকাও নেই, আপাতত কিনতেও পারছে না। কিন্তু ক্ষোভটা ঠিকই প্রকাশ করতে থাকে। কিংবা হয়তো ক্ষোভের মাধ্যমেই অটো সাজেশন দেয় নিজেকে, আর কিছুদিন ধৈর্য ধর, কিনব, কিনব!
স্টুডিয়োয় ঢোকার মুখে দেখা হয়ে গেল জুনের সঙ্গে। মাথায় একটা রূপার মুকুট পরেছে। আর মুকুটের ওপর অবশ্যই বসে আছে একটা রূপার মুরগী।
এসেছ, কিশোরকে দেখে হেসে বলল জুন। বাবা তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল। নতুন কোন খবর আছে?
না। তবে কাল রাতে কিছু ফরচুন কুকি কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাতে বুঝেছি, ঠিক পথেই এগোচ্ছি আমরা।
গুড। আমার ব্রিফকেসটা যত তাড়াতাড়ি পারো বের করে দাও। ভেতরে কি ছিল এখনও মনে করতে পারছি না। তবে ওটা আমার চাই। মনে হচ্ছে ওটাতে জরুরী কিছু আছে।
তারপর তিন গোয়েন্দা আর ফারিহাকে নিয়ে চলল স্টুডিওর কাচে ঘেরা একটা অংশে, প্রোডাকশন বুদে। চিকেন লারসেনের অফিসের অনেকেই আছে ওখানে, ডন বারোজ সহ।
বিজ্ঞাপনের জন্যে সেট সাজানো হয়েছে। টেবিলে চিঠির স্তূপ, শূন্য কফির কাপ, রবারের মুরগী, রোস্ট করা মুরগীর ছবি–তৃতীয় শ্রেণীর আর্টিস্ট দিয়ে। আঁকানো হয়েছে ইচ্ছে করেই, আর হ্যালোউইন চিকেন কস্টিউম পোশাক পরা জুনের শিশুকালের একটা ছবি।
অবশেষে মাইক্রোফোনে পার্সোন্যাল অ্যাসিসটেন্টকে ডাকলেন পরিচালক, আমরা রেডি। চিকেন লারসেনকে ডেকে আনাও। দেখো, মেকআপ হয়েছে কিনা।