তার মানে কি আছে এতে আপনি জানেন না? জিজ্ঞেস করল মুসা।
নিশ্চয় জানি। গবেষণা করাই তো আমার কাজ। পরীক্ষা করে বের করে ফেললাম কি কি মেশানো হয়েছে। সে কথা জানালাম জেনারেলকে। খুশি হয়ে আরেকটা মোরগ আমাকে পুরস্কার দিয়ে দিলেন জেনারেল, পকেটে ঝোলানো দশ নম্বর রুপার মুরগীটা দেখাল ডন। তবে স্বীকার করতেই হবে, যা আছে সব ক্লাসিক জিনিস। তোমাদেরকে অবশ্যই বলব না। বিজনেস সিক্রেট।।
আমরা শুনতে চাইও না, কিশোর বলল। যা দেখলাম তাতেই খুশি আমরা। চিকেন লারসেনের সঙ্গে পরিচয় হওয়াটাই তো একটা সৌভাগ্য। কি বলো, মুসা? আট দিন আগেও তো আমরা চিনতাম না, তাই না?
শূন্য দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। দেখল, কিশোরের নজর ডেস্ক ক্যালেন্ডারের দিকে। ভুল করলে। আট নয়, ছয় দিন আগে, হাসল সহকারী গোয়েন্দা।
আট দিন, জোর দিয়ে বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
ভুল, ডনের ডেস্কের সামনে গিয়ে দাঁড়াল মুসা। ক্যালেন্ডার উল্টে যে পাতাটা নেই সেখানটায় এসে থামল। ছয়দিন। গত শুক্রবার। আমি শিওর… আরে, পাতাটা কোথায়?
নেই, এমন ভঙ্গিতে বলল ডন, যেন জানাই আছে নেই যে। মুদী দোকান থেকে আনা জিনিসের লিস্ট লিখে রাখি ক্যালেন্ডারে। মাঝে মাঝে পাতা ছিড়ে সাথে করে নিয়ে যাই।
ঠিক আছে, যা দেখার দেখলাম, কিশোর বলল। চলি। বাড়ি গিয়ে কাপড় বদলানো দরকার।
হাসি চাপতে গিয়ে কেশে ফেলল মুসা। নিশ্চয় কিশোরের কাপড়ে ছড়িয়ে পড়েছে রস, আঠা লাগছে চামড়ায়, ভীষণ অস্বস্তিকর। রসের রঙ এখন বাইরে থেকে দেখা না গেলেই হয়। পকেটের উঁচু জায়গাটা চেপে ধরে রেখেছে কিশোর।
বেরিয়ে এল দুজনে। প্রথমেই ময়লা ফেলার যে ড্রামটা পেল তাতে ফেলে দিল ড্রিপিং চিকেন। তারপর বাড়ি রওনা হলো।
সেই বিকেলে ছয় বাক্স চীনা খাবার নিয়ে আসা হলো। চীনের দেয়ালের মতই যেন সাজিয়ে রাখা হলো কিশোরের ওয়ার্কশপে বাক্সগুলো। তিন গোয়েন্দাই হাজির। চিকেন লারসেনের অফিসে গিয়ে কি কি করে এসেছে রবিনকে বলছে মুসা, মাঝে মাঝে কথা জুগিয়ে দিচ্ছে কিশোর।
তারপর চলল খাবারে বিষ মেশানো নিয়ে আলোচনা।
ড্রিপিং চিকেনে বিষ মেশানোর উদ্দেশ্যটা মোটামুটি আঁচ করা যায়, রবিন বলল। তার পরেও চারটে প্রশ্ন থেকে যায়। কে মেশাল, কোথায় মেশাল, কখন মেশাল, কেন মেশাল? আরেকটা সম্ভাবনাও থেকেই যায়। হেনরি অগাসটাস এতে জড়িত এবং খারাপ কিছু করছে।
জুনের ব্রিফকেসটা পেলে হত, কিশোর বলল। কিছু না কিছু পাওয়া যেতই ওতে।
গত শুক্রবারে জুনকে কেউ দেখেছে বলেও বলল না, মুসা বলল। একজন বুড়ো লোক বাদে। তবে তার কথাও বিশ্বাস করা যায় না। কথাবার্তা কেমন অগোছাল। ভুল করে একদিনের কথা আরেকদিন বলে দিয়েছে কিনা তাই বা কে জানে।
এই খাবার এনেছ কেন? আচমকা প্রশ্ন করল রবিন। কেন, খেতে ইচ্ছে করে না বুঝি? প্রশ্নের জবাব প্রশ্ন দিয়েই সারল মুসা। কোন রেস্টুরেন্ট থেকে? যেটা থেকে সব সময় আনি। ডেই ডং। তাহলে আর বসে আছি কেন? খেয়ে ফেলি।
একটা বাক্স টেনে নিয়ে খুলল। খুলে একটা প্যাকেট হাতে নিয়েই স্থির হয়ে গেল। কি ব্যাপার? কি হয়েছে? জানতে চাইল মুসা। ফরচুন কুকির বিজ্ঞাপন করেছে নাকি বড় বড় কথা বলে?
মোড়কের কাগজটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রবিন। নীরবে বাড়িয়ে দিল মুসার দিকে। হাতে লেখা একটা নোট। দেখার জন্যে কিশোরও বুকে এল। লেখা রয়েছেঃ
এইমাত্র যে খাবার খেলে, তাতে বিষ মেশানো থাকতে পারত। এবার নেই। পরের বার থাকতেও পারে। কাজেই সাবধান! অন্তত চিকেন কিঙের খাবার থেকে দূরে থাকবে!
৮
পড়ার পরেও অনেকক্ষণ কেউ কথা বলল না। তাকিয়েই রয়েছে কাগজটার দিকে। তারপর হঠাৎ নড়ে উঠল কিশোর। প্রায় খাবলা দিয়ে তুলে নিয়েছে বাক্সের বাকি দুটো ফরচুন কুকি। দুটোর মোড়কেই একই হুঁশিয়ারি লেখা রয়েছে।
চিংড়ি মেশানো ফ্রাইড রাইসের বাক্সটা টেনে নিয়েছিল রবিন, এই হুঁশিয়ারি পড়ার পর ঠেলে সরিয়ে দিল টেবিলের কোণে। খিদে গেছে! বিষ খেয়ে মরার চেয়ে না খেয়ে থাকা ভাল!
টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াল মুসা।
কাকে করবে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ডেই ডং রেস্টুরেন্ট। কার কাজ জানা দরকার।
করা উচিত, রবিন বলল।
না, নিষেধ করল কিশোর। দরকার নেই।
কেন? মুসার প্রশ্ন।
কারণ আমি জানি কি ঘটেছে।
কী?
চুপ করে আছ কেন? অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল রবিন।
রেস্টুরেন্টের কোন একজন ওয়েইটার ওই কাগজ দিয়ে কুকি মুড়ে দিয়েছে। এবং সেটা করেছে, কেউ একজন এসে তাকে পাঁচটা ডলার হাতে গুঁজে দিয়ে করতে বলেছে বলে। ওয়েইটারকে বলেছে, এটা একটা রসিকতা। ওয়েইটারও কিছু বুঝতে পারেনি। করে দিয়েছে কাজটা।
তুমি কি করে জানলে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
জানি, ব্যস। বিশ্বাস করতে পারো আমার কথা।
নিশ্চয় করি… রবিন শুরু করল।
মুসা শেষ করল, কারণ তোমার অনুমান সাধারণত ভুল হয় না। আরও একটা ব্যাপার জানি, কথা লুকাতে তুমি ওস্তাদ।
বেশ, দোষই যখন দিলে, বলেই ফেলি, কিশোর বলল। আমি জানলাম, অর্থাৎ বুঝতে পারলাম, তার কারণ এ রকম রসিকতা আমিও করেছি। ফরচুন কুকিতে।
কি লিখেছিলে? রবিন জিজ্ঞেস করল।
ভাল কথাই লিখেছিলাম। লোককে হাসানোর জন্যে। এটার মত হুশিয়ারি নয়। বিষ খাওয়ানোর ভয় দেখাইনি লোককে। একটা মুহূর্ত নীরব হয়ে রইল কিশোর। ভাবছি, এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সাবধান করা হলো আমাদেরকে। প্রথমবার করল মুসার গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে দিয়ে। আর এবার তো লিখেই হুমকি দিল। প্রথমে মনে করেছিলাম, ব্রেক নষ্ট করার ব্যাপারটার সঙ্গে খাবারে বিষ মেশানোর যোগাযোগ নেই। এখন মনে হচ্ছে, আছে। অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছে, বিশ্বাস না করে আর পারা যাচ্ছে না। আরও সতর্ক থাকতে হবে। নজর রাখা হচ্ছে আমাদের ওপর।