কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল ফারিহা।
অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, ডাক্তার জানালেন। কাউন্টিলাইন ড্রাইভে। ও কিছু না। এ রকম রাতে অ্যাক্সিডেন্ট করবেই। দিনের বেলাতেই করে বসে, যে ভাবে বেপরোয়া চালায় আজ কালকার…
ডাক্তারের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবার দরজায় উঁকি দিল লাল চুলওয়ালা সেই নার্স। কিশোর আর মুসার দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠল, যাওনি এখনও! বললাম না ভিজিটিং আওয়ার শেষ।
শুনেছি তো, বিরক্ত হয়েই বলল মুসা।
তাহলে যাচ্ছ না কেন? দারোয়ানকে খবর দেব?
ফারিহার দিকে তাকাল মুসা। চলি, ফারিহা। কাল আবার আসব। রাতে ইচ্ছে করলে ফোন কোরো। কিশোরদের বাড়িতেই থাকছি আজ।
নার্সের দিকেও নজর নেই কিশোরের, মুসা আর ফারিহার দিকেও না। সে তাকিয়ে রয়েছে নতুন রোগীর দিকে।
অ্যাই, এসো, ডাকল মুসা। কি দেখছ?
চার্টে নাম লিখে গেছেন ডাক্তার। জুন লারসেন। কে ও?
আমি কি জানি? চলো। ওই নার্সটা যদি এসে দেখে এখনও যাইনি…
চলো।
মেয়েটা কে মিনিটখানেক পরেই জেনে গেল দুজনে। এলিভেটরের দিকে চলেছে। এই সময় বিশালদেহী একজন মানুষ হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন ওটার ভেতর থেকে। ছুটে গেলেন নার্সরা যেখানে বসে সেদিকে। সোজা গিয়ে দাঁড়ালেন লাল চুলওয়ালা নার্সের ডেস্কের সামনে। মাথা ঝুঁকিয়ে প্রায় মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মেয়ে কোথায়? কোন ঘরে?
আরে এ তো হার্বার্ট লারসেন! চিনে ফেলেছে কিশোর। চিকেন!
হ্যাঁ, মুসাও চিনতে পেরেছে। দি চিকেন কিং! মুরগীর রাজা!
লাল, সাদা, নীল রঙের বিচিত্র সমাহার পোশাকে। বেশির ভাগ সময়েই যা পরে থাকেন সেই জগিং স্যুট। এই পোশাকে টিভিতেও দর্শকদের দেখা দিয়েছেন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় সবাই চেনে তাঁকে। হাজার হাজার বার দেখেছে। টিভির পর্দায়। যে কোন চ্যানেল খুললেই কোন না কোন সময় চোখে পড়বেই বিজ্ঞাপনটা। ওখান থেকেই তাঁর ডাক নাম হয়ে গেছে চিকেন। আগের দি এবং পরের কিংটা বাদ দিয়ে দিয়েছে লোকে।
জুন লারসেন-হার্বার্ট লারসেন, বিড়বিড় করছে কিশোর। জুন নিশ্চয়ই লারসেনের মেয়ে।
রুম ওয়ান ওয়ান ওয়ান ওয়ান, মিস্টার লারসেন, নার্স বলল।
ওটা কি লাকি রুম? লারসেন বললেন, আমি চাই, আমার মেয়ে লাকি রুমে থাকুক। যেটাতে কোন রোগী মারা যায়নি। কোথায় ওটা? কোন দিকে? কোন ঘরটা?
ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ভদ্রলোক। তার জন্যে খারাপই লাগল কিশোরের। এগিয়ে গেল নার্সের ডেস্কের কাছে। মিস্টার লারসেন, ওই যে ওই ঘরটা।
লারসেন যেমন লম্বা তেমনি চওড়া। কিশোরকে ক্ষুদ্রই মনে হলো তার কাছে, যদিও সে-ও কম লম্বা নয়। ভুরু কুঁচকে তাকালেন কিশোরের দিকে, তুমি শিওর?
হ্যাঁ, এই মাত্র দেখে এলাম। ওঘরে আমাদের এক বন্ধুও আছে। জুন এখন ঘুমিয়ে।
কিছুটা যেন স্বস্তি পেলেন চিকেন কিং। সোয়েটশার্টের পকেট থেকে দুটো কুপন বের করে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, নাও। দুটো টিকেট। আমার দোকানে গেলে ফ্রী খেতে পারবে চিকেন। আমার নিজের তৈরি সোনালি সসে চুবিয়ে। খেলে ভুলবে না।
নিতে দ্বিধা করছে কিশোর।
আরে নাও নাও, তাড়া আছে আমার, জোর করে কুপন দুটো কিশোরের হাতে গুঁজে দিলেন লারসেন। তোমরা ভাল সংবাদ দিয়েছ। সেজন্যেই দিলাম। আমি তো ভেবেছিলাম মরেই গেছে! থ্যাঙ্ক ইউ।
বিশাল শরীর নিয়ে বেশ দ্রুতই মেয়ের ঘরের দিকে ছুটলেন লারসেন। সেদিকে তাকিয়ে থেকে কুপনগুলো একটানে ছিড়ে ফেলল কিশোর। বাধা দিতে গেল মুসা। কিন্তু দেরি করে ফেলেছে। হায় হায়, এ কি করলে!
গত হপ্তায় ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম, মনে নেই? পেটের অসুখের জন্যে? ভাজাভুজি খেতে মানা করে দিয়েছেন।
সে তো তোমাকে দিয়েছেন। আমাকে নয়।
এখানে আমার তোমার বলে কোন কথা নেই। পেটের জন্যে যেটা খারাপ, সবার জন্যেই খারাপ।
যুক্তি খুঁজে না পেয়ে চুপ হয়ে গেল, মুসা। তবে এত ভাল একটা খাবার এভাবে নষ্ট করা হলো বলে মনে মনে রেগেই গেল কিশোরের ওপর।
আবার বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠল দুজনে। স্যালভিজ ইয়ার্ডে রওনা হলো।
অ্যাক্সিডেন্টটা কি করে ঘটল জানতে পারলে হত, কিশোর বলল।
কিছু বলল না মুসা। একমনে গাড়ি চালাচ্ছে। কিশোরের মনে কিসের খেলা চলছে ভাল করেই বুঝতে পারছে সে। পেয়ে গেছে রহস্য।
ইয়ার্ডে ঢুকল গাড়ি। সোজা এসে ওয়ার্কশপে ঢুকল দুজনে। ট্রেলারের ভেতরে তো পুরানো হেডকোয়ার্টার আছেই, ওয়ার্কশপটাকেও এখন আরেকটা হেডকোয়ার্টার বলা যায়। নানা রকম আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সাজিয়েছে কিশোর। এককোণে একটা ডেস্কের ওপর রাখা একটা অ্যানারিং মেশিন। ঢুকেই আগে ওটার কাছে এগিয়ে গেল সে। বোতাম টিপতেই মেসেজ টেপে শোনা গেল রবিনের পরিচিত হাসি হাসি কণ্ঠ, ফারিহাকে দেখতে যেতে পারলাম না। সরি। বস চলে গেছে শহরের বাইরে। নতুন আরেকটা ব্যান্ড চেক করতে গিয়েছিলাম। অফিসে ফিরে হাসপাতালে যাব ভাবছি, এই সময় ফোন করল এমিলি। ও আজকে দাওয়াত করেছিল, পার্টিতে, ভুলেই গিয়েছিলাম। এমন চাপাচাপি শুরু করল, না গিয়ে আর পারলাম না। জানোই তো ওর অবস্থা। ওকে কি করে ঠেকানো যায়, বলো তো কিশোর? তোমার কম্পিউটারকে জিজ্ঞেস করে দেখ, কোন একটা পরামর্শ দিতে পারে কিনা, আচ্ছা, কাল দেখা হবে।