ও কিছু না।
আরও কিছু জিনিস মেশানো হয়, লারসেন বললেন। যেগুলো বললেও বুঝবে না। কাজেই, থাক।
আমার আর শোনারও দরকার নেই, জিভে পানি এসে গেছে মুসার।
আমার এই নতুন খাবারে বিশেষ একটা জিনিস মেশানো থাকবে, প্রতিটি বড়ার মধ্যে, লারসেন বললেন। লোকে মজা করে খাবে। তারপরই খাবে ধাক্কা। বুঝতেই পারবে না কিসে আঘাত করল ওদেরকে।
খাওয়া লাগল না, কথাটা শুনেই ধাক্কা খেলো দুই গোয়েন্দা। ভীষণ চমকে গেল। ঠান্ডা শিহরণ বয়ে গেল মেরুদন্ড বেয়ে। পরস্পরের দিকে তাকাল। এক মুহূর্ত আগেও ড্রিপিং চিকেন খাওয়ার জন্যে লোভ ছিল দুজনের। এমনকি কিশোরও ভাবছিল, পেট এখন ভাল হয়ে গেছে, খানিকটা খাবার চেখে দেখবেই। লারসেনের কথা শোনার পর ইচ্ছেটা উবে গেছে। লোকে কেন ধাক্কা খাবে? কেন বুঝতে পারবে না… কিসে আঘাত করেছে ওদেরকে? আর খাওয়ার মধ্যে আঘাতের কথা আসে কেন? ড্রিপিং চিকেনে বিষ মেশানো হবে না তো?
খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। নতুন একটা খাবার আবিষ্কার করেছেন লারসেন। তার পরপরই ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখল জুন। কাকতালীয় হতে পারে…কিন্তু কিশোরের মনে হতে লাগল, এই খাবারটাই জুনের আতঙ্কের কারণ। কোথাও একটা যোগাযোগ আছে। কানের পর্দায় যেন ভাসতে লাগল কিশোরেরঃ মুরগীতে বিষ মেশাচ্ছে সে! লাখ লাখ লোক মারা যাবে!
রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল ডন, খুব সুন্দর হয়েছে! আর বেশ গরম!
এসো, দুই গোয়েন্দাকে বললেন লারসেন। আমার গিনিপিগ বানাতে চাই তোমাদেরকে। তোমরাই প্রথম চেখে দেখো, কেমন হলো ড্রিপিং চিকেন।
৭
চোখে অনেক আশা নিয়ে কিশোর আর মুসার দিকে তাকালেন লারসেন। যেন বোঝার চেষ্টা করছেন, ওদেরকে যে সম্মানটা দেয়া হচ্ছে সেটা ওরা বুঝতে পারছে কিনা।
ঘড়ি দেখল মুসা। লাঞ্চটাইম তো হয়নি এখনও।
ডাক্তার বলেছেন, কিশোর বলল। কোন রকম রিচ ফুড না খেতে। ভাজাভুজি তো একেবারে বারণ। পেটের অবস্থা ভাল না আমার।
ওই ডাক্তার ব্যাটাদের কথা শুনো না! প্রায় গর্জে উঠলেন লারসেন। ওরা তো কত কথাই বলে। সব শুনলে না খেয়ে উপোষ করে মরতে হবে রোগীকে। এসো। এখনও গরম গরম রয়েছে ড্রিপিং চিকেন। এই সুযোগ হারালে পরে পস্তাবে… বুঝতে পারছ না, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তোমাদেরকে। কোথায় পাঠানো হবে।
ঠিকই পারছি! নরকে! ভাবল মুসা।
তর্ক করে লাভ হবে না। সন্দেহ না জাগিয়ে লারসেনকে কোন কিছু বলেই নিরস্ত করা যাবে না এখন। কি আর করে? ধীরে ধীরে তার সঙ্গে এগোল দুজনে।
একটা ট্রে হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল ডন। দুই গোয়েন্দাকে ইশারা করল তার অফিসের দিকে যেতে। সে এগোল সেদিকে। লারসেন গেলেন না। ডনকে বললেন, ট্রেটা রেখেই যাতে চলে আসে। কাজ আছে।
ডনের অফিসে ঢুকল কিশোর আর মুসা। স্টেইনলেস স্টীল আর কাচের তৈরি সুদৃশ্য আধুনিক টেবিলে ট্রে নামিয়ে রেখে বেরিয়ে গেল ডন। স্যান্ডউইচের মত দেখতে চমক্কার খাবার। গরম। ধোয়া উড়ছে। দেখতে তো খুবই ভাল, কিশোর বলল।
পাগল হয়ে গেলে নাকি? মুসা বলল, ওগুলো বিষাক্ত! খাওয়া একদম উচিত হবে না। এক কাজ করি, পকেটে ভরে ফেলি।
নিজের প্যান্টের দিকে তাকাল কিশোর। আঁটো জিনস। পকেটে ঢোকানো যাবে না, আর জোরজার করে কোনমতে ঢোকালেও উঁচু হয়ে থাকবে। স্পষ্ট বোঝা যাবে। মাথা নাড়ল, হবে না।
তাহলে? ওয়েস্টবাস্কেটেও তো ফেলতে পারব না। দেখে ফেলবে।
উঁচু হয়ে থাকলেও পকেটেই ঢোকাতে হবে। আর কোন উপায় নেই। আমি পরেছি জগিং স্যুট, পকেটই নেই।
কাউচের নিচে ফেলে দিলে কেমন হয়?
তাতেও লাভ হবে না। যে হারে গন্ধ বেরোচ্ছে, ওরা গন্ধ পেয়ে যাবে। বের করে ফেলবে। পকেটেই রাখতে হবে। ঢোকাও। জলদি!
আর কোন উপায় না দেখে পকেটেই ঢোকাতে বাধ্য হলো কিশোর। আঠাল ঝোলের মত জিনিস পকেটের কাপড় ভেদ করে পা বেয়ে গড়িয়ে নামতে শুরু করল। আমি দরজায় চোখ রাখছি, মুসা বলল। তুমি খোঁজ। দেখো, কিছু বেরোয় কিনা।
খুঁজতে লাগল কিশোর। জুনের ব্রিফকেসটা। ডেস্কের পেছনে, নিচে, ড্রয়ারে, কোথাও পাওয়া গেল না। ফাইল কেবিনেটে তালা দেয়া। ওর ভেতরে দেখা গেল না।
ব্রিফকেস খোঁজা বাদ দিয়ে অন্য সূত্র মেলে কিনা দেখতে শুরু করল সে। ডনের ডেঙ্ক ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টাতে গিয়ে দেখল একটা পাতা নেই, ছয় দিন আগের তারিখের।
মুসা শুনে বলল, সেদিন শুক্রবার। জুন যে দিনের কথা মনে করতে পারছে, যে দিন অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।
হ্যাঁ, মাথা ঝাকাল কিশোর। যোগাযোগ আছে কিনা বের করা দরকার, এই সময় পায়ের শব্দ শুনতে পেল। এগিয়ে আসছে।
ঠোঁটে আঙুল রেখে কিশোরকে চুপ করতে ইশারা করল মুসা।
একটু পরেই ঘরে ঢুকল ডন। প্রথমেই তাকাল ট্রের দিকে। শূন্য। বেশ বেশ, খেয়েছ তাহলে? কেমন লাগল আমাদের ড্রিপিং চিকেন?
ওই জিনিস জীবনে খাইনি, সত্যি কথাটাই বলল কিশোর।
আমাদের জেনারেল শুনে খুব খুশি হবেন, লারসেনের কথা বলল ডন। একটা জরুরী কাজে চলে গেছেন। তোমাদেরকে বলতে বলেছেন। ড্রিপিং চিকেন কার আবিষ্কার? আপনার?
না, মাথা নাড়ল ডন। ডেস্কের ওপাশে গিয়ে বসল। এই একটা আইটেমের জন্যে বাইরে গিয়েছিলেন জেনারেল। যেতে অনেক মানা করেছিলাম, শুনলেন না। বলেছি, চেষ্টা করলে এখানেই বানাতে পারব আমরা। সোজা আমাকে বলে দিলেন, তিনি বস, যা করার তিনিই করবেন। গেলেন ফেলিক্স আরোলার কাছে, মিরাকল টেস্টের মালিক। অথচ আমরা দুজনে, চিকেন কিং আর কেমিক্যাল কিং মিলেই বানিয়ে ফেলতে পারতাম।