নোরা অরলিজ, মহিলা নিজের নাম বলল।
ভালই হলো দেখা হয়েছে, লোকটা বলল।
যতই শুনছে ততই নিশ্চিত হচ্ছে কিশোর, এই কণ্ঠ সে শুনেছে। চিনতে পারছে।
কথায় কথায় নোরা জিজ্ঞেস করল, লোকটা কি করে।
মার্কেট রিসার্চ। কিছু বিশেষ খাবার চালানোর চেষ্টা করছি। খেয়ে দেখবেন? দেব? খুব ভাল লাগবে।
দিন। এতই যখন বলছেন। কাগজে মোড়ানো ছোট একটা ক্যান্ডি বের করে দিল আরোলা। ভাল করে দেখার জন্যে উঠে দাঁড়াল কিশোর।
অদ্ভুত নাম! মিরাকল টেস্ট! মোড়কে লেখা নাম পড়ে বলল মহিলা।
আমাদের কোম্পানির নতুন আবিষ্কার, আরোলা বলল হেসে।
মোড়ক খুলল নোরা। চকলেট রঙের একটুকরো মিষ্টি খাবার। তাতে মাখন মেশানো। দেখতে পাচ্ছে কিশোর।
কিন্তু ক্যান্ডি যে আমি খাই না? নোরা বলল।
ভয় নেই, অভয় দিয়ে বলল আরোলা। এতে ক্যালোরি বাড়বে না। জিরো ক্যালোরি। ওই যে মিরাকল কথাটা লেখা আছে না, খামোকা নয়। খেয়েই দেখুন।
মহিলার হাত ধরে প্রায় জোর করে ক্যান্ডিটা তার মুখে ঠেলে দিল আরোলা। খান। বুঝবেন, না খেলে কি স্বাদ মিস করতেন।
অবশেষে কামড় দিয়ে ছোট একটুকরো ভেঙে মুখে পুরল নোরা। বাহ! দারুণ তো!
খাবার লোভে নয়, কি এমন মজা সেটা বোঝার জন্যে জিভ প্রায় বেরিয়ে পড়ল কিশোরের। রহস্যময় লাগছে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করল আরোলা। একটা বিজনেস কার্ড আর একটা ক্যান্ডি কিশোরের হাতেও গুঁজে দিল সে।
মোড়ক খুলে মুখে পুরে দিল কিশোর। মসৃণ, মাখন মাখন এক ধরনের স্বাদ।
কেমন লাগছে? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল লোকটা।
তিন ধরনের স্বাদ একসঙ্গে, জবাব দিল কিশোর। চকলেট, মার্শম্যালো আর মিন্ট। সত্যিই ক্যালোরি নেই? কি করে সম্ভব?
সম্ভব। ফ্লেভারটাই আসল। মিরাকল টেস্ট কি আর সাধে বলা হয়েছে। ক্যালোরি ছাড়া ক্যান্ডি, সাংঘাতিক আবিষ্কার, কি বলো?
বড় বড় হয়ে গেছে কিশোরের চোখ। সত্যিই চমৎকার স্বাদ। তারপর বলছে ক্যালোরি ফ্রী। কি করে সম্ভব? এতই আগ্রহী হয়েছে সে, আরোলার কণ্ঠস্বরের কথাই ভুলে গেল ক্ষণিকের জন্যে।
ওর কোন সন্দেহ নেই, এই লোকই ফোন করেছিল হাসপাতালে। নার্সকে বিরক্ত করেছিল। বার বার জুনের খবর জানতে চেয়েছিল।
তোমার কার্ড নেই নিশ্চয়? কিশোরকে জিজ্ঞেস করল আরোলা। সমঝদার খানেওয়ালা তুমি, বুঝতে পারছি। তোমাকে টেস্ট করিয়ে ভাল করেছি। নাম ঠিকানা জানা থাকলে ভাল হত।
হেসে উঠল মহিলা। ওর আর কি কার্ড থাকবে? টিনএজার। হাই স্কুলে পড়ে বোধহয়। ব্যবসা-ট্যবসা কি আর করে?
কে বলেছে কার্ড নেই?—কথাটা প্রায় মুখে এসে গিয়েছিল কিশোরের। সামলে নিল সময়মত। আর যাকেই দিক, এই মুহূর্তে ফেলিক্স আরোলাকে তিন গোয়েন্দার কার্ড দেয়ার কোন ইচ্ছে তার নেই। সতর্ক হয়ে গেলে লোকটা তার কোন প্রশ্নেরই জবাব দেবে না। অনেকগুলো প্রশ্ন করার ইচ্ছে আছে কিশোরের। এই যেমন, কেন হাসপাতালে ফোন করেছিল? কেন রহস্যময় আচরণ করেছে ফোনে? জুন আর লারসেনের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক?
এই সময় সেখানে এসে হাজির জুন। আরোলার হাত ধরল। আরেকটা ক্যান্ডি দিন। এত ভাল ভাবিইনি। একটার পর একটা যে খেতে চাইব, একথা কিন্তু একবারও বলেননি।
তাকে আরেকটা ক্যান্ডি দিল আরোলা। কিশোরকে দেখিয়ে বলল, ওরও ভাল লেগেছে। ও খুব সমঝদার, বুঝে গেছি…
থামুন থামুন, তাড়াতাড়ি হাত তুলল জুন। ওকে আপাতত পাবেন না। কাজে লাগাতে চান তো? হবে না। কারণ এখন ওকে আমি দখল করেছি। ওকে আর ওর দুই বন্ধুকে। ওরা তিন গোয়েন্দা। আমাকে সাহায্য করছে। অ্যাক্সিডেন্টের দিন কি কি ঘটেছিল আমার, বের করার চেষ্টা করছে।
ভেতরে ভেতরে চমকে গেলেও মুখটাকে স্বাভাবিক রাখল কিশোর। তার পরিচয় ফাঁস করে দিয়ে মস্ত ক্ষতি করেছে জুন। তাই নাকি? কিশোরের দিকে তাকিয়ে চোখ সরু সরু হয়ে এল আরোলার। তোমাকে দেখে কিন্তু কিছুই মনে হয়নি।
মুসা আর রবিনকে এখন দরকার। জলদি। কোন ধরনের একটা সূত্র পেতে যাচ্ছে কিশোর, সেটা কি, এখনও বুঝতে পারছে না অবশ্য।
উঠে দাঁড়াল কিশোর। আবোলাকে এক্সকিউজ মি বলে রওনা হলো ভিড়ের ভেতর দিয়ে, দুই সহকারীর খোঁজে। মুরগী পুলের ঠোঁটের কাছে জটলা করছে কিছু লোক, তার মাঝখানে যেন কিং হয়েই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন চিকেন কিং লারসেন। সবার মাথার ওপর দিয়ে চোখে পড়ছে তার মাথা। পড়বেই। সাড়ে হয় ফুট লম্বা মানুষ খুব কমই আছে। চট করে চোখে পড়ার আরেকটা কারণ তার পোশাক। উজ্জ্বল কমলা রঙের জগিং স্যুট, বুকের কাছে এমব্রয়ডারি করে আঁকা রয়েছে একটা মুরগী।
বললাম তো জানি না, প্রায় চিৎকার করে কথা বলছেন লারসেন। ছাড়া পেলেই কেন যে রাস্তা পেরিয়ে আরেক দিকে দৌড় দিতে চায় মুরগীরা, এ রহস্য আমিও ভেদ করতে পারিনি, তারপর হা হাহ হা করে জোরে জোরে হাসলেন তিনি। কি মজা পেল শ্রোতারা ওরাই জানে, হো হো করে হাসতে লাগল।
মিস্টার চিকেন, একজন বলল। আচ্ছা বলুন তো, মাখন মাখানো মুরগীর মাংসের কেক নিয়ে কবে গোলমালটা হয়েছিল?
উনিশশো ছিয়াশিতে, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন লারসেন। ওরকম খাবার সহ্য করতে পারছিল না আসলে লোকে, বেশি রিচ…
ছিয়াশি নয়, পঁচাশি, ফস করে বলে বসল কিশোর। জবাবটা মুখে এসে গেছে, না বলে পারল না। আপনার ভুল হয়েছে, স্যার।