রেগে গেছে মারগারেট। চেহারা দেখেই অনুমান করা যায়। ওপাশের কথা শুনতে শুনতে আরও রেগে গেল, ডাক্তারকেই জিজ্ঞেস করুন। ধরুন। খটাস করে রিসিভারটা টেবিলে নামিয়ে রেখে ঝটকা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। গটমট করে হেঁটে রওনা হলো।
জুন কেমন আছে, এবার জিজ্ঞেস করছে কেন? দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল কিশোর।
কারণ, বেশি উদ্বিগ্ন, জবাব দিল মুসা।
উদ্বেগটা কি জুনের অসুখের কারণে? না সে মুখ খুলেছে কিনা জানার জন্যে? কেশে গলা পরিষ্কার করল কিশোর। মিস্টার এক্সও হতে পারে।
এক কাজ করো না, পরামর্শ দিল রবিন। গলার স্বর তো নকল করতেই পার। কথা বলো ওর সঙ্গে। লোকটার কণ্ঠস্বর চিনে রাখো। ডাক্তার হয়ে যাও।
ঠিক বলেছ। দুই লাফে টেবিলের কাছে গিয়ে রিসিভার তুলে নিল সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল নার্স আসছে কিনা। তারপর রিসিভার কানে ঠেকিয়ে বলল, হ্যালো, ডক্টর পাশা বলছি। হঠাৎ করেই যেন অনেক বেড়ে গেছে তার বয়েস, ভারি হয়ে গেছে কণ্ঠস্বর, কারও বাবারও বোঝার সাধ্যি নেই, তার বয়েস চল্লিশের কম।
কই, এ নাম তো শুনিনি? ওপাশ থেকে জবাব এল। মসৃণ কণ্ঠ। মাঝবয়েসী একজন মানুষ। দ্রুত কথা বলে। এ হাসপাতালে ওই নামের ডাক্তার আছে?
তাহলে আমি এলাম কোথেকে? নতুন এসেছি। আপনি জুন লারসেনের খোঁজ নিতে চাইছিলেন তো মিস্টার…
কিশোর আশা করেছে, নামটা বলবে লোকটা। বলল না। জিজ্ঞেস করল, ও কেমন আছে?
ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছাড়া এ খবর কাউকে জানানো নিষেধ। আপনি ওর কে হন?
এক মুহূর্ত দ্বিধা করে জবাব দিল লোকটা, আমি ওদের পারিবারিক বন্ধু।
ঘনিষ্ঠ?
দেখুন, এত প্রশ্ন করছেন কেন? আমি একটা সহজ কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, জুন কেমন আছে?
হুঁশ ফিরেছে। বিপদ কেটেছে।
ও, লোকটা খুশি হয়েছে না শঙ্কিত হয়েছে বোঝা গেল না ঠিকমত। তবে উদ্বিগ্ন হয়েছে বলে মনে হলো কিশোরের। জিজ্ঞেস করল, কিছু বলতে হবে জুনকে? কি নাম বলব?
না, কিছু বলতে হবে না, ডক্টর। থ্যাঙ্ক ইউ, লাইন কেটে গেল ওপাশ থেকে।
কি বলল? কিশোরকে চুপ হয়ে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করল মুসা।
তেমন কিছুই বলল না, আস্তে করে রিসিভারটা ডেস্কে রেখে দিল আবার কিশোর।
তরুণ একজন ডাক্তারকে নিয়ে ফিরে এল নার্স। রিসিভার কানে ঠেকিয়েই মুখ বিকৃত করে ফেলল। রেখে দিয়েছে! লোকটার মাথা খারাপ!
দুই সহকারীকে নিয়ে সরে এল কিশোর। নিচু গলায় বলল, নাহ, রহস্য একটা আছে, মানতেই হচ্ছে। কিছু একটা ঘটছে! কি, সেটাই বুঝতে পারছি না!
তার মানে কেসটা ছাড়ছ না? হেসে বলল রবিন। আরেকটু হলেই হতাশ করেছিলে আমাকে। কোন রহস্যের সমাধান না করে ছেড়ে দেবে কিশোর পাশা, ভাবাই যায় না।
ছাড়ব একবারও বলিনি। মনে হয়েছিল, কোন রহস্য নেই। এখন ভাবছি, ভয়ানক কোন বিপদ ঝুলছে জুনের মাথার ওপর। সেটা জানতে হবে যে, ভাবেই হোক। ওর কাছাকাছি থাকতে হবে আমাদের।
তবে থাকাটা সম্ভব হলো না। তিনজনেরই কিছু না কিছু কাজ আছে। বসে থাকে না ওরা কেউই। মুসা আবার গাড়ির ব্যবসা শুরু করেছে। তবে গাড়ি বেচাকেনার চেয়ে মেরামতের দিকেই নজর দিয়েছে বেশি। নিক ওকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে ইঞ্জিনের ব্যাপারে (গাড়ির জাদুকর দ্রষ্টব্য)। ওর পাশের বাড়ির ভদ্রলোকের করভেট গাড়িটার ইগনিশন নাকি ঠিকমত কাজ করছে না, মেরামত করে দেবে কথা দিয়েছে সে। বিনিময়ে অবশ্যই পারিশ্রমিক নেবে।
রবিনকে যেতে হবে ট্যালেন্ট এজেন্সিতে। একটা ক্লাব একটা রক ব্যান্ড চেয়ে পাঠিয়েছে। সেটা পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আর কিশোর কথা দিয়েছে মেরিচাচীকে, পাশের বাড়ির মিসেস ব্যালানটাইনকে বাগানের ঘাস কাটায় সাহায্য করবে। মিসেস ব্যালানটাইন মেরিচাচীর বান্ধবী। কিশোর আগ্রহী হয়েছে অবশ্য অন্য কারণে। ওই মহিলারও পেটের চিরকালীন অসুখ আছে। কি কি খেলে ভাল থাকেন, বলতে পারবেন কিশোরকে।
কাজেই সেদিন আর জুনের কাছে থাকা হলো না কারোরই।
পরদিন সকালে হাসপাতালে মুসার সঙ্গে দেখা হলো কিশোরের। আগেই এসে বসে আছে মুসা। কারণ, ফারিহাকে সেদিন ছেড়ে দেয়ার কথা। আর জুনের বাবা বলেছেন, মেয়েকে এসে নিয়ে যাবেন সেদিনই।
হাসপাতাল ছাড়তে নারাজ ফারিহা। কারণ, জুনের প্রলাপ রহস্য ভেদ করার প্রবল আগ্রহ। কিন্তু থেকেও লাভ নেই। জুন তো আর থাকছে না। তাছাড়া ভাল হয়ে গেলে হাসপাতালই বা ওদেরকে রাখবে কেন?
জুনের শরীর অনেক ভাল হয়েছে। তবে স্মৃতি ফিরে আসেনি। বিছানায় বালিশ ঠেস দিয়ে বসে বাবার আসার অপেক্ষা করছে সে। বকবক করছে, বাবাকে তো চিনি। আসবে সেই জগিং স্যুট পরেই। আজ হয়তো দেখা যাবে গরিলা সেজেই এসেছে। ওরকম রোমশ পোশাকও অনেক আছে তার। ব্যান্ড পার্টি না নিয়ে এলেই বাঁচি। সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি করা স্বভাব।
দশ মিনিট পর দরজায় দেখা দিলেন লারসেন। হাই, খুকি, চিনতে পারছ আমাকে? হেসে জিজ্ঞেস করলেন। বাদামী জগিং স্যুট পরেছেন। একটা প্লাস্টিকের তীর ঢুকিয়ে রেখেছেন চুলের মধ্যে। ওই লোকটাও পাগল, মনে হলো মুসার।
বাবা, জুন বলল। না চেনার কোন কারণ নেই। মাত্র চব্বিশটা ঘণ্টা মনে করতে পারছি না আমি। বিশ বছর নয়। নিশ্চয় চিনতে পারছি তোমাকে। যা আনতে বলেছিলাম এনেছ?
হাতে করে একটা ছোট সুটকেস নিয়ে এসেছেন লারসেন। মেয়ের সামনে এনে রাখলে সেটা। খুলল জুন। নীল সিল্কের একটা পাজামা বের করে তুলে ধরে বলল, এটা কি?