তাতে আমার কি লাভ হবে? হাত নাড়লো টিম। বাবা রয়েছে জেলে, আর তোমরা করতে চাইছে ঘড়ির তদন্ত…
কোনোখান থেকে শুরু করতে হবে তো? অনেকগুলো রহস্য জমা হয়েছে।– আমার বিশ্বাস, ঘড়িটার সঙ্গে ওগুলোর কোনো যোগাযোগ আছে।
বেশ, খুশি হতে পারছে না টিম, করো। কিন্তু কি করে বুঝবে ওটা কোত্থেকে এসেছে?
তলায় একটা কাগজ লাগানো ছিলো, মেসেজ। ড্রয়ার খুলে একটা গোপন কুঠুরি থেকে ছোট কাগজটা বের করলো কিশোর। জোরে জোরে পড়ে শোনালো টিমকে।
কাদের নাম? মুসার প্রশ্ন। কারা ওরা? কি করে খুঁজে বের করবো? আর যদি পাই-ই, কি কথা জিজ্ঞেস করবো ওদের?
দাঁড়াও। এক আঙুল তুললো কিশোর, একবারে একটা প্রশ্ন। মিলারের কাছে লেখা হয়েছে মেসেজটা। আগে তার ঠিকানা বের করা যাক।
কিভাবে?
ঠাণ্ডা মাথায় ভাবো। ভাবলেই বুঝতে পারবে। মিলার নিশ্চয় রোজারের বন্ধু, নইলে তার কাছে লিখতো না। হাত বাড়ালো কিশোর, টিম, অ্যাড্রেসবুক পেয়েছো?
না। অনেক খুঁজেছি। একটা লিস্ট পেয়েছি শুধু, ড্রয়ারে অনেক কাগজের মধ্যে গোঁজা। ওদেরকে ক্রিস্টমাস কার্ড পাঠিয়েছিলেন মিস্টার রোজার। এই যে।
ভাঁজ করা কাগজটা খুলে টেবিলে বিছিয়ে হাত দিয়ে ডলে সমান করলো কিশোর। গুড। মনে হচ্ছে এতেই চলবে। অনেক নাম-ঠিকানা আছে।
নাম আর ঠিকানাগুলো পরিষ্কার ভাবে টাইপ করা রয়েছে কাগজটায়। হেনরি মিলার একজনই পাওয়া গেল। জেনি রোবিডও একজন, উত্তর হলিউডের ঠিকানা। তবে বারকেন দুজন, একজন জেসিয়াস বারকেন, আরেকজন হিরাম বারকেন। দুজনেই প্যাসাডোনার কাছে থাকেন। জেলড়াও দুজন–জেলডা ডেনমার আর জেলডা ট্রিক্সটার। দুজন থাকেন দুই জায়গায়।
নামগুলোর পাশে টিক চিহ্ন দিলো কিশোর। বললো, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সবাই। দুদলে ভাগ হয়ে দেখা করতে যাবো আমরা। রবিন, তুমি টিমের সঙ্গে যাবে। মিলার আর মিস রোবিডকে খুঁজে বের করবে। একই দিকে থাকে দুজনে, সুবিধে হবে তোমাদের। রোলস রয়েসটা নিয়ে আমি আর মুসা যাবো অন্য দুজনকে খুঁজতে। ঠিক আছে?
কিন্তু দেখা হলে কি জিজ্ঞেস করবো?
মিলারকে জিজ্ঞেস করবে, মিস্টার ক্লক ঘড়িটা তার কাছে পাঠিয়েছিলেন কিনা? আর নিচে লাগানো মেসেজটা দেখেছেন কিনা। ঘড়িটা বরং নিয়ে যাও সাথে করে। দেখালে হয়তো সহজে চিনতে পারবেন উনি।
বেশ, নিলাম। আর মিস রোবিডকে?
তার কাছে রোজার কোনো মেসেজ পাঠিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করবে। বলবে, মেসেজটা তোমাকে জেনে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ক্লক। প্রয়োজন হলে ঘড়িটা মিস রোবিডকেও দেখাবে।
তা নাহয় দেখালাম। কিন্তু তুমি? তোমার ঘড়ি দরকার হবে না?
অবিকল এক রকম দেখতে আরেকটা ঘড়ি নিয়ে যাবো আমি। এমনও হতে পারে দেখানোর দরকারই হবে না। তবু, বলা যায় না। ওরকম ঘড়ি আরেকটা জোগাড় করে রেখেছি আমি।
এখুনি রওনা হবো?
তোমাদের গাড়ি আছে। চলে যেতে পারো। আমাদের বসতে হবে। হ্যানসন। গাড়ি নিয়ে এলে, তারপর…
কিশোর, হাত তুললো মুসা। একটা খুব জরুরী কথা ভুলে বসে আছে। এখুনি রওনা হতে পারি না আমরা।
কেন? অবাক হলো কিশোর।
কারণ, গম্ভীর হয়ে জবাব দিলো মুসা, এখন লাঞ্চের সময়।
.
০৯.
এখানেই কোথাও হবে, মোড়ে মোড়ে লাগানো রোড-নম্বরগুলো দেখছে রবিন। হ্যাঁ, ওই যে, মিস্টার মিলার ওই গলিতেই থাকেন।
পথের মোড়ে পুরনো সেডান গাড়িটা পার্ক করলো টিম। দুজনেই নামলো গাড়ি থেকে।
বাপরে, বিরাট বড়লোক, পাথর বসানো ড্রাইভওয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো টিম। বাড়ি দেখেছো কত বড়!
মাথা ঝাঁকালো রবিন। হাতে ব্যাগ। বেল বাজাতে গিয়ে অবাক হয়ে ভাবলো রবিন, এই বাড়ি থেকেই ঘড়িটা বেরিয়েছে?
দরজা খুলে দিলো এক মহিলা। ভুরু কুঁচকে তাকালো ওদের দিকে। মাঝবয়েসী, মনে হচ্ছে, কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে আছে। কি চাই? কড়া গলায় বললেন। চাঁদা? কবার দেবো?
না, ম্যাডাম, ভদ্র কণ্ঠে বললো রবিন, চাঁদা চাইতে আসিনি। মিস্টার মিলারের সঙ্গে দেখা করতে চাই, প্লীজ।
হবে না। উনি অসুস্থ। কয়েক মাস হলো হাসপাতালে রয়েছেন।
ওহ, সরি। তাই নাকি? দ্রুত ভাবছে রবিন। মিস্টার মিলার যদি কয়েক মাস ধরে হাসপাতালেই থেকে থাকেন, তিনি নিশ্চয় ঘড়িটা ফেলেননি। জিজ্ঞেস করলো, তার পুরো নাম কি হেনরি মিলার?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রবিনকে দেখছেন মহিলা। বোধহয় আন্দাজ করতে চাইছেন, ছেলেটা ভালো না মন্দ–মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেবেন কিনা। ভালোই মনে হলো হয়তো, তাই জবাব দিলেন, হ্যাঁ। কেন? কোনো রকম…
না না, কোনো রকম অসৎ উদ্দেশ্য নেই আমাদের, তাড়াতাড়ি বললো রবিন। মিসেস মিলার। আপনিই নিশ্চয় মিসেস মিলার। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, একটা ব্যাপারে তদন্ত করতে এসেছি আমরা। ব্যাগ থেকে ঘড়ি খুলে দেখালো। এই যে, এটা।
আবার ওটা! চেঁচিয়ে উঠলেন মহিলা। ওরকম বিচ্ছিরি একটা জিনিস আমার স্বামীর কাছে পাঠিয়েছে। ভাবো একবার, তার অসুখের সময়। ভাগ্যিস চিৎকার শোনেনি। তাহলে নির্ঘাত হার্টফেল করতো। আমি সুস্থ মানুষ, আমিই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম আরেকটু হলে!
চকিতে দৃষ্টি বিনিময় করলো রবিন আর টিম। ঠিক জায়গাতেই এসেছে।
নিশ্চয় মিস্টার ক্লক পাঠিয়েছেন? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
হ্যারিসন ক্লক! ও আবার ভদ্রলোক নাকি? ভেবে দেখো, অসুস্থ একজন মানুষকে ওরকম উপহার পাঠায়? কিসের সুবাদে? না, ওরা একসঙ্গে কাজ করতো একসময়। আমার স্বামী রেডিওর জন্যে রহস্য নাটক লিখতো। ঘড়িটা পেয়ে প্রথমে কিছু মনে করিনি! কিন্তু প্রাগ লাগিয়ে চিৎকার শুনে…ও মাগো! শিউরে উঠলেন মিসেস মিলার। সোজা নিয়ে গিয়ে ময়লার বাক্সে ফেলে দিয়ে এলাম। তোমরা ওখান থেকে কুড়িয়ে এনেছো নাকি?