এই মিস্টার! মস্ত থাবা পড়লো লারমারের কাঁধে, যেন ভালুকের থাবা। তিন। গোয়েন্দাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে বিশালদেহী ব্যাভারিয়ান, বোরিস। হচ্ছে কী?
ফিরে তাকালো লারমার। আমার জিনিস চুরি করেছে। ওটা ফেরত চাই।
ব্যাগ ছাড়ুন, শান্ত কণ্ঠে বললো বোরিস।
তোমার কথায়, না? ভালুক কোথাকার! বলেই ধাঁ করে হাত চালালো বোরিসের গলা সই করে, কারাতের কায়দায়।
গলাটা সরিয়ে নিলো শুধু বোরিস। কারাত-ফারাতের ধার দিয়েও গেল না। লারমারের হাতটা ধরে হ্যাঁচকা টানে আরও কাছে নিয়ে এলো। তারপর দুহাতে ধরে তাকে তুলে নিলো মাথার ওপর, টারজানের মতো। জনি ওয়াইসমুলারকে বোরিসের খুব পছন্দ, সুযোগ পেলেই তাঁকে অনুকরণের চেষ্টা করে। কিশোর, কি করবো ব্যাটাকে? আছাড় মেরে কোমর ভাঙবো, না পুলিশ ডাকবে?
না, ওসব কিছু না, দ্রুত ভাবনা চলেছে গোয়েন্দাপ্রধানের মাথায়। পুলিশকে ডেকে এনে উন্মেও হতে পারে, হয়তো লারমার প্রমাণ করে দেবে ঘড়িটা তারই। তাহলে জটিল একটা রহস্য হাতছাড়া হয়ে যাবে। মাপ করে দিন ওকে।
লারমারকে বুকের কাছে নামিয়ে এনে হাত থেকে ছেড়ে দিলো বোরিস। গমের বস্তার মতো দড়াম করে মাটিতে পড়লো লোকটা। কোমরে হাত দিয়ে কোনোমতে উঠে দাঁড়ালো। মুসার গা-জ্বালানো হি-হি হাসি উপেক্ষা করে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, বেশ, দেখে নেবো আমি!….
হাত বাড়ালো বোরিস। তাহলে হয়ে যাক না এখুনি আরেকবার…
ঝট করে পিছিয়ে গেল লারমার। কিশোরের দিকে ফিরলো। পস্তাবে, মনে রেখো! আমি…আমি… কথা শেষ না করেই গটমট করে হেঁটে চলে গেল সে।
.
০৮.
পরদিন হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসলো তিন গোয়েন্দা। টিমও রয়েছে।
সকালে লারমার চলে যাওয়ার পর টিমকে ফোন করেছিলো কিশোর। কথায় কথায় জেনেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তার, পুরনো একটা গাড়িও আছে। গাড়িটা তার বাবার। চাইলে ওটা কাজে লাগাতে পারে তিন গোয়েন্দা। গাড়ি নিয়ে। ওকে আসতে বলেছিলো সে।
তারপর, রবিন; তোমার খবর বলো, সামনে ঝুঁকলো কিশোর।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা বড় খবরের কাগজে কাজ করেন রবিনের বাবা। তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলো সে, রেকর্ড রুমে পুরনো কাগজ ঘেঁটে দেখার জন্যে, অবশ্যই কিশোরের পরামর্শে। পকেট থেকে কয়েক পাতা কাগজ বের করে ভাঁজ খুলে টেবিলে বিছালো রবিন।
টিমের বাবা বেকার ডেলটনের সম্পর্কে নতুন তেমন কিছুই জানতে পারেনি। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছে। দশ বছর ধরে হলিউড আর লস অ্যাঞ্জেলেসে যতো ছবি চুরি হয়েছে, সবগুলোর সঙ্গে ডেলটন জড়িত ছিলো, একথা, তার মুখ দিয়ে বের করাতে চেয়েছে। কিন্তু বেকার ডেলটনের এক কথাঃ সে চোর নয়। ছবির ব্যাপারে কিছুই বোঝে না। এসব কথা সঙ্গীদের জানিয়ে টিমের দিকে ফিরলো রবিন। জিজ্ঞেস করলো, তোমরা স্যান ফ্রান্সিসকোয় থাকতেই অনেকগুলো চুরি হয়েছে, তাই না?
হ্যাঁ। ছয় বছর আগে হলিউডে এসেছি আমরা। চুরি হচ্ছে আরও বছর চারেক আগে থেকেই। এতেই বোঝা যায়, আমার বাবা নির্দোষ।
চুরিগুলো একটা দলই করছে কিনা সেটা বুঝতে হবে আগে, কিশোর বললো। রবিন, দশ বছরে কটা ছবি চুরি হয়েছে?
বেশি দামী ছবি মোট বারোটা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই জানালা কিংবা দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকেছে চোর, ফ্রেম থেকে কেটে ছবি বের করে নিয়ে চলে গেছে। পুলিশের ধারণা, ওগুলো ধনী দক্ষিণ আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। লুকিয়ে রাখবে ওরা, কাউকে দেখাবে না। জেনেশুনেই চোর ও-ধরনের লোকের কাছে বিক্রি করেছে।
যাতে কেউ কখনও খুঁজে না পায় ওগুলো?
হ্যাঁ। টিমদের রান্নাঘরেরগুলোও নিখোঁজ হততা, সময় মতো পুলিশ ওখানে না। গেলে।
দাম কেমন হবে বারোটা ছবির?
সঠিক বলা যাবে না। ছবি বিশেষজ্ঞদের আন্দাজ, নীলামে এক কোটি ডলারে উঠতে পারে।
খাইছে! চোখ বড় বড় হয়ে গেল মুসার। এত দাম!
মাথা ঝাঁকালো রবিন।
এখন প্রশ্ন হলো, টিমদের রান্নাঘরে এলো কিভাবে তিনটে ছবি? বললো কিশোর। প্রশ্ন অবশ্য আরও আছে। কে চুরি করেছে? মিস্টার রোজার ওরফে ক্লক হাওয়া বদল করতে গিয়ে কেন গায়েব হয়ে গেলেন? আর এটাই বা কোত্থেকে এলো? টেবিলে রাখা ঘড়িটা ছুঁলো সে। কোনো না কোনোভাবে এটার মূল্য আছে। নইলে ছিনিয়ে নেয়ার জন্যে খেপে যেতো না লারমার।
ওকে বলাটাই আমার অন্যায় হয়েছে, কোলের ওপর রাখা দুই হাতের দিকে তাকিয়ে বললো টিম। মুখ তুললো। কি করবো, বলো? এমনভাবে শাসাতে লাগলো মাকে…তোমাদের কথা জিজ্ঞেস করলো। শেষে বলতে বাধ্য হলাম, একটা ঘড়ি এনেছো তোমরা। কার্ডটা দেখাতেই আর দেরি করলো না। ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছুটলো।
ভাগ্যিস তখন ইয়ার্ডে ছিলো বোরিস। আচ্ছা, টিম, লারমার যে তোমাদের বাড়িতে থাকে, সন্দেহজনক আচরণ কিছু করে-টরে?
মাঝে মাঝে রাতে উঠে বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ায়! মা কারণ জিজ্ঞেস করেছিলো। জবাব দিয়েছে, সে লেখক। রাতে প্রটের কথা ভাবতে ভাবতে মাথ গরম হয়ে যায়, বাইরে বেরিয়ে ঠাণ্ডা করে। এক রাতে শুনলাম, দেয়ালে হাতুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ি দিচ্ছে। গিয়ে দেখলাম। মনে হলো, কিছু খুঁজছে।
হুমম! নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। একটা সন্দেহ জাগছে, তবে ভুলও হতে পারে। যাকগে, ওসব পরে। আগের কাজ আগে। বুঝতে পারছি না, পুলিশ যে চুরির সমাধান করতে পারেনি, সেটা আমরা কি করে করবো? ঘড়ি ধরেই এগিয়ে দেখা যাক।