পারছি, মাথা ঝোঁকালো কিশোর। তোমার সমস্যাটা নিয়ে ভাববো। কিছু বুঝতে পারলে, জানাবো।
টিমকে গুডবাই জানালো তিন গোয়েন্দা। গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল টিম।
আবার এঞ্জিন স্টার্ট দিলো হ্যানসন। কিশোরকে জিজ্ঞেস করলো, মিস্টার ক্রিস্টোফারের ওখানেই যাবো?
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা কাত করলো কিশোর। যান। ওখানেই তো যেতে চাইছিলাম আমরা। এখন তো যাওয়াই দরকার। রোজার অভিনেতা হলে হয়তো তাকে চিনতে পারবেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।
কয়েক মিনিটেই প্যাসিফিক স্টুডিওর গেটে পৌঁছে গেল গাড়ি। আরও কয়েক মিনিট পর বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে ঢুকলো তিন গোয়েন্দা।
এই যে, ছেলেরা, বিশাল ডেস্কের ওপর থেকে বললেন পরিচালক। হঠাৎ? নতুন কোনো কেস?
হ্যাঁ, স্যার, কিশোর বললো। গোলমেলে ঘড়ির তদন্ত শুরু করেছিলাম…
প্রথম দুটো শব্দ বাংলা বলেছে কিশোর, বুঝতে পারলেন না পরিচালক। ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসের তদন্ত বললে?
গোলমেলে ঘড়ি, স্যার। স্ক্রীমিং ক্লক।
কীই! স্ক্রীমিং ক্লক! ভুরু আরও কুঁচকে গেছে তাঁর, রীতিমতো অবাক হয়েছেন। অনেক বছর কোনো খোঁজ নেই। কি হয়েছিলো তার?
.
০৭.
তার? বিস্ময়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। স্ক্রীমিং ক্লক নামে কোনো মানুষ আছে?
ওটা তার ডাকনাম, জানালেন পরিচালক। ওর আসল নাম হ্যারিসন ক্লক। চেঁচাতো তো, সেজন্যেই লোকে নাম রেখেছিলো স্ক্রীমিং ক্লক। স্ক্রীমার ছিলো সে।
স্ক্রীমার? বুঝতে পারছে না কিশোর।
কিশোর পাশাও তাহলে অনেক কিছু জানে না, মুচকি হাসলেন পরিচালক। চেঁচানোকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলো হ্যারি। রহস্যময় কণ্ঠে বললেন তিনি।
বুঝিয়ে বলবেন, স্যার, প্লীজ!
অনেক বছর আগে, টেলিভিশন তখনও এতো উন্নত হয়নি। রেডিওর চলই ছিলো বেশি। রেডিওতে তখন নাটক শুনতো লোকে। রহস্য গল্প নিয়েও নাটক হতো। লোকে পছন্দও করতে খুব। একবার তো মনে আছে আমার, শুধু রহস্য গল্প নিয়েই এক হপ্তায় হয়েছিলো পঁয়তিরিশটা নাটক। আজকাল টেলিভিশনে যেমন উপভোগ করো তোমরা, আমরা করতাম রেডিওতে শুনে। রোমাঞ্চিত হতাম।
সে-সব নাটকে কণ্ঠ দিতে হতো অনেককে। বিশেষ সাউণ্ড ইফেক্টের জন্যে চেঁচানোর দরকার পড়তো। শুনে যতো সহজ মনে হচ্ছে, কাজটা মোটেও ততো সহজ নয়। এটাও একটা আর্ট। এর জন্যে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। খুব ভালো শিল্পী ছিলো হ্যারি। পরিচালকদের কাছে তাই তার কদরও ছিলো খুব।
আমার দুটো ছবিতে তাকে দিয়ে কাজ করিয়েছি আমি। চিৎকারে তার জুড়ি নেই। শিশু, মহিলা, পুরুষের কণ্ঠ তো বটেই, নানারকম জন্তুজানোয়ারের ডাকও সে নিখুঁত নকল করতে পারে।
সময় বদলালো। টেলিভিশন জনপ্রিয় হলো। রেডিওর কদর আর রইলো না। ফলে হ্যারিসন ক্লকের মতো লোকদের দামও কমতে লাগলো। বছর কয়েক আগে। আমার দুটো ছবিতে কাজ করার পর গায়েব হয়ে গেল হ্যারি। আর কোনো খোঁজ পাইনি। তার ব্যাপারেই তদন্ত করছো?
কি জানি, হতেও পারে, বললো কিশোর। তবে আপাতত একটা স্ক্রীমিং ক্লকের তদন্ত করছি আমরা। ব্যাগ থেকে ঘড়িটা বের করে টেবিলে রাখলো সে। ওটা হাতে আসার পর থেকে যা যা ঘটেছে, খুলে বললো।
আশ্চর্য! গম্ভীর হয়ে মাথা দোলালেন পরিচালক
শুনে তো হ্যারিসন ক্লকের মতোই লাগছে, রোজারকে। ক্লক বেঁটে ছিলো। হালকা-পাতলা। রোজার বেঁটে, মোটা। তবে পাতলা মানুষ মোটা হতে সময় লাগে না। আরেকটা ব্যাপার, রেডিওতে আয় কমে গিয়েছিলো, কিন্তু শেষ দিকে কি করে যেন হঠাৎ বড়লোক হয়ে গিয়েছিলো হ্যারি। আনমনে প্রশ্ন করলেন নিজেকেই, কিন্তু নাম বদলাবে কেন?
পেইন্টিঙের ব্যাপারে কি তার আগ্রহ ছিলো, স্যার? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
জানি না। অনেক অভিনেতারই অবশ্য থাকে। ক্লকের ছিলো বলে শুনিনি।
থ্যাংক ইউ, স্যার, উঠে দাঁড়ালো কিশোর। অন্য দুজনও উঠলো। অনেক, মূল্যবান তথ্য জানালেন। এসব নিয়ে ভাবতে হবে।
পরিচালকের অফিস থেকে বেরিয়ে এলো ওরা।
রকি বীচে, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে ওদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। হ্যানসন।
গেটের ভেতরে ঢুকেই থমকে গেল কিশোর। পেছনে প্রায় তার গায়ের ওপর এসে পড়লো অন্য দুজন। কতগুলো আসবাবপত্রের ওপাশ থেকে বেরিয়ে এসেছে একজন মানুষ।
হাই, ছেলেরা, এগিয়ে এলো সে। চিনতে পারছো?
পারছে। মাত্র ঘন্টাখানেক আগে ওকে দেখেছে রোজারের বাড়িতে।
একটা ঘড়ি আছে তোমার কাছে, কিশোরের দিকে চেয়ে বললো লারমার। ওটা আমার জিনিস।
হাতের ব্যাগটা পেছনে নিয়ে গেল কিশোর।
লাফিয়ে এগিয়ে এলো লারমার। আমার জিনিস আমাকে দিচ্ছো না কেন? জলদি দাও। নইলে…
কিশোর আর লারমারের মাঝে এসে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে গেল মুসা। কিছুই করতে পারবেন না আপনি, মিস্টার। ওটা আপনার জিনিস হলে নিশ্চয়ই দেবো। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে…।
এক ধাক্কায় মুসাকে সামনে থেকে সরিয়ে দিলো লোকটা। গায়ে মোষের। জোর, এতোটা আশা করেনি গোয়েন্দা-সহকারী। ইদানীং কারাত শিখছে সে, সেই ভরসায়ই সামনে এসেছিলো। হাল ছাড়লো না। কিশোরের হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালালো লারমার। জাপানী জুজিৎসুর কায়দায় তার কব্জি চেপে। ধরলো মুসা।
সেই একই কায়দায় চোখের পলকে হাত ছাড়িয়ে নিলো লারমার। বুঝতেই পারলো না মুসা, কখন ঘুরে গেছে সে, তার পিঠ এখন লোকটার দিকে। শার্টের কলার ধরে তুলে তাকে প্রায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো লারমার। আবার কিশোরের হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নিতে গেল।