ভালোই কাটছিলো। তারপর, মাস ছয়েক আগে বেভারলি হিল-এ এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চুরি হলো। তিনটে দামী, ছবি। কিভাবে ঢুকেছিলো চোর, জানতে পারেনি পুলিশ। অনুমান করছে, হয় সরু জানালা দিয়ে, জোরজার করে ঢুকেছে, কিংবা নকল চাবি বানিয়ে নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানলো ওরা, চুরির হপ্তা দুই আগে ওই বাড়িতে গিয়েছিলো ডেলটন। মালিকের একটা পলিসি করানোর জন্যে। ছবিগুলো দেখেছে।
শুধু ওই বাড়িতে যাওয়ার অপরাধেই ডেলটনের অ্যাপার্টমেন্টে এসে ছবি খুঁজেছে পুলিশ। রান্নাঘরে পেয়েছে চোরাই মাল। ধরে নিয়ে গিয়ে পাঁচ বছরের জন্যে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। মাস তিনেক আগে বিচার শেষ হয়েছে তার। অনেক মিনতি করেছে ডেলটন, কসম খেয়েছে। বলেছে, সে চুরি করেনি।- ছবি চেনে না। দামী কিনা বলতেই পারবে না। তাছাড়া দুজনের আয়ে সংসার চলে যাচ্ছিলো। ভালোমতোই, চুরি কেন করতে যাবে? কিন্তু জুরিরা শুনলো না সে কথা।
বিশ্বাস করো, শেষে বললো টিম, বাবা চুরি করেনি। আমার বাবা চোর নয়। হলে আমি আর মা জানতাম। পুলিশের ধারণা, এই এলাকায় গত দশ বছর ধরে যতো ছবি চুরি হয়েছে, সবগুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাবা। বীমার দালাল, লোকের বাড়িতে ঢোকা তার জন্যে সহজ। থেমে দম নিলো সে। তারপর হঠাৎ কিশোরের হাত চেপে ধরে বললো, তোমাদের ভাড়া করতে চাই। আমাকে সাহায্য করো। ব্যাংকে পনেরো ডলার জমিয়েছি আমি, তোমাদের দেবো। এর। বেশি দিতে পারবো না, নেই আমার কাছে। আমার বাবাকে নির্দোষ প্রমাণ করে দাও, প্লীজ!।
চোখ মিটমিট করলো কিশোর, চিন্তিত। রবিন আর মুসার চোখে শূন্য দৃষ্টি। না জেনেশুনে ভালোমতো সাক্ষী-প্রমাণ না নিয়ে কি আর একটা লোককে জেলে ঢুকিয়েছে পুলিশ?
কাজটা খুব কঠিন, টিম, বোঝানোর চেষ্টা করলো কিশোর। তবু, সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।
কঠিন, সে-তো, জানিই। সহজ হলে কি আর গোয়েন্দার সাহায্য লাগতো?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। আচ্ছা, একটা কথা বলো তো, ছবিগুলো তোমাদের রান্নাঘরে গেল কি করে?
বলতে পারবো না। মিস্টার রোজারের কাছে অনেকে আসতো। তাদের কেউ রেখে যেতে পারে। কিংবা বাবার কোনো শত্রু।
দরজায় তালা লাগানো থাকতো না? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
থাকলেই বা কি? পুরনো দরজা, পুরনো তালা। সহজেই খোলা যায়। তাছাড়া এমন দামী কিছু থাকে না রান্নাঘরে, যে সাবধান থাকবো।
হুমম্। নিচের ঠোঁটে চিমটি কেটেই চলেছে গোয়েন্দাপ্রধান।
মিস্টার রোজারই চুরি করেননি তো? মুসা বললো। চুরি করে এনে হয়তো তোমাদের রান্নাঘরে লুকিয়েছিলেন। ওটাই সহজ জায়গা।
টিম জবাব দেয়ার আগেই কিশোর বললো, মিস্টার রোজারকে সন্দেহ করেছিলো পুলিশ?
মাথা নাড়লো টিম। মিস্টার রোজার ওরকম কাজ করতেই পারেন না। আমাদের পছন্দ করতেন। তাছাড়া, ছবিগুলো যেরাতে চুরি হয়েছে, সেরাতে ঘরে ছিলেন তিনি।
কিছু মনে কোরো না, বললো কিশোর। গোয়েন্দাগিরিতে কাউকেই সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে নেই। তাই জিজ্ঞেস করলাম। একটা ব্যাপার অদ্ভুত লাগছে আমার।
অদ্ভুত? রবিন ফিরে তাকালো।
তদন্ত শুরু করলাম চেঁচানো ঘড়ির। এখন দেখছি ছবি চুরির কেস। কি যেন একটা যোগাযোগ রয়েছে।
তা কি করে হয়? প্রশ্ন তুললো মুসা।
বুঝতে পারছি না। টিম, মিস্টার রোজারের কথা সব খুলে বলবে? রবিন, নোট নাও।
বেশি কিছু জানাতে পারলো না টিম। বেঁটে, মোটা, হাসিখুশি মানুষ মিস্টার রোজার। অনেক টাকার মালিক। ডেলটনদের ধারণা বছর কয়েক আগে হঠাৎ ওগুলো কারও কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন রোজার। অনেক লোক যাতায়াত করতো তার কাছে। ওদেরকে দেখে অনুমান করতে কষ্ট হয়নি, একসময় অভিনেতা ছিলেন রোজার, কিংবা থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তিনি সেকথা কখনও ডেলটনদের বলেননি।
টিমের বাবা চোর, একথা রোজারও মানতে পারেননি। নিজের খরচে উকিল রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচাতে পারলেন না ডেলটনকে। এতেই বোধহয় মন খারাপ হয়ে যায় তার। বেকার ডেলটন জেলে যাওয়ার পর পরই বিদেশে চলে গেলেন তিনি। বলে গেলেন, হাওয়া বদলাতে যাচ্ছেন। বাড়িটা দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে গেলেন টিমের মায়ের ওপর।
সঙ্গে শুধু দুটো সুটকেস নিয়ে সেই যে গেছেন রোজার, গেছেনই, আর কোনো খোঁজ নেই তার। একটা চিঠিও লেখেননি। যাওয়ার পর কিছুদিন বন্ধুরা এসেছে। দেখা করতে, না পেয়ে ফিরে গেছে। ওদের আসাও বন্ধ হয়ে গেছে এখন।
টিমের মাকে কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন রোজার। এক সময় শেষ হয়ে গেল সেই টাকা। ঠিক এই সময় ভাড়া বাড়ির খোঁজে এসে হাজির হলো লারমার। টাকা নেই, খাবে কি? অগত্যা লারমারকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে দিলো মিসেস ডেলটন। লারমারের শর্ত, তাকে নিরিবিলিতে থাকতে দিতে হবে, আর কোনোরকম হৈ-চৈ করা চলবে না বাড়িতে।
ব্যস, এইই জানি, টিম বললো। কিছুক্ষণ উসখুস করলো সে। তারপর বললো, দেখো, শুরুতে তোমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি, কিছু মনে রেখো না। ফোনে মা যখন তোমাদের সঙ্গে কথা বলছিলো, তখন আমিই ঘড়িটার চিৎকার চালু করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, খবরের কাগজের লোক ওদের দেখতে পারি না আমি। কাজের কাজ কিছু করতে পারে না, খালি…যাক ওসব কথা। তোমরা কিছু মনে রেখো না। আমার মনের অবস্থা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো।