ক্রসড সার্কিট? বুঝলাম না, জবাব এলো।
আমরা কমপ্লেন পেয়েছি, আপনার সেকশনে নাকি বেশি বেশি রঙ নাম্বার হচ্ছে। দয়া করে যদি ঠিকানাটা বলেন? সার্কিট চেক করবো।
ঠিকানা? নিশ্চয়। একশো বারো ফ্র্যাঙ্কলিন স্ট্রীট। কিন্তু বুঝতে পারছি না… কথা শেষ করতে পারলো না মহিলা, তার আগেই শোনা গেল চিৎকার। বয়স্ক কোনো মানুষ আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠেছে। যেন জবাই করার জন্ধ্যে চেপে ধরা হয়েছে তাকে।
হাত থেকে রিসিভার ছেড়ে দিলো কিশোর।
.
০৪.
হ্যানসন, এই ব্লকটাই মনে হচ্ছে, বললো কিশোর। আস্তে চালান। নম্বরগুলো দেখি।
ফ্র্যাঙ্কলিন স্ট্রীট ধরে ধীরে চালালো হ্যানসন। পুরনো এলাকা। এককালের বিশাল বাড়িগুলো এখন মলিন, বিবর্ণ।
ওই যে! চেঁচিয়ে বললো মুসা।
বাঁকের কাছে গাড়ি রাখলো হ্যানসন। নেমে হেঁটে চললো তিন গোয়েন্দা। আশপাশে চোখ রাখছে। নির্জন লাগছে বাড়িটা, জানালার সমস্ত পর্দা টানা। সামনের দরজায় ছোট্ট সিঁড়ি, মাত্র দুটো ধাপ। তাতে উঠে ঘন্টা বাজালো কিশোর।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। আবার বেল বাজাতে যাবে, এই সময় নড়ে উঠলো দরজা। সামান্য ফাঁক হলো। উঁকি দিলো এক মহিলার মুখ। বয়েস তেমন। বেশি না। তবে খুব ক্লান্ত আর বিষণ্ণ দেখাচ্ছে।
মাপ করবেন, কিশোর বললো। মিস্টার ক্লকের সঙ্গে দেখা হবে?
মিস্টার ক্লক? অবাক হলো যেন মহিলা। ওই নামে তো এখানে কেউ থাকে না।
নামটা বোধহয় আসল নয়, সেজন্যে চিনতে পারছেন না। তিনি ঘড়ি পছন্দ করেন। এখানেই তো থাকার কথা। কিংবা হয়তো থাকতেন।
ঘড়ি? তুমি মনে হয় মিস্টার রোজারের কথা বলছে। কিন্তু মিস্টার রোজার…
বলো না! বলো না! পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো একটা ছেলে। বয়েস। ওদেরই মতো হবে। কালো চুল। মহিলাকে ঠেলে সরিয়ে পাশে এসে দাঁড়ালো। ভ্রূকুটি করলো গোয়েন্দাদের দিকে চেয়ে। কথাই বলো না ওদের সাথে, মা। দরজা লাগিয়ে দাও। কেন এসেছে ওরা এখানে?
শোন, টিম, মহিলা বললো। এভাবে কথা বলতে নেই। ছেলেগুলোকে তো ভালোই মনে হচ্ছে আমার। মিস্টার রোজারের খোঁজ করতে এসেছে, দোষটা কোথায়?
একটু আগে কি মিস্টার রোজারই চিৎকার করেছিলেন? ফস করে জিজ্ঞেস করে বসলো কিশোর।
কড়া চোখে তাকালো টিম। হ্যাঁ, সে-ই! গলা চড়ালো সে। ওটা তার মরণ চিৎকার, মরে যাচ্ছিলো!যাও, ভাগো এখন আমাদের অনেক কাজ। ওকে মাটি দিতে হবে।
দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলো ছেলেটা।
শুনলে তো? চাপা গলায় বললো মুসা। লোকটাকে খুন করে এখন কবর দেয়ার কথা ভাবছে।
পুলিশ ডাকা দরকার, বললে রবিন।
আরও পরে, কিশোর বললো। আগে সব কথা জেনে নিই। বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করি।
দরজা ভেঙে ঢুকবে নাকি?
না, মাথা নাড়লো গোয়েন্দাপ্রধান। ওরাই ঢুকতে দেবে। জানালা দিয়ে উঁকি মারছে টিম… বেলপুশ টিপে ধরলো সে। ধরেই রাখলো, যতক্ষণ না, ঝটকা দিয়ে আবার খুললো দরজা।
ভাগতে বললাম না! গর্জে উঠলো টিম। কেন বিরক্ত করছো?
বিরক্ত করলাম কোথায়? নিরীহ কণ্ঠে বললো কিশোর। আমরা একটা রহস্যের তদন্ত করছি, তোমাদের সাহায্য দরকার। এই যে আমাদের কার্ড।
কার্ডটা পড়ে ভুরু কোঁচকালো টিম।
ব্যাগ থেকে চেঁচানো ঘড়িটা বের করে টিমের হাতে দিলো কিশোর।
কৌতূহল ফুটলো টিমের চোখে। এটাতে রহস্যের কি আছে?
ইলেকট্রিক সকেট কোথায়? কি রহস্য, দেখাচ্ছি, বলতে বলতেই ঘরের ভেতর পা ঢুকিয়ে দিলো কিশোর। বাধা দিতে গিয়েও কি ভেবে সরে দাঁড়ালো। টিম। একটা হলঘর, আবছা অন্ধকার। একপাশ থেকে দোতলায় সিঁড়ি উঠে গেছে। আরেক পাশে বিরাট এক গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লক, টিকটিক কানে না এলে চোখে, পড়তো না গোয়েন্দাদের। ঘড়ির পাশে টেবিলে টেলিফোন।
রহস্যময় মিস্টার রোজারের লাশ খুঁজছে মুসা আর রবিনের চোখ, দেখতে পেলো না। ঘড়িটার পাশে দেয়ালে সুইচবোর্ডে সকেট দেখে, সেদিকে এগোলো কিশোর। হাতের ঘড়িটা টেবিলে রেখে, সকেটে প্রায় ঢুকিয়ে লিভার অন করতেই চেঁচিয়ে উঠলো ঘড়ি। প্রতিধ্বনিত হলো বদ্ধ ঘরে। রোম, খাড়া হয়ে গেল দুই সহকারী গোয়েন্দার।
শুনলে তো, প্রাগটা খুলে নিয়ে বললো কিশোর। রহস্যময় না ঘড়িটা?
না, মোটেই অবাক হয়নি টিম। যে কেউ ওরকম চেঁচানি ঢোকাতে পারে, ঘড়িতে। দাঁড়াও, দেখাচ্ছি। গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকের পেছন থেকে একটা কর্ড বের করে প্লাগটা সকেটে ঢোকালো সে। শোনা গেল মোটা গলায় আতঙ্কিত চিৎকার, জবাই করার জন্যে চেপে ধরা হয়েছে যেন।
কিশোরের সন্দেহ নেই, ফোনে এই চিৎকারই শুনেছে।
দ্রুত ঘরে এসে ঢুকলো মহিলা। টিম, দোহাই লাগে তোর… ছেলেদের ওপর চোখ পড়তে থেমে গেল। ও, ঢুকতে দিয়েছে তোমাদেরকে? টিম, হঠাৎ মত বদলালি যে?
ওরাও একটা চেঁচানো ঘড়ি নিয়ে এসেছে, সকেট থেকে প্লাগ খুলে ফেলেছে টিম। ছোট। আগে আর দেখিনি। আমার বিশ্বাস ওটা মিস্টার রোজারেরই। টেবিলে রাখা ঘড়িটা মা-কে দেখালো সে।
মাথা নাড়লো টিমের মা। আমিও দেখিনি। কি করে বুঝলি, ওটা মিস্টার। রোজারের?
বুঝেছি। ঘড়িতে চিৎকার ঢোকানোর বুদ্ধি আর কারও মাথায় আসবে না।
না, তা আসবে না, আবার মাথা নাড়লো মহিলা। ছেলেগুলো পেলো কোথায় এটা, বলেছে?
জিজ্ঞেস করিনি এখনও। পরিচয় দিয়েছে, ওরা গোয়েন্দা। ভাবছি, কথা বলবো ওদের সঙ্গে। মিস্টার রোজারের ঘড়িটা নিয়ে এসেছে যখন। একটা দরজা খুলে ইশারায় ভেতরে যেতে বললো তিন গোয়েন্দাকে।