ঘরে ঢুকলেন ইয়ান ফ্লেচার। এগিয়ে এসে শোঁপার হাত থেকে নিয়ে নিলেন। ছবিটা। সাবধানে রাখলেন টেবিলে। একবার দেখেই মাথা নাড়লেন, চিনেছি। থানায় ফটো পাঠানো হয়েছিলো এটার। বছর দুই আগে এক গ্যালারি থেকে চুরি.: গিয়েছিলো। কিশোরের দিকে ফিরলেন। কালই বুঝেছি, ডেঞ্জারাস কোনো কেসে জড়িয়েছে। থানার কাছেই টিমের গাড়ি থেকে ঘড়ি চুরি হয়ে গেল! ভাগ্যিস মুসা। গিয়েছিলো, সময়মতো আসতে পেরেছি।
শোঁপার দিকে তাকালো কিশোর। ধরা পড়েছে, অথচ বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই চেহারায়। শান্ত। হাসছে। ফ্লেচারের অনুমতি নিয়ে হাত নামালো। সিগার বের করে ধরালো। ধোয়া ছেড়ে বললো, চীফ, অ্যারেস্ট তো করলেন। কিন্তু আমার অপরাধ জানতে পারি?
সেটা আবার বলতে হবে নাকি? মেজাজ দেখিয়ে বললেন চীফ। চোরাই মাল সহ হাতেনাতে ধরেছি। তাছাড়া অন্যের ঘরে বেআইনী ভাবে ঢুকে মালপত্র নষ্ট…
তাই? চীফকে থামিয়ে দিলো শোঁপা। জোরে জোরে দুবার টান দিলো সিগারে। সেটা আঙুলের ফাঁকে নিয়ে ওপরের দিকে মুখ করে হালকা ধোয়ার মেঘ সৃষ্টি করতে করতে বললো, অযথা লজ্জায় পড়তে যাবেন না, প্লীজ। খবরের কাগজ ওলারা আপনার চাকরি খেয়ে ছাড়বে। আর যদি কপাল গুণে চাকরিটা বেঁচেই যায়, অজাগা-কুজাগায় ট্রান্সফার এড়াতে পারবেন না। আমি বেআইনী কিছুই করিনি। কতগুলো চোরাই ছবি খুঁজে বের করতে এসেছি। যে-কেউ সেটা করতে পারে, পেলে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বাহবা নিতে পারে। আমিও শুধু তা-ই করেছি। এই ছেলেগুলোকে জিজ্ঞেস করুন, কিশোর, রবিন আর টিমকে দেখালো সে। ওরা সাক্ষী। জিজ্ঞেস করুন, ওরাও আমার সঙ্গে খুঁজেছে কিনা?
কিন্তু মালপত্র নষ্ট…, খানিক আগের গলার জোর হারিয়েছেন ক্যাপ্টেন।
অনুমতি নিয়েই করেছি। মালিকের অবর্তমানে এই বাড়ি দেখাশোনার ভার রয়েছে এই মহিলার ওপর, টিমের মাকে দেখালো শোঁপা। তাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি আমি, খুঁজবো কিনা। ছবিগুলো পাওয়া গেছে। আপনারা এসেছেন। দয়া করে নিয়ে যেতে পারেন ওগুলো। আপনারা না এলে আমি নিজে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসতাম। বিমল হাসি ছড়িয়ে পড়লো চিত্র-চোরের চেহারায়।
কিন্তু..কিন্তু কথা খুঁজে পাচ্ছেন না চীফ।
কিন্তুর কি আছে? জিজ্ঞেস করুন। সাক্ষীরা তো এখানেই আছে। ওরা মিথ্যে বলরে না। কিশোর, বলো না, আমি সত্যি বলছি, না মিথ্যে?
চোখ মিটমিট করলো কিশোর। অনিচ্ছাসত্ত্বেও বলতে হলো, হ্যাঁ, স্যার, মিস্টার শোঁপা ঠিকই বলছেন। চোরাই ছবি খুঁজে বের করতে আমরাও সাহায্য করেছি তাকে।
কিন্তু ও ফেরত দিতো না! রাগে চেঁচিয়ে উঠলেন ফ্লেচার। অসহায় ভঙ্গিতে থাবা মারলেন নিজের উরুতে। কিছুতেই দিতো না। নিয়ে পালিয়ে যেতো।
সেটা আপনার ধারণা, শান্তকণ্ঠে বললো শোঁপা। প্রমাণ করতে পারবেন ] তো, আমি এখন যাই। জরুরী কাজ আছে। আর যদি অ্যারেস্ট করে নিয়ে যেতে চান, নিতে পারেন। নিজেরই ক্ষতি করবেন শুধু শুধু।
দুই সহকারীকে হাত নামানোর ইঙ্গিত করলো শোঁপা। চলো! এখানে আর আমাদের দরকার নেই।
দাঁড়াও! চেঁচিয়ে উঠলো একজন পুলিশ। এতো সহজে ছাড়া পাবে না। পুলিশের পোশাক পরার অপরাধে ওই দুজনকে ধরতে পারি আমরা।
পারেন নাকি? হাই তুললো শোঁপা, যেন ঘুম ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না। এই বিল, এদিকে এসো। ওনাকে দেখাও মনোগ্রামগুলো…
এন,ওয়াই-পি-ডি! অবাক হলেন চীফ।
হ্যাঁ, স্যার, বিনীত কণ্ঠে বললো শোঁপা। নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। এটা একটা নিছক রসিকতা। ওরা দুজনেই অভিনেতা, ভাড়া করেছি ছবিগুলো খোঁজায় সাহায্য করতে। জানেনই তো, নিউ ইয়র্ক এখান থেকে তিন হাজার মাইল দূরে, এই শহরে ওখানকার পুলিশের কাজ করার অধিকার নেই। করতে হলে আপনাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। কাজেই, লস অ্যাঞ্জেলেসে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ব্যাজ পরাটা বেআইনী কিছু নয়, আসলে কোনো ব্যাপারই নয় ওটা। ওরা নিউ ইয়র্কের আসল পুলিশ হলে অনুমতি না নেয়ার জন্যে আটকাতে পারতেন। আপনারা। অভিনয়ের জন্যে পারেন না। তা-ও পারতেন, যদি পুলিশের পোশাক পরে ধাপ্পা দিয়ে কারো কোনো ক্ষতি করতো। কিছুই করেনি ওরা।
ঢোক গিললো কিশোর। আরেকবার গাধা মনে হলো নিজেকে। অন্যদের, মতো সে-ও ঠকেছে, দুজনকে লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ মনে করে।
এই, চলো,,সহকারীদের বলে দরজার দিকে রওনা হলো শোঁপা।
বাঘের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সেদিকে ক্যাপ্টেন। শক্ত হয়ে গেছে হাতের মুঠো।
দরজার কাছে গিয়ে ঘুরলো শোঁপা। হাসি হাসি মুখ করে বললো, কিশোর, চলি। তোমার সাথে কাজ করার মজাই আলাদা। আগেও বলেছি, আবার বলছি, আমার দলে চলে এসো। তোমার বুদ্ধি আর আমার অভিজ্ঞতা একসাথে হলে দুনিয়ার কোনো বাধাই বাধা থাকবে না আমাদের জন্যে। আসবে?
আপনি বরং আরেক কাজ করুন না, পাল্টা প্রস্তাব দিলো কিশোর। চুরি ছেড়ে গোয়েন্দা হয়ে যান। আমাদের সঙ্গে হাত মেলান। দুনিয়ার সব না হোক, কিছু চোর অন্তত চুরি ছাড়তে বাধ্য হবে। কিংবা হাজতে ঢুকবে।
স্থির দৃষ্টিতে এক মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলো শোঁপা। তারপর হাসলো। এ-কারণেই তোমাকে আমার পছন্দ, ইয়াং ম্যান। আই লাইক ইউ। চলি, আবার দেখা হবে।
আমার সঙ্গেও তোমার দেখা হবে, শোঁপা, কঠিন কণ্ঠে বললেন ফ্লেচার। কথা দিচ্ছি, এবারের মতো আর বোকামি করবো না তখন। অসময়ে হাজির হবো