রবিনও পড়লো। খুব খুদে অক্ষরে লেখা রয়েছেঃ ডি. টেমপার। মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো, মানে কি? কারও নাম?
বলছি এখুনি, বলে, মুসার দিকে তাকালো কিশোর। মুসা, টেলিফোন গাইডটা দেখি তো, প্লীজ।
পাতা উল্টে চললো গোয়েন্দাপ্রধান। কিছুক্ষণ পর চেঁচিয়ে উঠলো খুশি হয়ে, এই দেখো!
দুই সহকারীও দেখলো, ছোট একটা বিজ্ঞাপন, ঘড়ির দোকানের। ইংরেজিতে লেখা রয়েছেঃ ডি, টেমপার–ঘড়ি মেরামতকারী-অস্বাভাবিক কাজ আমাদের বিশেষত্ব। নিচে হলিউডের ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বর লেখা।
মেকাররা অনেক সময়, বললো কিশোর। ঘড়িতে সাঙ্কেতিক চিহ্ন বা নম্বর বসিয়ে দেয়। যাতে পরে আবার চিনতে পারে ওটা কার কাজ। ধোপার দোকানে কাপড়ে যেমন চিহ্ন দেয়। এক ধাপ এগোলাম আমরা। অ্যালার্ম সিসটেম খুলে ডিস্ক কে ঢুকিয়েছে ঘড়িতে, এটা জানলাম। পরের ধাপ, গিয়ে মিস্টার টেমপারকে জিজ্ঞেস করা, কে ঘড়িটা মেরামত করতে দিয়েছিল।
.
০৩.
হলিউড বুলভারের একটা গলির ভেতর পাওয়া গেল টেমপারের দোকানটা। গলিতে ঢোকে না বিশাল রোলস রয়েস, যেটাতে চড়ে এসেছে তিন গোয়েন্দা। গাড়িটা গলির মুখে রেখে হেঁটে রওনা হলো ওরা। ড্রাইভিং সিটে বসে রইলো ইংরেজ শোফার হ্যানসন।
ধুলোয় ধূসর, জানালার কাঁচের ওপাশে নামটা কোনোমতে পড়া যায়ঃ ডি, টেমপার–ঘড়ি মেরামতকারী। সোনালি রঙের অক্ষরগুলো মলিন হয়ে এসেছে। ভেতরের তাকে অসংখ্য ঘড়ি, ছোট-বড় নতুন-পুরনো, নানা ধরনের নানা আকারের। দরজায় এসে দাঁড়ালো তিন গোয়েন্দা। ওরা ভেতরে পা রাখতেই লম্বা একটা ঘড়ির নিচের কাঠের দরজা খুলে গেল, মার্চ করে বোলো এক খেলনা। সৈনিক, বিউগল বাজিয়ে সময় ঘোষণা করে আবার ঢুকে গেল তার কুঠুরিতে। বন্ধ হয়ে গেল দরজা।
খাইছে! তাজ্জব হয়ে গেছে মুসা। কী কাণ্ড! তবে, চিৎকারের চেয়ে অনেক ভালো।
চলো, মিস্টার টেমপারের সঙ্গে কথা বলা যায় কিনা দেখি। বললো কিশোর।
ঘরে অনেক ঘড়ি, অনেক রকম আওয়াজ। মনে হচ্ছে হাজার হাজার মৌমাছি গুঞ্জন তুলেছে একসঙ্গে।
চামড়ার অ্যাপ্রন পরা ছোটখাটো একজন মানুষ এগিয়ে এলো। চকচকে কালো চোখের ওপরে সাদা ভুরু, যেন দুটো ছোট ছোট ঝোপ। খুশি খুশি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, কি চাই? ঘড়ি মেরামত করাবে? নাকি অদ্ভুত কিছু লাগাবে?
না, স্যার, বিনীত কণ্ঠে জবাব দিলো কিশোর, ওসব নয়। একটা ঘড়ির ব্যাপারে জানতে এসেছি। ব্যাগ খুলে ওটা বের করে কাউন্টারের ওপর দিয়ে ঠেলে দিলো সে।
ঘড়িটা দেখলো টেমপার। হুঁ, বেশ পুরনো। দাম কম। এটা মেরামত করে পোষাবে না।
মেরামত করতে আনিনি, স্যার। কিছু মনে না করলে প্রাগটা লাগান।
শ্রাগ করলো ছোট মানুষটা। সকেটে প্লাগ ঢোকালো। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলো ঘড়ি। তাড়াহুড়ো করে লিভারটা অফ করে দিলো মেকানিক। ঘড়িটা হাতে নিয়ে পেছনে দেখলো সে। হাসলো। হুঁ, চিনতে পারছি। আমিই লাগিয়েছিলাম। খুব জটিল কাজ।
আপনিই তাহলে চিৎকার শিখিয়েছেন এটাকে? মুসা বললো।
হ্যাঁ। আমি বলেই পেরেছি…যাকগে, কি জন্যে এসেছো? খারাপ হয়ে গেছে?
না, স্যার, কিশোর বললো। রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি এটা। কার জিনিস জানি না। নিচে আপনার নাম দেখলাম। ভাবলাম, মালিকের নাম বলতে পারবেন। তার জিনিস তাকে ফিরিয়ে দেবো।
তাই? দ্বিধা করছে টেমপার। কাস্টোমারের নাম গোপন রাখি আমরা। অনেক সময়…
মুফতে দেয়ার ইচ্ছে আমাদের নেই, স্যার, বাধা দিয়ে বললো রবিন। এরকম একটা জিনিস, নিশ্চয় খুব শখের। ফিরিয়ে দিলে হয়তো পুরস্কার দেবেন তিনি…
হাত তুললো টেমপার। বুঝতে পেরেছি। ঠিকই বলেছো, জিনিসটা তার শখের। ঘড়ি জোগাড়ের হবি আছে লোকটার। নাম ক্লক।
ক্লক! একই সঙ্গে বলে উঠলো রবিন আর মুসা।
নাম তো তা-ই বলেছে লোকটা। আমার বিশ্বাস, ওটা তার বানানো নাম। আসল নাম অন্য কিছু। নানা রকম ঘড়ি এনেছে আমার কাছে, বিচিত্র সব, ফরমায়েশ। কোনোটাকে দিয়ে চিৎকার করাতে হবে, কোনোটাকে হাসাতে হবে, কোনোটাকে…
আমার কাছেও আসল নাম মনে হচ্ছে না, টেমপারকে থামিয়ে দিলো। কিশোর। নিশ্চয় ঠিকানা দিয়েছে? বলবেন, প্লীজ? আমরা নিজেই নিয়ে যাবো তার কাছে।
ঠিকানা তো দেয়নি, শুধু ফোন নম্বর। বলে, কাউন্টারের নিচের একটা তাক থেকে মোটা এক রেকর্ড বুক বের করলো টেমপার। পাতা উল্টে এক জায়গায়। এসে থামলো। হ্যাঁ, লিখে নাও। এইচ. ক্লক। নম্বর…
নোটবুক বের করে দ্রুত নম্বরটা লিখে নিলো রবিন।
চলবে তো এতে? টেমপার জিজ্ঞেস করলো। অবশ্য আর কিছু জানতেও পারবো না। জানি না। আর হ্যাঁ, ঘড়ির কাজ করাতে হলে নিশ্চিন্তে চলে এসো। যে-কোনো রকম কাজ।…তোমাদের আর কিছু বলার না থাকলে কিছু মনে কোরো না, আমার কাজ পড়ে আছে…
নিশ্চয়, নিশ্চয়, বললো কিশোর। অনেক ধন্যবাদ, স্যার, আপনাকে।
দোকান থেকে বেরিয়ে সঙ্গীদের বললো, আরেক ধাপ এগোনো গেল। এবার ফোন করতে হবে জনাব ঘড়িকে। মোড়ের বুঁদ থেকেই করি, চলো।
কি বলবে? কিশোর বুদে ঢোকার আগে জিজ্ঞেস করলো মুসা।
ঠিকানা জোগাড়ের চেষ্টা করবো, বলে ঢুকে গেল কিশোর।
মুসা আর রবিনও ঢুকলো। জায়গা কম, গাদাগাদি করে দাঁড়ালো ওরা। মুদ্রা ফেলে ডায়াল করলো কিশোর। ওপাশে রিসিভার তুললো, এক মহিলা।
গুড আফটারনুন, গলাটাকে ভারি করে তুললো কিশোর, বড়দের মতো। দক্ষ অভিনেতা সে, ভালো পারে এসব কাজ। টেলিফোন কোম্পানি থেকে বলছি। ক্রসড সার্কিটের গোলমাল হচ্ছে।