না, সম্ভব না, মাথা নাড়লো শোঁপা।
তারপর বলছে, হাত ধরাধরি করে একটা চক্র তৈরি করে নীরবে অপেক্ষা। করতে। আসলে নীরবে অপেক্ষা করাটাই আসল কথা, হাত ধরাধরিটা কোন ব্যাপার নয়। ওরা বেশি নাটকীয়তা, নাটকের লোক তো, সেজন্যেই ওরকম করতে বলেছে। না করলেও হয়তো চলবে। বলছে, ঠিক বারোটায় বাজবে অ্যালার্ম ক্লক, যেটা হেনরি মিলারের কাছে পাঠিয়েছিলো। বাজবে মানে চিৎকার করে উঠবে আর কি। এই রাত বারোটার ব্যাপারটারও কোনো মানে নেই, আমার বিশ্বাস। এটাও নাটকীয়তা, রহস্য গল্পের রহস্য বাড়ানোর হাস্যকর প্রচেষ্টা-ঠিক রাত বারোটা, কিংবা মধ্যরাত, যেন সন্ধ্যা আটটা কিংবা ভোর চারটেয় হলে রহস্য জমে না। যত্তোসব! হ্যাঁ, যা বলা হয়েছে, ঘড়ি তো চিৎকার করবে, ভলিউম পুরো বাড়িয়ে দিতে হবে ওটার। চিৎকার করিয়ে যেতে হবে যততক্ষণ না ক্লকের গোপন জায়গা বেরিয়ে পড়ে।
তোমার ধারণা, চেঁচানো ঘরিটাতেই রয়েছে রহস্যের চাবিকাঠি?
সরাসরি জবাব দিলো না কিশোর। ঘুরিয়ে বললো, হতে পারে, এমন কোনো মেকানিজম রয়েছে গোপন জায়গাটায়, চিৎকারের শব্দে সক্রিয় হয়ে উঠবে। সরে যাবে কোনো লুকানো প্যানেল-ট্যানেল বা দরজা। শব্দের সাহায্যে তালা খোলা তো আজকাল কোনো ব্যাপারই নয়। কিছু তালা আছে, আপনি ভালো করেই জানেন, মালিককে কাছে গিয়ে শুধু বলতে হয় খোলো, ব্যস, খুলে যায়। মিস্টার ক্লকের কণ্ঠস্বরও বোধহয় ওরকম কিছুই করবে।
হ্যাঁ, এটা সম্ভব, মাথা দোলালো শোঁপা। শব্দের সাহায্যে অনেক তালা খুলেছি আমি।
ঘড়িটা কোথায়? নিয়ে আসুন, চেষ্টা করে দেখি।
নেই। নষ্ট করে ফেলেছি।
নষ্ট করে ফেলেছেন!
হ্যাঁ, বললাম না, খুলে ফেলেছি। যন্ত্রপাতি কোথায় যে কোনটা ফেলেছি…মাঝে মাঝে এমন গাধামো করি না..অন্য কি করা যায়, বল।
আর কি করবেন? হতাশ ভঙ্গিতে দুহাত নাড়লো কিশোর। হবে না।
হতেই হবে! দরকার হলে ঘর ভেঙে ফেলবো আমি। এক সহকারীর দিকে ফিরে আদেশ দিলো, বিল, যন্ত্রপাতি। কুইক!
.
২০.
লাইব্রেরি বলে আর চেনা যায় না এখন ঘরটাকে। হাতুড়ি, বাটালি, ড্রিল মেশিন, কুড়াল আর শাবল নিয়ে আক্রমণ করেছিলো শোঁপার লোকেরা। প্রথমেই তাক থেকে সমস্ত বই নামিয়ে মেঝেতে স্তূপ করেছে। তারপর নামিয়েছে ছবিগুলো আর আয়না। দেয়ালের এক ধার থেকে খোঁজা আরম্ভ করেছে, ফাপা জায়গা, কিংবা গোপন ফোকর আছে কিনা দেখেছে। দেয়ালের কয়েকটা তাকও ভেঙে টেনেটুনে নামিয়েছে। ধারণা ছিলো, লুকানো দরজা-টরজা বা দেয়াল আলমারি থাকতে পারে। ছাতও বাদ রাখেনি। অনেক জায়গার আস্তরণ খসিয়ে ফেলেছে। মোট কথা, ধসিয়ে দেয়াটা বাকি রেখেছে শুধু।
কিন্তু নিরাশ হতে হয়েছে ওদেরকে, ব্যর্থ হয়েছে চেষ্টা। কিছুই পায়নি। কিচ্ছু। লুকানো ফোকর, দরজা, কিংবা দেয়াল আলমারির চিহ্নও নেই। ছবি লুকিয়ে রাখার মতো কোনো জায়গা-ই নেই।
প্রচণ্ড হতাশা রাগিয়ে দিয়েছে শোঁপাকে।
শেষ পর্যন্ত পারলাম না, আঁ! কপালের ঘাম মুছলো সে। হেরে গেলাম। ক্লকের কাছে? বিশ্বাসই করতে পারছি না! কোথায় লুকালো? কোথায়?
তার মানে টিমের বাবাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছেন না? কিশোর প্রশ্ন করলো।
ছবিগুলো না পেলে কি করে করি? তোমার চোখের সামনেই তো খোঁজা হলো।…আর কোনো উপায়? বুদ্ধি-টুদ্ধি কিছু?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করলো কিশোর। আনমনে মাথা দোলালো কিছুক্ষণ। মিস্টার শোঁপা, বাঁ হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে আছে সে। ঘড়ি নষ্ট হয়েছে বটে। কিন্তু চিৎকারটা বোধহয় হয়নি।
মানে? দুই লাফে কাছে চলে এলো শোঁপা।
চেয়ারে হেলান দিয়ে কয়েক সেকেণ্ড পা দোলালো কিশোর। ধীরে ধীরে বললো, মিস্টার শোঁপা, হিরাম বারকেনের কাছে অনেকগুলো টেপ আছে। রেডিওর নাটক রেকর্ড করে রেখেছেন। হ্যারিসন কক যতগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছে, সব। তার মধ্যে আ স্ক্রীম অ্যাট মিডনাইটও নিশ্চয় আছে। ঘড়ির মধ্যে যে চিৎকারটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলো, সেটা কোনো নাটকেরও হতে পারে। মানে, ওরকম ভাবে চিৎকার করেছিলো হয়তো কোনো নাটকে। তাহলে টেপ বাজালেই সেই চিৎকার পেয়ে যাবো আমরা। এখন, মিস্টার বারকেন দয়া করে টেপগুলো আর রেকর্ডারটা দিলেই হয়। ঘড়ি আর দরকার হবে না আমাদের।
এখুনি, এক্ষুণি ফোন করো তাকে! চেঁচিয়ে উঠলো শোঁপা। দপদপ করে লাফাচ্ছে কপালের একটা শিরা। সময় খুব কম।
হলঘরে এসে বারকেনকে ফোন করলো কিশোর।
শুনে প্রথমে অবাক হলেন বারকেন। বুঝিয়ে বললো কিশোর।
হ্যাঁ, এবার বুঝেছি, বললেন তিনি। কোন চিৎকারটার কথা বলেছো, তা-ও বুঝেছি। ঠিক যেটা চাইছো, সেটাই দিতে পারবো। ওই চিৎকারই বিখ্যাত করেছিলো হ্যারিকে। আমি টেপটা বের করে রাখছি। মেশিনও রেডি রাখবো। এসে নিয়ে যাও। তবে কথা দিতে হবে, পরে সমস্ত ঘটনা আমাকে খুলে বলবে। রহস্যটা দারুণ ইনটারেসর্টিং।
কথা দিলো কিশোর। বললো, একজন লোক পাঠাচ্ছে, টেপ আর রেকর্ডার আনার জন্যে।
রান্নাঘর থেকে এসে রবিন, টিম আর মিসেস ডেলটনও কিশোরের কথা শুনছিলো। তার সঙ্গে লাইব্রেরিতে চললো। ঘরটার অবস্থা দেখে চমকে গেল ওরা।
হায় হায়, করেছে কি? মাথায় হাত দিলো রবিন। একেবারে লণ্ডভণ্ড…তা, কিছু পেলে?
এখনও পাইনি, কিশোর বললো।
বাড়ি ভাঙার চেষ্টা হয়েছিলো নাকি! মিসেস ডেলটনের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। এই কাণ্ড করবে জানলে কক্ষণো খোঁজার অনুমতি দিতাম না।