কিন্তু তিনি তো হাসপাতালে।
অ্যাঁ! তাহলে? ঝুলে পড়লো শোঁপার চোয়াল, আর কোনো উপায়?
তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে পারি। জানতেও পারেন।
যাও। জলদি করো।
রবিনকে দিয়ে বরং করাই। তার সঙ্গে মহিলার পরিচয় আছে, কথা হয়েছে।
মিসেস ডেলটনের সঙ্গে বসে তখন চা খাচ্ছে রবিন আর টিম।
কি হলো, কিশোর? কিছু পেয়েছো? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
নাহ্। তোমাকে একটা কাজ করতে হবে, কি করতে হবে বুঝিয়ে বললো। কিশোর।
হলঘরে গিয়ে ডিরেক্টরি থেকে মিস্টার মিলারের নম্বর বের করে ডায়াল করলো রবিন। ফোন ধরলেন মিসেস মিলার, গলা শুনেই চিনতে পারলো সে। মেসেজের কথা বলে, বইটার কথা জিজ্ঞেস করলো। তিনি কি কিছু বলতে পারবেন?
ওপাশে কয়েক সেকেণ্ড নীরবতা, বোধহয় ভাবছেন মহিলা। তারপর বললেন, একটা বইয়ের নাম খুব মনে পড়ছে। বইয়ের কাহিনী ক্লকের, লিখেছে হেনরি। এতো বেশি আলোচিত হয়েছে, স্পষ্ট মনে আছে নামটা। আ স্ক্রীম অ্যাট মিডনাইট। চলবে?
নিশ্চয়! টেলিফোনেই চেঁচিয়ে উঠলো রবিন। থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ! রিসিভার রেখে খবরটা জানালো কিশোরকে।
চরকির মতো পাক খেয়ে ঘুরেই লাইব্রেরিতে ছুটলো কিশোর। পেছনে দৌড় দিলো শোঁপা। ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
বিভিন্ন তাকে মিনিট দুই খোঁজাখুঁজি করে বইটা বের করলো শোঁপা। এই যে, আ স্ক্রীম অ্যাট মিডনাইট, বাই হ্যারিসন ক্লক অ্যাণ্ড হেনরি মিলার। কপাল। খুলছে। মেসেজটা কোথায়? ছেঁড়াটা..হ্যাঁ, দেখি…তিন নম্বর পৃষ্ঠা, সাতাশ নম্বর শব্দ-কাগজ-কলম নাও…
দ্রত পাতা উল্টে তিন নম্বর পৃষ্ঠায় থামলো শোঁপা। শব্দটা লেখো…স্ট্যাণ্ড…তারপর হলো গিয়ে…
একের পর এক শব্দ বলছে শোঁপা, কিশোর লিখে নিচ্ছে।
শেষ হয়ে গেল মেসেজ। বইটা বন্ধ করে শোঁপা বললো, ব্যস, এইই। পড় তো, কি হয়েছে?
পড়লো কিশোর, স্ট্যাণ্ড ইন দা মিডল অভ দা রুম অ্যাট ওয়ান মিনিট টু মিডনাইট। হ্যাভ টু ডিটেকটিভস অ্যাণ্ড টু রিপোর্টারস উইদ ইউ। হোল্ড হ্যাঁণ্ডস, মেকিং আ সার্কল; অ্যাণ্ড কীপ অ্যাবসলুটলি সাইলেন্ট ফর ওয়ান মিনিট। অ্যাট মিডনাইট এক্সাক্টলি থেমে গেল সে। আর নেই।
ইসসি, আসল জায়গায় ছিঁড়ে ফেলেছে হারামজাদা! ঠিক মাঝরাতে কি ঘটবে? কি ঘটতে পারে? জানার কোনো উপায় নেই! মেসেজ পুড়িয়ে ফেলেছে। ক্লক মৃত। কে বলতে পারবে? জোরে নিঃশ্বাস ফেললো। অসাধারণ ধূর্ত ছিলো। লোকটা, ক্ষুরধার বুদ্ধি। ঠিক তার মতো করে কে ভাবতে পারবে?…এখন এক কাজ করা যায়। আরও ভালোমতো খুঁজতে হবে এঘরে। দরকার হলে দেয়াল ভেঙে ফেলবো। কিন্তু যদি এঘরে লুকানো না থাকে?
তাহলে আর জানা যাবে না কোনোদিন, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর। হঠাৎ হাত তুললো, মিস্টার শোঁপা, দেয়ালের ওই ছবিগুলো নয় তো! আসল ছবির ওপর নতুন করে আঁকা…
না, এতো সহজের মধ্যে যাবে না ক্লক। তবু, দেখি।
একটা ছবি নামিয়ে প্রথমে খালি চোখে পরীক্ষা করে দেখলো শোঁপা। কিছু বোঝা গেল না। পকেটনাইফ বের করে ক্যানভাসের এক কোণায় রঙ চেঁছে তুলে ফেললো।
না, একেবারেই বাজে জিনিস, ঠোঁট বাঁকালো সে। বইয়েই খুঁজতে হবে। লুকানো চাবি-টাবিও রেখে যেতে পারে। এক ধার থেকে সব বই দেখবো।
দাঁড়ান! একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়।
কী?
মেসেজের বাকিটা উদ্ধার করতে পারবো মনে হচ্ছে।
কিভাবে!
বই থেকে শব্দ বাছাই করে মেসেজ তৈরির সময় অনেকেই শব্দের তলায় দাগ দিয়ে রাখে। সুবিধে হয়। মিস্টার ক্লকও ওরকম কিছু করে থাকলে…
আরি, খেয়াল করলাম না তো দাগ আছে কিনা! দেখি আবার? তাড়াতাড়ি আবার বইটা খুলে দেখলো শোঁপা। ঠিক! ঠিকই বলেছো তুমি। দাগ দিয়েছে। পেন্সিলের হালকা দাগ, এতো আবছা, প্রায় চোখে পড়ে না। দেখো।
বইটা হাতে নিয়ে এক এক করে পাতা ওল্টাতে শুরু করলো কিশোর, খুব ধীরে। মনোযোগ দিয়ে দেখছে প্রতিটি পাতার প্রতিটি লাইন। এবার কাগজ-কলম। নিয়েছে শোঁপা। অবশেষে একটা পাতায় থেমে একটা শব্দ বললো কিশোর। লিখে নিলো শোঁপা।
মোটা বই। অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হলো কিশোরকে। দিলো। এসব কাজে কষ্ট করতে তার কোনো আপত্তি থাকে না।
শেষ পাতাটাও ওল্টানো শেষ হলো। আর শব্দ নেই। বই বন্ধ করলো কিশোর।
শেষ, না? শোঁপা বললো। প্রথম থেকে পড়ি। স্ট্যাণ্ড ইন দা মিডল অভ দা রুম অ্যাট ওয়ান মিনিট টু মিডনাইট। হ্যাভ টু ডিটেকটিভস অ্যাণ্ড টু রিপোর্টারস উইদ ইউ। হোল্ড হ্যাঁণ্ডস, মেকিং আ সার্কল, অ্যাণ্ড কীপ অ্যাবসলুটলি সাইলেন্ট ফর ওয়ান মিনিট। অ্যাট মিডনাইট এক্সাক্টলি দা অ্যালার্ম অভ দা স্ক্রীমিং ক্লক হুইচ আই সেন্ট ইউ শুড গো অফ। হ্যাভ ইট সেট অ্যাট ফুল ভলিউম। লেট দা স্ক্রীম কনটিনিউ আনটিল মাই হাইডিং প্লেস ইজ আনকাভারড।
পড়া শেষ করে মুখ তুলে তাকালো শোঁপা। কিছু বুঝলে?
ভুরু কুঁচকে ভাবছিলো কিশোর, দাঁত দিয়ে নখ কাটছে, শোঁপার প্রশ্নে মুখ। তুললো। উঁম?
আবার একই প্রশ্ন করলো শোঁপা, কিছু বুঝলে?
মানে তো সহজ, মুখ থেকে আঙুল সরালো কিশোর। মাঝরাতের এক মিনিট আগে, অর্থাৎ এগারোটা উনষাট মিনিটে ঘরের ঠিক মাঝখানে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। দাঁড়ালাম। দুজন গোয়েন্দা আর দুজন সাংবাদিককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা পাবো, কিন্তু সাংবাদিক আনা সম্ভব না। নাকি?