কেন, মনে নেই? একবার পড়লেই তো সব মনে থাকে তোমার, উৎকণ্ঠা। চাপা দিতে পারলো না শোঁপা, প্রকাশ পেয়ে গেল কণ্ঠস্বরে।
প্রথম দুটো মনে আছে, কিন্তু তৃতীয়টার মানেই বের করতে পারিনি। অর্ধেকটা আমার কাছে, বাকি অর্ধেক লারমারের…প্রথম মেসেজটাতে লিখেছেঃ আই সাজেস্ট ইউ সী দা বুক। দ্বিতীয়টাতেঃ ওনলি আ রুম হোয়্যার ফাদার টাইম হামস।
বই? কিসের বই? ঘড়ি কোন ঘরে গুঞ্জন করে, সেটা বোঝা সহজ। জানি আমরা। আমার মনে হয়, ওই ঘরটায় গেলেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।
মোড়ের কাছে গাড়ি রাখতে বললো শোঁপা।
নেমে সবাই হেঁটে চললো ক্লকের বাড়ির দিকে। ওদেরকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এসে মায়ের খোঁজে চললো টিম। মাআ! মাআ! বলে ডাকলো।
ভাঁড়ার ঘর থেকে শব্দ শোনা গেল। দরজায় জোরে জোরে কিল মারছে।
দরজার বাইরের হুড়কো খুলে দিলো, টিম। সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা খুলে বেরিয়ে এলো তার মা। তুই এসেছিস, টিম! ওই শয়তান লারমার আর সঙ্গীরা! আটকে ফেললো ভাঁড়ারে.. .আরে, পুলিশ নিয়ে এসেছিস দেখি। ভালোই হয়েছে। এখুনি ব্যাটাদের অ্যারেস্ট করতে বল।
ওদের ব্যবস্থা হয়েছে, ম্যাডাম, টিমের মায়ের সামনে এসে ফরাসী কায়দায় বাউ করলো শোঁপা। আপনাদের ভালো চাই।
মা, ইনি মিস্টার শোঁপা। বলছেন, বাবা নাকি নির্দোষ।
তাই নাকি? ইনি জানেন আমার স্বামী নিরপরাধ?
জানি, ম্যাডাম। তবে সেটা পুলিশের কাছে প্রমাণ করতে হরে। আর সেই প্রমাণ রয়েছে মিস্টার ক্লকের ঘরে। ও, ক্লক কে জানেন না বোধহয়। রোজার, জেমস রোজার। তার আরেক নাম হ্যারিসন ক্লক। লাইব্রেরির কিছু জিনিস নষ্ট করতে হতে পারে, সবই আপনাদের ভালোর জন্যে। আপত্তি আছে?
আপত্তি! মোটেই না। তবু টিমের বাবাকে ছাড়িয়ে আনুন।
থ্যাংক ইউ। আপনি এখানেই থাকুন। রবিন, টিম, তোমরাও থাকো। আমরা ঢুকি। শোনো, কারো সাথে যোগাযোগ করবে না। ফোন এলে ধরবে না। ঠিক আছে?
ধরবো না, টিমের মা বললো। ছেলেদের নিয়ে রান্নাঘরে যাচ্ছি আমি। খেয়েছি সেই কখন। খিদেয় পেট জ্বলছে। আপনারা যান, মিস্টার শোঁপা।
মহিলাকে আরেকবার ধন্যবাদ দিয়ে কিশোরের দিকে ফিরলো শোঁপা। চলো, পথ দেখাও।
.
ঐদিকে যখন মহা-উত্তেজনা, মুসা ওদিকে ড্রইং রুমে বাবার সঙ্গে বসে টেলিভিশন দেখছে। চোখই শুধু রয়েছে পর্দায়, মন বসাতে পারছে না। হ্যারিসন ব্লক আর তার আজব ঘড়ির কথা ভাবছে।
বাবা, জিজ্ঞেস করলো মুসা, হ্যারিসন ক্লকের নাম শুনেছো? রেডিওতে নাটক করতো। নানারকম চিৎকার করতো আরকি।
হ্যারিসন ক্লক? চিনি। তেমন পরিচয় ছিলো না। গোটা দুই ছবির শুটিং করার সময় দেখা হয়েছে তার সঙ্গে। চেঁচাতে পারতো! রক্ত ঠাণ্ডা করে দিতো। একেবারে। পুরানো একটা নাটকে এক কাণ্ড করেছিলো সে।
কাণ্ড! আনমনে হাত বাড়িয়ে সামনের টেবিলে রাখা প্লেট থেকে কয়েকটা পোট্যাটো চিপসতুলে মুখে পুরলো মুসা। কি কাণ্ড, বাবা?
অ্যাঁ? মুসার কথায় মন নেই বাবার। ওয়েস্টার্ন ছবি হচ্ছে টিভিতে। কাহিনীতে গতি এসেছে।
আরার একই প্রশ্ন করলো মুসা।
পর্দা থেকে চোখ না সরিয়ে অনেকটা অন্যমনস্ক হয়েই জবাব দিলেন মিস্টার আমান।
চোখ মিটমিট করলো মুসা। তার বাবা এখন যে তথ্যটা জানালেন, নিশ্চয় জানে না কিশোর। মেলাতে পারছে না মুসা, কিন্তু মনে হচ্ছে, কোথায় একটা যোগসূত্র রয়েছে। কিশোর হয়তো বুঝবে। ডাকবে নাকি? বলবে? তথ্য মূল্যবান হলে, কাঁচা ঘুম থেকে ডেকে তুললেও কিছু মনে করবে না কিশোর।
দ্বিধা করছে মুসা। এই সময় বলে উঠলেন মিস্টার আমান, অনেক রাত হয়েছে। যাও, ঘুমাতে যাও।
যাচ্ছি।
সিঁড়ির গোড়ায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই হাই উঠতে আরম্ভ করলো তার। ভাবলো, থাক এখন। সকালে জানালেই হবে কিশোরকে।
.
১৯.
লাইব্রেরিতে ঢুকেই কাজে লাগলো শোঁপা, মুহূর্ত সময় নষ্ট করলো না। দুই সহকারীকে দরজা-জানালার সমস্ত পর্দা টেনে দিতে বলে, নিজে গিয়ে আলো জ্বাললো। চোখ বোলালো সারা ঘরে।
শত শত বই, নিজে নিজেই কথা বলতে লাগলো। তিনটা পেইনটিং, বাজে। বড় একটা আয়না। অনেক ঘড়ি। দেয়ালে কতগুলো খোপ, বহু জিনিস রাখা যাবে। মেসেজে বলেছে, বইয়ে দেখার জন্যে। দ্বিতীয়টাতে বলেছে, ঘড়ির ঘরে খুঁজতে। তৃতীয়টায় বলেছে…কিশোর, দেখি তো তোমার অর্ধেকটা।
বের করে দিলো কিশোর।
নম্বরগুলো দেখতে দেখতে ভুরু কুঁচকে গেল শোঁপার। কোন পাতা, আর কতো নম্বর শব্দ, সেটা বোঝাতে চেয়েছে। বইটা পেলে কয়েক মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু কোন বই? কিশোর, কোন্ বইয়ের কথা বলেছে?
বুঝতে পারছি না। বইটা হয়তো এ-ঘরেই আছে।
হুঁ, আমারও তা-ই মনে হয়। এসো না কয়েকটা খুঁজে দেখি।
কাছের তাকটা থেকে তিন-চারটে বই নামিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখলো শোঁপা। তারপর আবার তুলে রেখে দিলো।
না, কিছুই বোঝা যায় না। এতো বই, কটা দেখবো? পুরো মেসেজটা থাকলে…তোমার মাথাটা খাটাও তো কিশোর। পারলে তুমিই পারবে।
নিচের ঠোঁটে জোরে জোরে চিমটি কাটতে আরম্ভ করলো কিশোর।
মিস্টার শোঁপা… কিছুক্ষণ পর বললো সে।
হ্যাঁ?
মেসেজগুলো হেনরি মিলারের জন্যে পাঠানো হয়েছিলো। তিনি হয়তো সমাধান করতে পারবেন। অন্তত কোনো সূত্র-টুত্র তো দিতে পারবেনই। নিশ্চয় বইটার নামও জানেন।
ঠিক বলেছো, তুড়ি বাজালো শোঁপা। ফোন করে জিজ্ঞেস করো।