হ্যাঁ, তা দিয়েছিলাম, স্বীকার করলো কিশোর। চমকে গিয়েছিলাম জানালায়। পুলিশ দেখে। সত্যি বলবো? অসমাপ্ত কাজ পছন্দ নয় আমার। সব শেষ করে গিয়ে পুলিশ ডাকার আলাদা মজা…
জোরে হেসে উঠলো শোঁপা। পুলিশ, না? ভেবো না, তোমার মজা নষ্ট হয়নি। ওরা পুলিশ নয়। পুলিশের পোশাক পরে আছে। পুরনো কাপড়ের দোকান থেকে ওরকম ইউনিফর্ম সহজেই জোগাড় করা যায় আজকাল সেই যে প্রবাদ। আছে নাঃ বাইরের চেহারা দেখে ভুলো না। হাহ্ হাহ্ হা!
ঢোক গিললো কিশোর। তেতো হয়ে গেল মন। তাকে কেউ বোকা বানিয়ে আনন্দ পাক, এটা সহ্য করতে পারে না সে। শোঁপার প্রতি তার বিদ্বেষ বাড়লো।
টিম, গায়ের সঙ্গে চেপে বসা টিমকে বললো কিশোর। মিস্টার শোঁপার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে আমার। তোমাকে আর রবিনকে মুক্ত করবেন। তার কথা তিনি রেখেছেন। আরও একটা কাজ করার কথা দিয়েছেন তিনি, তোমার বাবাকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন।
করবেন? প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো টিম। ইস্, কি ভালোই না হতো!
ভেবো না, শোঁপা বললো, হয়ে যাবে। আমি যখন হাত দিয়েছি…শোঁপার জন্যে কঠিন কিছুই নেই। হ্যাঁ, কিছু কথা তোমাদের জানানো দরকার। কিশোর, নিশ্চয় আন্দাজ করতে পারছো, হ্যারি কুক ভালো লোক ছিলো না। বাইরে অভিনেতার খোলস, আসলে ছিলো চোরের সর্দার। দামী দামী ছবি চুরি করে সেগুলো ধনী ক্রেতার কাছে বিক্রি করা ছিলো তার দলের কাজ।
হুঁ, সে-জন্যেই, বলে উঠলো রবিন, নাম পাল্টে রহস্যময় আচরণ করতো ক্লক। চোর ছিলো, বলেই। চুরি করে এনে রান্নাঘরে ছবিগুলো তাহলে সে-ই লুকিয়েছিলো।
চুরি হয়তো সে করেনি, অন্য কেউ করে এনে তার হাতে দিয়েছে। অনেক সহকারী ছিলো তার। ডিংগো তাদের একজন। আগে জকি ছিলো। জকি মানে, জানো তো? রেসের ঘোড়ার পেশাদার ঘোড়সওয়ার। ডিংগোর আরও সহকর্মী ছিলো। সব কজন অসৎ। ফলে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হলো ওদেরকে। ছোট হালকা শরীর, জানালা দিয়ে সহজেই ঢুকতে পারে। তাই ওদেরকে বেছে নিলো ক্লক। ছবি চুরি করে এনে ক্লকের কাছে দিতো ওরা। ক্লক সেগুলো নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতো ধনী দক্ষিণ আমেরিকানদের কাছে। যাদের কাছে বেচতো, তারাও লোক সুবিধের না।
বছর দুই আগে কয়েকটা ছবি চুরি করার পর বেশি গোলমাল শুরু করলো পুলিশ। ওগুলো পাচার করার সুযোগ পেলো না ক্লক। যার কাছে বিক্রি করার কথা, ছিলো, সেই লোকটা জড়িয়ে পড়লো রাজনৈতিক গণ্ডগোলে, ধরে তাকে জেলে। ভরে দিলো তার দেশের সরকার। ছবিগুলো লুকিয়ে ফেলতে বাধ্য হলো ক্লক। ইচ্ছে ছিলো, সময় সুযোগমতো পরে কারো কাছে বিক্রি করবে। ইতিমধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে আসবে পরিস্থিতি।
ডিংগো আর মারকোর টাকা দরকার। কয়েক দিন পর আরও তিনটে ছবি চুরি করে আনলো ওরা। আগেরগুলোই বিক্রি করতে পারেনি ক্লক, আরও তিনটে নিয়ে কি করবে? কিন্তু সে-কথা শুনতে চাইলো না দুই চোর। ওরা চাপাচাপি শুরু করলো টাকার জন্যে। ক্লককে বললো, টাকা দিতে না পারলে ছবিগুলো ফেরত দিয়ে দিক। আগের পাঁচটা ছবি লুকিয়ে ফেলেছে ক্লক, বের করতে চাইলো না। দশ লাখ ডলারের মাল, কে হাতে পেয়ে ফেরত দিতে চায়?
একটা রফা হয়তো হয়ে যেতো, কিন্তু কাকতালীয় একটা ব্যাপার ভণ্ডুল করে দিলো ক্লকের সমস্ত পরিকল্পনা। পুলিশের চোখ পড়লো টিমের বাবার ওপর। শেষ তিনটে ছবি চুরির ব্যাপারে তাকে সন্দেহ করে বসলো ওরা। এটা বুঝতে পেরে এক চাল চাললো ক্লক। ছবিগুলো লুকিয়ে রাখলো রান্নাঘরে। যাতে ওগুলো খুঁজে পায় পুলিশ, দোষ চাপে গিয়ে বেকার ডেলটনের ঘাড়ে।
আ-আমার বাবাকে ফাঁসিয়েছে! ক্লঅক! তিক্ত কণ্ঠে বললো টিম, বিশ্বাস করতে পারছে না। অথচ আমি আর মা ভাবতাম কতো ভালো মানুষ!
এই দুনিয়ায় লোক চেনা মুশকিল! হ্যাঁ, তোমার বাবাকে ক্লকই ফাঁসিয়েছে। এর কিছুদিন পরই রহস্যজনক ভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। আমার বিশ্বাস, টাকার জন্যে চাপ দিচ্ছিলো ডিংগো, মারকো আর লারমার। দিতে পারেনি বলেই পালিয়েছিলো ক্লক। দক্ষিণ আমেরিকাতে লুকিয়েছিলো। পুলিশ আর সহকারীদের চোখে ধুলো দিলেও আমাকে ফাঁকি দিতে পারেনি। দুনিয়ার সব জায়গায় লোক আছে আমার।
যোগাযোগ করলাম ওর সাথে। চুক্তিতে আসতে চাইলাম। ঘঘাড়েল লোক, কিছুতেই রাজি হলো না। রাগ করে চলে এলাম। নিজেই খুঁজে বের করার চেষ্টা, করলাম ছবিগুলো। কিছু দিন পর অসুখে পড়লো ক্লক। ডাক্তার বলে দিলো, বাঁচবে না। লোকের মুখে শুনলাম, টিমের বাবার জন্যে অনুতপ্ত সে। তাদের জন্যে কিছু করতে চায়। অদ্ভুত কতগুলো মেসেজ লিখে কয়েকজন বন্ধুর কাছে পাঠালো। সেই সাথে একটা আজব চেঁচানো ঘড়ি। এর কিছু দিন পর মারা গেল সে।
ঘড়ি আর মেসেজগুলো কেন পাঠালো, জানেন? রবিন জিজ্ঞেস করলো। তার চেয়ে পুলিশের কাছে একটা চিঠি লিখে সব বলে দিলেই কি ভালো হতো না? নির্দোষ জানলে টিমের বাবাকে ছেড়ে দিতে পুলিশ, হয়তো বিনা দোষে জেলে পাঠানোর জন্যে ক্ষতিপূরণও দিতো।
আসলে ক্লক লোকটাই ছিলো জটিল। সহজ কাজ সহজভাবে না করে খালি প্যাঁচের মধ্যে যেতো। তবে কেন করেছে, তারও নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। সবগুলো মেসেজের সমাধান হলেই বুঝতে পারবো।
মেসেজ তো পুড়িয়ে ফেলেছে, মনে করিয়ে দিলো কিশোর। মানে আর বের করবেন কিভাবে?