পুলিশ! চেঁচিয়ে উঠলো ডিংগো।
বিড়বিড় করে স্প্যানিশ ভাষায় কি বললো মারকো, বোঝা গেল না।
চুপ! ধমকে উঠলো আরেকজন পুলিশ। জলদি হাত তোলো। পালাতে পারবে না। যা বলছি করো।
ধীরে ধীরে হাত তুললো ডিংগো আর মারকো। লারমার পিছিয়ে গেল ওয়ার্কবেঞ্চের কাছে। মনে হলো, কিছু একটা অস্ত্র খুঁজছে।
কিন্তু পুলিশের নজর আছে ওর ওপর। চিৎকার করে উঠলো প্রথম লোকটা, এই, কি করছো? হাত তুলতে বললাম না?…আরে, পুড়ছে কী!
মেসেজগুলো পুড়ছে! চেঁচিয়ে বললো কিশোর।
বেঞ্চের ওপর ব্রোল্যাম্পটা জ্বলছে, তার শিখাতেই কাগজগুলো পোড়াচ্ছে লারমার। দেখতে দেখতে পুড়ে ছাই হয়ে গেল ওগুলো।
নাও, করো এবার সমাধান, দাঁত বের করে হাসলো লারমার।
প্রথম দুটো মনে আছে আমার, পুলিশের দিকে তাকিয়ে বললো কিশোর। কিন্তু তিন নম্বরটা…, হাত ওল্টালো সে। নাহ, ক্লক কি বোঝাতে চেয়েছে, জানবো না!
কেন, মগজ খাটাও, হেসে উঠলো লারমার। ডিংগো আর মারকোর দিকে চেয়ে হাসি মুছে গেল। গাধা কোথাকার! হিসিয়ে উঠলো সে। খসিয়ে দিয়ে না এসেছিলে! এই বিচ্ছু ছেলেটা টেক্কা মেরে দিলো তোমাদের ওপর। পুলিশকে ঠিকই খবর দিয়ে এসেছে। আর তোমরা… রাগে বাক্যটা শেষ করতে পারলো না সে, দাঁতে দাঁত চাপলো।
বিশ্বাস করুন, পুলিশকে কিচ্ছু বলিনি আমি, লারমারের মতোই অবাক হয়েছে কিশোরও। কি করে ঘটলো এটা, বুঝতে পারছে না।
পিস্তল ধরে রাখো, মিক, একজন পুলিশ আরেকজনকে বলে সরে গেল জানালার কাছ থেকে। ঘুরে গিয়ে তুলে দিলো গ্যারেজের দরজা। ঘরে ঢুকলো, ততীয় আরেকজন। পেছনে আবার নামিয়ে দেয়া হলো দরজা।
ছায়া থেকে আলোয় এসে দাঁড়ালো লোকটা। হাসি হাসি মুখ। বললো, বাহ, চমৎকার। সব কিছু কন্ট্রোলে এসে গেছে।
কপাল কুঁচকে ফেললো কিশোর। কোনোমতে শুধু বললো, মিস্টার শোঁপা! বুঝতে পারছে না, পুলিশের সঙ্গে চোরের খাতির হৃলো কিভাবে।
.
১৮.
হ্যাঁ, আমি, বললো শোঁপা। বিখ্যাত আর্ট থিফ, তিন মহাদেশের পুলিশ যার জ্বালায় অস্থির। লারমারের দিকে তাকালো। কি করে ভাবলে, তোমাদের মতো তিনটে শুয়োপোকা আমাকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাবে?
মনে হলো, লারমারও শোঁপার নাম শুনেছে। কালো হয়ে গেছে মুখ, চোখে অস্বস্তি। দুই সহকারীর মতোই নীরব। কিছু করার নেই। পরিস্থিতি আয়ত্তের। বাইরে চলে গেছে।
কিন্তু…কিন্তু… বুঝতে পারছে না কিশোর। আপনাকে খসিয়ে দিয়েছিলো ওরা। আমি নিজেও দেখেছি, আপনার গাড়িটা দেখা যায়নি। চিনে এলেন কি করে?
যে পেশায় আছি, সাবধান তো হতেই হয় আমাকে, তাই না, হালকা গলায় বললো শোঁপা। এগিয়ে এসে কিশোরের জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ঘোট, চ্যাপ্টা একটা জিনিস বের করলো। এটা ইলেকট্রনিক সিগন্যালিং ডিভাইস। ইয়ার্ডে তোমার সঙ্গে কথা বলার সময় এক ফাঁকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। আমার গাড়িতে রেডিও রিসিভার আছে। তোমার পকেটে যন্ত্রটা একনাগাড়ে সঙ্কেত দিয়ে, যাচ্ছিলো। কাজেই, ফ্রীওয়েতে গাড়ি দেখে অনুসরণ করতে হয়নি আমাকে। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম কখন কোন দিকে যাচ্ছে ভ্যান। তোমরা গ্যারেজে ঢোকার কয়েক মিনিট পরেই চলে এলাম আমরাও। তারপর আর কি? আমার দুজন সহকারীকে পাঠালাম কাজ শেষ করতে।
মিস্টার শোঁপা! কথা বললো রবিন। চেয়ারে বাধা, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রয়েছে লোকটার দিকে। কাল আপনিই আমাদের গাড়ির পিছু নিয়েছিলেন, না? ঘড়ি চুরি করেছেন।
বাউয়ের কায়দায় মাথা নোয়ালো শোঁপা। সরি, বয়, আমিই। তবে তোমাদের কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছে ছিলো না। বরং সাহায্যই করতে চেয়েছি, যাতে কাজে আরও তাড়াতাড়ি সফল হও। সে যাক, সময় খুব কম। নইলে আরও কথা বলতাম তোমাদের সঙ্গে, ভালোই লাগছে। হাজার হোক, পুরনো বন্ধু, হাসলো সে। সহকারীদের দিকে চেয়ে বললো, দাঁড়িয়ে আছো কেন? হাতকড়া লাগাও।
গ্যারেজের মাঝখানে ইস্পাতের একটা খুঁটি বসানো রয়েছে, ছাতের ভার রাখার জন্যে। পিস্তলের মুখে তিন চোরকে ওই খুঁটির কাছে নিয়ে গেল দুই পুলিশ। তিনজনকে মুখোমুখি দাঁড় করালো। তিন জোড়া হাতকড়া দিয়ে একজনের ডান হাতের সঙ্গে আরেকজনের বা হাত বেঁধে দিলো। খুঁটিটাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারবে ওরা এখন। বসতে পারবে, দাঁড়াতেও পারবে, কিন্তু যেতে পারবে না কোথাও।
বাহ, ভালো বুদ্ধি করেছে, প্রশংসা করলো শ্রোপা। এবার যাওয়া দরকার। কাজ পড়ে আছে।
এক মিনিট, শোঁপা, লারমার বললো। এক সাথে কাজ করলেও তো পারি, আমরা। সুবিধে হয় তাহলে। জিনিসগুলো তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে পারবো। কি বলো?
কি সুবিধে হবে? লারমারের কথায় গুরুত্বই দিলো না শোঁপা। তোমরা যতোখানি জানো, আমিও জানি। আমাকে ফাঁকি দিয়ে একাই মেরে দিতে। চেয়েছিলে। মারো এখন। তোমাদের সাথে কাজ করার কোনো দরকারই এখন। আমার নেই। দেখতেই পাচ্ছো, পুলিশ আমার সঙ্গে রয়েছে। নীল পোশাক পরা। দুজনকে বললো, ছেলেগুলোকে খোলো। হ্যারি ক্লকের বাড়িতে যেতে হবে: আবার।
কিছুক্ষণ পর গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে এলো তিনজন লোক, আর তিন। কিশোর। কালো একটা সেডান গাড়িতে চড়ে স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চললো হলিউডের রাস্তা ধরে।
আপনমনেই হাসলো শোঁপা।
কি ভাবছো? পাশে বসা কিশোরকে জিজ্ঞেস করলো সে। নিশ্চয় আশা ছেড়ে দিয়েছিলে। আমার গাড়িটা হারিয়ে যেতে দেখে।