হেডলাইট দেখা গেল। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে একটা ছোট ভ্যান। কিশোরের পাশে এসে দাঁড়ালো। ঝটকা দিয়ে খুললো দরজা। মুখ বের করলো। ডিংগো।
আছো, খসখসে কণ্ঠস্বর। এসো, ওঠো।
.
১৭.
হলিউডের দিকে চলেছে গাড়ি। চালাচ্ছে মারকো। ডিংগো আর মারকোর মাঝে গাদাগাদি করে বসেছে কিশোর।
মেসেজগুলো নিয়েছে তো? একসময় জিজ্ঞেস করলো মারকো।
নিয়েছি, শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো কিশোর।
গুড, বললো ডিংগো। আরি, মারকো?
রীয়ার-ভিউ মিররের দিকে তাকিয়ে আছে মারকো। দেখেছ, মনে হয় ফলো কুরছে।
ফলো! চেঁচিয়ে উঠলো ডিংগো। খপ করে চেপে ধরলো কিশোরের হাত। এই ছেলে, পুলিশকে…
না, স্যার, তাড়াতাড়ি বললো কিশোর। আতঙ্কিত। সবটা অভিনয় নয়। শোঁপার গাড়িটা দেখে ফেলেছে ওরা। সত্যি সত্যি বিপদ হতে পারে এবার।
পুলিশ নয়? কঠিন কণ্ঠে বললো মারকো। তাহলে কে? কি হলো, কথা বলছো না কেন? কে?
আমি কি করে জানবো? পুলিশকে বলিনি। কাউকেই জানাইনি আমি।
কে তাহলে?
মেসেজের কথা জানে এমন কেউ হতে পারে। কাল ঘড়িটা চুরি হয়ে গেছে, টিমের গাড়ি থেকে। আমরা তো ভেবেছি আপনারা নিয়েছেন।
আমরা নিইনি।
তাহলে ওই লোকটাই নিয়েছে, বুড়ো আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করলো কিশোর। আমার ওপর চোখ রেখেছিলো হয়তো। এখন পিছে পিছে আসছে। কোথায় যাচ্ছি দেখতে চায়।
হ্যাঁ, তা হতে পারে, মাথা দোলালো ডিংগো। ঘড়ি খোয়া যাওয়ার কথা লারমারকে বলেছে টিম। তার মানে মিথ্যে বলেনি। মালের পেছনে আরও লোক লেগেছে। মারকো, জলদি খসাও।
খসাচ্ছি। দেখি কততক্ষণ লেগে থাকতে পারে।
আরও মিনিট দুই একই গতিতে গাড়ি চালালো মারকো। ফ্রীওয়ের কাছে এসে, হঠাৎ গতি বাড়িয়ে দিলো, পলকে ফ্রীওয়েতে উঠে ঢুকে গেল গাড়ির ভিড়ে। দেখতে দেখতে চলে এলো অনেকগুলো গাড়ির মাঝামাঝি। তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে গাড়িগুলো, হলিউডের দিকে।
লস অ্যাঞ্জেলেস আর হলিউডের মাঝে বিছিয়ে রয়েছে যেন ফ্রীওয়ের জাল, নানাদিক থেকে বেরিয়ে একটার সঙ্গে আরেকটা মিশেছে অসংখ্য পথ, আশপাশের সমস্ত এলাকার সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের যোগাযোগ রক্ষা করেছে। সারাটা দিন আর রাতেরও বেশির ভাগ সময় অগুণতি গাড়ি চলাচল করে ওসব পথে। রাতের এই সময়েও সিক্স লেন হাইওয়ের একটা লেন ফাঁকা নেই। নানারকম গাড়ি আর ট্রাক ছুটে চলেছে ভীষণ গতিতে।
অ্যাক্সেলারেটরে পায়ের চাপ বাড়িয়ে পাশে সরতে শুরু করলো মারকো, গাড়ির ভিড় থেকে বের করে আনতে চায় ভ্যান। মিনিট দুয়েক পর পেছনের গাড়িটা আর দেখা গেল না, হারিয়ে গেছে বোধহয় বড় বড় কয়েকটা ট্রাকের পেছনে। সন্তুষ্ট হতে পারলো না মারকো। আরও দশ মিনিট ধরে কয়েকবার করে গাড়ির ভিড়ে ঢুকলো আর বেরোলো। শেষে আউটার লেনে বেরিয়ে শা করে মোড় নিয়ে নেমে এলো একটা একব্জিট র্যাম্প-এ-হাইওয়ে থেকে বেরোনোর মুখ।
নিচের সিটি স্ট্রীটে নেমে গতি কমালো মারকো। তাকালো রীয়ার-ভিউ মিররের দিকে। এতোক্ষণে সন্তুষ্ট হলো। নেই।
স্বাভাবিক গতিতে চলছে এখন ভ্যান। মনে মনে দমে গেছে কিশোর। শোঁপার ওপর ভরসা করেছিলো সে। কিন্তু মারকোর সাথে পারেনি শোঁপার ড্রাইভার, সাহায্যের আশাও শেষ।
কিছুক্ষণ পর দুটো বাড়ির মাঝের গলিপথে ঢুকলো ভ্যান। মোড় নিয়ে ঢুকলো। একটা ড্রাইভওয়েতে। বড় একটা গ্যারেজের সামনে এসে দাঁড়ালো। একবার হর্ন বাজালো মারকো। মুহূর্ত পরেই গ্যারেজের একটা দরজা উঠে গেল। ভ্যান ভেতরে ঢুকতেই নেমে গেল আবার।
একপাশের দরজা খুলে মারকো নামলো। আরেক পাশেরটা খুলে কিশোরকে নিয়ে নামলো ডিংগো।
লারমারকে দেখতে পেলো কিশোর। তার পেছনে বসে আছে রবিন আর টিম, চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা।
কোনো অসুবিধে হয়েছিলো? জিজ্ঞেস করলো লারমার। দেরি করে ফেলেছো।
একটা গাড়ি পিছু নিয়েছিলো, মারকো জানালো। ওটাকে খসাতে সময় লাগলো। ছেলেটা বলছে পুলিশ নয়। ঘড়ি-চোরটা হতে পারে। কাল টিমের বাড়ি থেকে নাকি নিয়ে গিয়েছিলো।
আসেনি, ভালোমতো দেখেছো তো?
মাথা ঝাঁকালো মারকো।
গুড। কড়া চোখে কিশোরের দিকে তাকালো লারমার। কোনো চালাকি টালাকি করলে বুঝবে মজা। তো, মেসেজগুলো এনেছো তো? হাত বাড়ালো। দেখি?
পকেট হাতড়ে একটা কাগজ বের করলো কিশোর। এই যে, মিস্টার লারমার, পয়লা মেসেজটা।
হাতে নিয়ে পড়লো লারমার। কিশোরের লেখা কাগজঃ আই সাজেস্ট ইউ সী দা বুক। হ্যাঁ, তোমার বন্ধু বলেছে-এটার কথা। কি বই?
জানি না।
দ্বিতীয় মেসেজে কিছু বলেনি?
এই যে, স্যার, নিয়ে এসেছি। নিজের চোখেই দেখুন।
ওনলি আ রুম হোয়্যার ফাদার টাইম হামস! মানে কি?
বোধহয় মিস্টার ক্লকের ঘড়ি-ঘরের কথা বলেছে। সেখানে অসংখ্য ঘড়ি, সারাক্ষণ গুঞ্জন করছে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো। তা-ই বুঝিয়েছে। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি ঘরটা, কিছুই পাইনি। দেখি, তৃতীয় মেসেজের অর্ধেকটা আছে আমার কাছে, পকেট থেকে ছেঁড়া কাগজটা বের করলো লারমার।
কিশোরও পকেটে হাত ঢোকালো।
এই সময় ঘটলো ঘটনা। ঝনঝন করে ভাঙলো দুপাশের জানালার কাঁচ। ঝটকা দিয়ে পাল্লা খুলে গেল। পর মুহূর্তেই হ্যাঁচকা টানে পর্দা সরলো। জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে দুজন নীল পোশাক পরা লোক, হাতে অটোমেটিক পিস্তল।
হাত তোলো! লারমার, মারকো আর ডিংগোকে আদেশ দিলো একজন পুলিশ। কুইক!