তাহলে আবার বললো শোঁপা, চিনতে পেরেছে। সেবারেই বুঝেছো, বেশি। চালাকি পছন্দ করি না আমি। কিছুক্ষণের জন্যে ছাড়তে পারি এখন, কথা বলবো। চেঁচাতে পারবে না। চেঁচালে নিজেই ক্ষতি করবে। বিশ্বাস করো কথাটা।
বিশ্বাস করলো কিশোর। কোনোমতে মাথা ঝাঁকালো।
মুখ থেকে হাত সরালো শোঁপা। তারা, আর দূর থেকে আসা ইলেকট্রিক বাল্বের আবছা আলোয় লোকটার মুখের আদল দেখতে পেলো কিশোর। হাসিটাও চেনা পেল।
খুব অবাক হয়েছে না? শোঁপা বললো। কেন, একবারও মনে পড়েনি আমার কথা? এক মিলিয়ন ডলারের চোরাই ছবি, অথচ শোঁপা তার কাছে থাকবে না, এটা কোনো কথা হলো?
চোরাই ছবি? চমকে গেল কিশোর। সেটাই খুঁজছেন নাকি?
কেন, তুমি জানো না? কণ্ঠেই প্রকাশ পেয়ে গেল, বিস্মিত হয়েছে শোঁপা। পাঁচটা চমৎকার ছবি, দশ লাখ ডলার দাম, বছর দুই আগে চুরি গিয়ে এখনও নখোঁজ হয়ে আছে। সেগুলো খুঁজতেই এসেছি আমি। তুমি নিশ্চয় জানো, না। জানার ভান করছে। নইলে কিসের তদন্ত করছো কদিন ধরে?
মিথ্যে বলবো না, একটা চেঁচানো ঘড়ির রহস্য ভেদের চেষ্টা করছি। কিছু সূত্র হাতে এসেছে। বুঝতে পারছিলাম, মূল্যবান কোনো জিনিসের সাথে এর সম্পর্ক আছে। কি জিনিস, জানতাম না।
ঘড়ি? হ্যাঁ, জিনিসটা আমাকে অবাক করেছে। টুকরো টুকরো করে…
আপনি চুরি করেছেন? কাল আপনিই রবিন আর টিমকে তাড়া করেছিলেন?
আমিই করেছি। তোমাদের পেছনেও লোক লাগিয়েছিলাম, কিন্তু গাধাগুলো লেগে থাকতে পারলো না, হারিয়ে ফেললো। গাড়ি রেখে তোমার বন্ধুরা থানার ভেতরে ঢুকলো। এই সুযোগে নিয়ে গেছি ঘড়িটা। সমস্ত যন্ত্রপাতি খুলে ফেলেছি। কোনো সূত্র পেলাম না। আমি ভেবেছি, খোদাই করে কোথাও কিছু লেখা আছে। তুমি নিশ্চয় কিছু পেয়েছো। তোমার যা ব্রেন আর চোখ, নজর এড়াতেই পারে না। কি পেয়েছো?
আপনাকে কেন বলবো? জানেন, আমি চেঁচালে এখুনি ছুটে আসবে বোরিস আর রোভার। ওদের একজনের সঙ্গেই পারবেন না আপনি। ধরে থানায় নিয়ে যাওয়াটা কোনো ব্যাপারই না।
শব্দ করে হাসলো শোঁপা। ভালো, খুব ভালো। তোমার মতো সাহসী ছেলেদের পছন্দ করি আমি। কিন্তু তুমিই বা কি করে ভাবলে, আমি একা এসেছি? ইচ্ছে করলে আমিও তোমাকে…যাকগে, হুমকি দিয়ে লাভ নেই। আমি তোমাকে একটা অফার দিচ্ছি, বিনিময়ে কিছু চাইবো। আমি তোমাকে সাহায্য করবো, তুমিও আমাকে করবে।
আমাকে কি সাহায্য করবেন?
ক্লকের বাড়ির যে ছেলেটার সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব হয়েছে, টিমের কথা বলছি। ওর বাবা জেলে। তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সাহায্য করবো তোমাকে। আমি ছবিগুলো নিয়ে যাবো, তুমি মানুষটাকে জেল থেকে বের করে আনবে। নাকি, রাজি নও??
দ্রুত ভাবছে কিশোর। মাথা আঁকালো। বেশ, করবো। যদি আপনি কথা রাখেন। আরও একটা কাজ করতে হবে আপনাকে।
কী?
সব কথা খুলে বললো কিশোর। রবিন আর টিম এখন কোথায় কি অবস্থায় আছে, আধ ঘন্টার মধ্যে ভ্যান আসবে ইয়ার্ডের গেটে তাকে তুলে নেয়ার জন্যে, নিয়ে যাবে লারমার, মারকো আর ডিংগো যেখানে দুই কিশোরকে আটকে রেখেছে, সেখানে।
ফরাসী ভাষায় কি যেন বললো- শোঁপা। ইংরেজিতে বললো, ওই গাধাগুলো! এতোখানি এগিয়ে যাবে, ভাবিনি। ভেবেছিলাম, ওরা কিছু বোঝার আগেই ছবিগুলো বের করে নিয়ে হাওয়া হয়ে যাবো।
ওদের কথাও জানেন আপনি? অবাক হয়ে বললো কিশোর।
জানি না মানে! শুনলে অবাক হবে, আরও অনেক কিছু জানি আমি। দুসপ্তা ধরে আছি এই শহরে, সূত্র খুঁজছি। তদন্তের নিজস্ব কায়দা আছে আমার। এখানকার অনেক চোর-ডাকাত আর অপরাধীর টেলিফোন লাইন টেপ করে রেখেছি আমি, ওদের গোপন আলোচনা শুনি। ঠিক আছে, তোমার বন্ধুদের মুক্তিরও ব্যবস্থা করবো। ছবিগুলো বের করে নিয়ে চলে যাবো আজ রাতেই। কাল এ-সময়ে থাকবো পাঁচ হাজার মাইল দূরে। হ্যাঁ, ওরা যেভাবে বলেছে, সেভাবেই কাজ করে যাও। গেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো। গাড়ি এসে যেখানে নিয়ে যায়, যাও. লোকজন নিয়ে তোমাদের পেছনেই থাকবো আমি। কিচ্ছু ভেবো না, যা করার আমিই করবো!
কি করবেন?
সেটা তোমার জানার দরকার নেই।
শোঁপাকে বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় নেই। সবুজ ফটক এক দিয়ে বেরিয়ে ঘরের দিকে চললো কিশোর। চেঁচানো ঘড়ির ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছে বলে নিজেকেই গাল দিচ্ছে এখন। রবিন আর টিমকে মুক্ত করতে পারবে তো ফরাসীটা? পারবে, আশা করলো সে।
বসার ঘরে ঢুকে দেখলো, চাচা-চাচী তখনও টেলিভিশন দেখছেন। বললো, রবিন ফোন করেছে। রাতটা ওদের বাড়িতেই কাটাবে। এরকম মাঝে মাঝেই গিয়ে থাকে কিশোর। অমত করলেন না রাশেদ পাশা। মেরিচাচীও কিছু বললেন না। অনুমতি নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো সে। গরম জ্যাকেট পড়লো।
আবার নিচতলায় নেমে, চাচা-চাচীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বেরোলো কিশোর। গেটের দিকে এগোলো।
ওখানে তার জন্যে অপেক্ষা করছে শোঁপা। এগিয়ে এসে কিশোরের কাঁধে হাত রেখে বললো, একটুও চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। গাড়ি এলে। সোজা উঠে পড়বে। ওদের যাতে কোনো সন্দেহ না হয়। বুঝেছো?
বলে আর দাঁড়ালো না শোঁপা। ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো। মিলিয়ে গেল অন্ধকারে। গাড়িটা কোথায়, দেখতে পেলো না কিশোর। ইয়ার্ডের আরেক পাশে হয়তো লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। অন্ধকার খুব বেশি। আর নীরব। কেঁপে উঠলো একবার সে, ঠাণ্ডায় নয়।