কি আর? খেপা কুকুরের মতো ঘড়ঘড় করে উঠলো লারমার। এখুনি অন্য মেসেজগুলো নিয়ে নিতে হবে। কয়েকটা বাচ্চা ছেলে মানে বের করতে পারলে আমরা কেন পারবো না? ওগুলো লাগবে। এই ছেলে, কার কাছে মেসেজগুলো?
কিশোরের কাছে, জবাব দিলো রবিন। ও এখন ঘুমোচ্ছে।
ঘুমোলে চলবে না, জাগতে হবে। ওকে ফোন করে বলো, মেসেজগুলো নিয়ে। যেন এখানে চলে আসে। আমরা সবাই মিলে সমাধান করবো।
বললেই কি আসবে? প্রশ্ন তুললো মারকো।
বন্ধুকে ভালোবাসে ও, তাই না? রবিনের দিকে চেয়ে ভ্রূকুটি করলো লারমার। ওর কোনো ক্ষতি নিশ্চয় চায় না। আমরা বললে খুশি হয়েই মেসেজগুলো নিয়ে হাজির হবে। তুমি কি বলো, ছেলে?
আমি কি করে জানবো? হতাশ হয়েছে রবিন। সে ভেবেছিলো, মেসেজের মানে জেনে না বললে তাদেরকে ছেড়ে দেবে লারমার। ছাড়লো তো না-ই, বরং কিশোরকে আনানোরও মতলব করেছে ব্যাটারা।
আমি জানি, লারমার বললো। সে আসবে। এক কাজ করো, প্রথমে তোমার বাড়িতে ফোন করো। বাবা-মাকে জানিয়ে দাও, জরুরী কাজে আটকা পড়েছে, রাতে বাড়ি ফিরবে না। কিশোরের ওখানে থাকবে। চিন্তা যাতে না করে। তারপর ফোন করো তোমার কোকড়াচুলো বন্ধুকে। আমাদের নির্দেশ জানিয়ে দাও।
ডিংগো, ফোনটা দাও ওকে, মারকো বললো। হাত খুলে দাও।
ওয়ার্কবেঞ্চের ওপর রাখা যন্ত্রটা তুলে এনে রবিনের কোলে রাখলো ডিংগো। নাও, ধরো।
আমি পারবো না, মরিয়া হয়ে বললো রবিন। কাউকে ফোন করবো না। আমি। যা যা জানি সব বলেছি…এখন…এখন… শুকনো ঠোঁট চাটলো সে। আবার এসব করতে বলছেন!
ডিংগো, ইঙ্গিতে ওয়ার্কবেঞ্চটা দেখালো লারমার। ব্রোল্যাম্পটা জ্বেলে আমার হাতে দাও তো।
কথামতো কাজ করলো ডিংগো।
ব্লোল্যাম্পটা শক্ত করে ধরলো লারমার। হিসহিস শব্দে জ্বলছে উজ্জ্বল হলুদ আগুনের শিখা। ধীরে ধীরে সামনে বাড়ালো ওটা সে। মুখে তাপ লাগছে রবিনের। চোখ বন্ধ করে ফেললো।
কি হলো? রিসিভার তোলো, বললো লারমার।
বাড়িতে নাহয় বললাম, মিনমিন করে বললো রবিন। কিন্তু কিশোরকে ওকে কোথায় পাবো?
হেডকোয়ার্টারে।
বললাম না, ও এখন ঘরে ঘুমোচ্ছ।
তাহলে ঘরেও করবে। আর একটি কথাও নয়। তোলো, রিসিভার ভোলো পাঁচ সেকেণ্ড সময় দিচ্ছি। তারপর প্রথমে চুলে লাগাবো আগুন।
১৬.
কিশোর, মহাবিপদে পড়েছি! টেলিফোনে ভেসে এলো রবিনের কণ্ঠ। তোমার সাহায্য লাগবে!,
হয়েছে কি? উদ্বিগ্ন হলো কিশোর।
মিস্টার লারমার, মারকো আর ডিংগো ধরে নিয়ে এসেছে আমাকে টিমকেও।
কিভাবে কি ঘটেছে, জানালো রবিন। শেষে বললো, মাকে বলে দিয়েছি আজ রাতে তোমার সঙ্গে থাকবো। মিস্টার লারমারের ইচ্ছে, তুমি মেরিচাচীকে বলে আসো, আমার সঙ্গে থাকবে। কেউ কিছু সন্দেহ যেন করতে না পারে। হুমকি দিচ্ছেন, কথামতো কাজ না করলে নাকি খুব খারাপ হবে আমাদের। থামলো এক মুহূর্ত। তবে, মেসেজগুলো যদি আনো, আর কাউকে কিছু না বললো, তাহলে ছেড়ে দেবেন কথা দিয়েছেন। কিশোর, কি ভাবছো? কথা শুনবে? আমার পরামর্শ, শুনে না, পুলিশকে…
চটাস করে চড় পড়লো। আঁউ করে উঠলো রবিন। ভেসে এলো লারমারের কর্কশ কণ্ঠ, শোনো ছেলে, বন্ধুকে বাঁচাতে চাইলে, তার অঙ্গহানী করাতে না চাইলে, যা বলেছি করবে। মেসেজগুলো নিয়ে জাঙ্কইয়ার্ডের গেটে দাঁড়িয়ে থাকবে। ঠিক আধ ঘন্টা সময় পাবে। ইতিমধ্যে পৌঁছে যাবে আমার ভ্যান। তুলে আনবে তোমাকে। খবরদার, কাউকে কিছু বলতে পারবে না। বুঝেছো? কথা না শুনলে প্রথমে তোমার বন্ধুর দুটো কাটা আঙুল উপহার পাবে, তারপর একটা কান, তারপর…
ঠিক আছে, মিস্টার লারমার, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। আমি আসছি। গেটে দাঁড়িয়ে থাকবো। গাড়ি পাঠান।
এই তো বুদ্ধিমান ছেলে। কিশোরের মনে হলো আনন্দে ঘোৎ ঘোঁৎ করলো একটা শুয়োর। লাইন কেটে দিয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো একবার। মুসাকে ডাকবে? না; থাক। অযথা তাকে এসবে জড়িয়ে লাভ নেই। লারমারকে ঠিক বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। কি করবে, বোঝার উপায় নেই। হয়তো মিথ্যে হুমকি দেয়নি। মেসেজগুলো চাইছে। দিয়ে দিলেই যদি ঝামেলা চুকে যায়, দেয়াই উচিত। মানে তো জানা-ই হয়ে গেছে দুটোর।
তিনটে মেসেজই-ছেঁড়াটা সহ-গুছিয়ে শার্টের পকেটে নিলো কিশোর। ট্র্যাপড়োরের দিকে এগোতে গিয়ে আবার থামলো। সাবধান হতে দোষ কি? ফিরে এসে একটা কাগজে নোট লিখলোঃ ঘড়ির ঘরে খোঁজ করো আমাদেরকে। তার স্থির বিশ্বাস, ওর ঘরেই রয়েছে সমস্ত রহস্যের চাবিকাঠি; কাগজটা পেপার ওয়েইট চাপা দিয়ে এসে নামলো দুই সুড়ঙ্গে।
হামাগুড়ি দিয়ে পাইপ বেয়ে চলে এলো মুখের কাছে। মুখ বের করে দেখলো আশপাশটা। কারও থাকার কথা নয় এখন এখানে, তবু দেখলো। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হুঁশিয়ার করছে, তাকে। পাইপ থেকে বেরিয়ে হেঁটে গেল সবুজ ফটক এক-এর দিকে।
সবে পৌঁছেছে, খুলবে, এই সময় ছায়া থেকে বেরিয়ে এলো একটা ছায়ামূর্তি। জঞ্জালের সাথে মিশে ছিলো।
পাঁই করে ঘুরেই সুড়ঙ্গের দিকে দৌড় দিলো কিশোর। কিন্তু লোকটার সঙ্গে পারলো না। ছুটে এসে পেছন থেকে জাপটে ধরলো তাকে। মুখ চেপে ধরলো কঠিন থাবা, যেন লোহার সাঁড়াশি। কানের কাছে কথা বললো হাসি হাসি একটা কণ্ঠ, তারপর? আবার আমাদের দেখা হলো। এবং এইবার আমিই জিতবো।
কথায় ফরাসী টান। চিনতে পারলো কিশোর। শোঁপা! ইউরোপের কুখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল আর্ট থিফ। আরেকবার ওর সঙ্গে প্রতিযোগিতা হয়েছিলো তিন গোয়েন্দার, ওকে ভুলবে না কিশোর। তাকে আর মুসাকে আটকে ছিলো ভয়াবহ গোরস্থানে, প্রচণ্ড কুয়াশার মধ্যে, মনে পড়তে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।