বলো কি! ভুরু কোঁচকালো রবিন। ওরকম কিছুই হলো নাকি?
জানি না। শুধু সম্ভাবনার কথা বলছি। চলো, চাচাকে জিজ্ঞেস করি ঘড়ি কোথায় পেলো?
ওয়ার্কশপ থেকে বেরিয়ে অফিসের দিকে চললো ওরা। কাজে ব্যস্ত ইয়ার্ডের দুই কর্মচারী বোরিস আর রোভার। কয়েকটা পুরনো আসবাবপত্র দেখছিলেন রাশেদ পাশা, ডাক শুনে ফিরে তাকালেন। ছেলেদের মুখ দেখেই বুঝলেন, প্রশ্ন। আছে। মিটিমিটি হেসে, মস্ত গোঁফে তা দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তারপর, ত্রিরত্ন, ব্যাপার কি? খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছে।
চাচা, ঘড়িটা দেখালো কিশোর। এটা কোত্থেকে আনলে? একটু আগে যে বাক্সটা দিলে, তার মধ্যে পেয়েছি।
পেয়েছি মাগনা। ফাও বলতে পারো। এটার মধ্যে ছিলো, পুরনো একটা আলমারি দেখালেন তিনি। হলিউডের এক পুরনো মালের দোকান থেকে কিনেছি।
কোন দোকান? মালিকের নাম?
নাম, ডেরিক। অনেক মাল কিনেছি আজ। এক ট্রাক দিয়ে গেছে। আরও এক ট্রাক নিয়ে আসবে। তখন জিজ্ঞেস করো…
এই সময় গেটে শোনা গেল এঞ্জিনের শব্দ। ফিরে তাকাল চারজনে। একটা পিকআপ ঢুকছে। বলে উঠলেন রাশেদ পাশা, ওই যে, এসে গেছে।
আসবাবপত্রের স্তূপের কাছে এসে থামলো গাড়ি। ওভারঅল পরা একজন লোক নেমে এলো, খোঁচা খোঁচা দাড়ি।
এসেছো, বললেন রাশেদ পাশা।
হ্যাঁ, কাছে এসে দাঁড়ালো ডেরিক। নিয়ে এলাম তোমার সব মাল। কপাল ভালো তোমার, রাশেদ, ভালো মাল পেয়েছো, ধরতে গেলে বিনে পয়সায়। কিছু কিছু তো একেবারে নতুন…
আরে দূর! বাতাসে থাবা মারলেন রাশেদ পাশা। বাড়িয়ে বলার স্বভাব তোমার গেল না। এগুলো নতুন? আমি বলে কিনছি…যাক, যা আছে, আছে। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। দশ ডলার দেবো সবগুলোর জন্যে। ও কে?
দাও। কি আর করা? টাকার খুব ঠেকা, নইলে একশোর কমে দিতাম না…
মেরি আছে অফিসে। ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাও। ও, এক মিনিট, এ আমার ভাতিজা, কিশোর। তোমাকে কি জানি জিজ্ঞেস করবে।
জলদি বলে ফেলো, খোকা। তাড়া আছে আমার, বললো ডেরিক।
একটা বাক্সের কথা জানতে চাই, কিশোর বললো। আপনার দেয়া এই আলমারিতে পাওয়া গেছে। বাক্সের ভেতরে এই ঘড়িটা ছিলো। কার কাছ থেকে কিনেছেন, মনে আছে?
ঘড়ি? বিষণ্ণ হাসি হাসলো ডেরিক। হপ্তায় ওরকম কয়েক ডজন ঘড়ি বেচতে আনে আমার কাছে। বেশির ভাগই অচল। কিনি, কোনোটা বিক্রি হয়, কোনোটা ফেলে দিই।
একটা বাক্সের মধ্যে ছিলো এটা, রবিন বললো। ভেতরে একটা স্টাফ করা পেঁচাও…
ও, হ্যাঁ, মনে পড়েছে। স্টাফ করা পেঁচা খুব কমই পাই, সেজন্যেই মনে আছে। কিন্তু কার কাছ থেকে যেন কিনলাম…কার কাছ..নাহ, সরি, মনে করতে। পারছি না, মাথা নাড়লো ডেরিক। প্রায় হপ্তা দুই আগের কথা। মনে নেই। হাজার লোকে বেচতে আনে, কজনের কথা মনে রাখবো?
.
০২.
ব্যস, গেল এই কেস, মুসা বললো। ঘড়িটা কোত্থেকে এসেছে তা-ই জানি না, রহস্যের কিনারা করবো কি? কিশোর?
ওয়ার্কশপে ফিরে এসেছে তিনজনে। অন্যমনস্ক হয়ে বাক্সটা নাড়াচাড়া করছিলো কিশোর, মুখ ফিরিয়ে তাকালো, উঁ?…মাঝে মাঝে বাক্সের গায়ে ঠিকানা লেখা থাকে। কোথায় পাঠানো হবে, সেই ঠিকানা।
আমার কাছে মুদী দোকানের বাক্সের মতো লাগছে, রবিন বললো।
আমার কাছেও। কিন্তু ঠিকানা লেখা নেই।
সেই কথাই তো বলছি, আগের কথার খেই ধরলো মুসা। এই কেসের সমাধান আমাদের সাধ্যের বাইরে। …রবিন, কি ওটা?
ছাপার মেশিনটার নিচ থেকে চার কোনা এক টুকরো কাগজ তুলে নিয়েছে। রবিন। কিশোরকে দেখিয়ে বললো, বাক্স থেকে পড়লো।
মুদী দোকানের মালের লিস্টি হবে হয়তো, মুসা বললো।
কিন্তু তার কথা ঠিক নয়। কাগজটায় লেখা রয়েছেঃ
ডীয়ার মিলার
আস্ক রোবিড়
আস্ক বারকেন
আস্ক জেলডা
দেন অ্যাক্ট। দ্য রেজাল্ট উইল সারপ্রাইজ ঈভন ইউ।
জোরে জোরে পড়লো রবিন। চেঁচিয়ে উঠলো, আশ্চর্য! কি মানে এর?
প্রিয় মিলার, বিড়বিড় করে বললো কিশোর। রোবিডকে জিজ্ঞেস করো। বারকেনকে জিজ্ঞেস করো। জেলভাকে জিজ্ঞেস করো। তারপর কাজে নামো। ফলাফল দেখে তুমি পর্যন্ত চমকে যাবে।
আরে সে তো বুঝলাম। কিন্তু এসব কথার মানে কি?
আরেকটা রহস্য। নিশ্চয় চেঁচানো ঘড়ির সঙ্গে যোগাযোগ আছে।
ঘড়ির সঙ্গে যোগাযোগ, কিভাবে বুঝলে?
তাই তো হওয়ার কথা। দুই ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি মাপে কাটা হয়েছে। পেছনে দেখো। এই যে এখানটায়। কি দেখছো?
শুকনো আঠা।
রাইট। তারমানে এই কাগজটা কোনো কিছুতে সাঁটানো ছিলো। ঘড়িটা উল্টে তলা দেখালো সে। এই যে দেখো, এখানেও শুকনো আঠা। আগেই লক্ষ। করেছি। মাপ দেখে আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না, এই কাগজ এখানেই লাগানো। ছিলো। বেশি নাড়াচাড়ায় খুলে পড়ে গেছে।
কিন্তু ওরকম একটা কাগজ কেন ওখানে সাঁটতে যাবে? মুসার জিজ্ঞাসা। কে? ওই লেখার মানেই বা কি? মাথামুণ্ডু তো কিছুই বোঝা যায় না।
এতো সহজেই বোঝা গেলে কোনো রহস্যই আর রহস্য থাকতো না।
তা ঠিক। লাভের মধ্যে শুধু আরও একটা রহস্য যোগ হলো, ঘড়ির চেঁচানোর সঙ্গে। আমরা যে অন্ধকারে ছিলাম, সেখানেই রয়েছি। বরং বলা যায় অন্ধকার আরও ঘন হয়েছে। এখন কি করবে?
চেঁছে ঘড়ির নিচ থেকে আঠা তুলবো। কি যেন খোদাই করা রয়েছে। বেশি ছোট, বুঝতে পারছি না। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দরকার। চলো, হেডকোয়ার্টারে চলো।
দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকলো ওরা। ডেস্কের ওপাশে বসে মাথার ওপরের উজ্জ্বল আলো জ্বেলে দিলো কিশোর। ড্রয়ার থেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস আর ছুরি বের করে কাজে লাগলো। ছুরি দিয়ে চেঁছে আঠা তুলে, খোদাই করা লেখা। পড়ে মাথা ঝোঁকালো নীরবে। রবিনের দিকে ঠেলে দিলো ঘড়ি আর গ্লাস।