কি বোঝাতে চায়? বইটার ব্যাপারে কিছু? কোনো বিশেষ বইয়ের সাহায্যে কোড মেসেজ তৈরি করা যুদ্ধের সময় বেশ জনপ্রিয় ছিলো, এখনও গুপ্তচর মহলে এর ব্যবহার আছে। বইয়ের পাতা থেকে শব্দ বাছাই করে লাইন তৈরি করে। প্রেরক। কোন পাতার কোন লাইনের কোন শব্দটি নিয়েছে, গুনে নম্বর লিখে দেয়। প্রাপক সেটা খুঁজে বের করে বুঝে নেয় মেসেজের মানে। সহজ কোড, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপদ। কারণ, অন্য কারও হাতে পড়লেও তার বোঝার উপায় নেই, কোন বই থেকে নেয়া হয়েছে। সেটা জানে শুধু প্রেরক আর প্রাপক।
সুতরাং কিশোরের জন্যেও বইয়ের নাম জানাটা খুব জরুরী। কিভাবে জানা যাবে? আর বইটা পেলেও কি আধখানা মেসেজ থেকে পুরো লাইনটা বোঝা সম্ভব?
বড় করে হাই তুললো সে। ঘুম পেয়েছে। থাক, আজ রাতের জন্যে যথেষ্ট। হয়েছে। কাল সকালে উঠে আবার চেষ্টা করা যাবে, ভেবে, মেসেজগুলো আবার। ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো কিশোর। ট্র্যাপডোরের দিকে এগোতে যাবে, এই সময় বাজলো টেলিফোন।
এতো রাতে কে! অবাক হলো সে। তুলে নিলো রিসিভার। তিন গোয়েন্দা। কিশোর পাশা বলছি।
অন্য পাশের কণ্ঠটা শুনে স্থির হয়ে গেল সে। জমে গেছে যেন বরফের মতো।
.
১৫.
এগিয়ে চলেছে রবিন। পেছনে এঞ্জিনের শব্দ শুনছে, কিন্তু ফিরে তাকানোর কথা ভাবলো না একবারও। রাস্তায় গাড়ি থাকতেই পারে।
এক জায়গায় রাস্তার ধারে কোনো বাড়ি-ঘর নেই, খালি জায়গা। ঠিক ওখানটায় এসে পেছন থেকে শা করে সামনে চলে এলো ভ্যানটা, রবিনের পথরোধ করে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষলো।
লাফিয়ে বেরোলো এক কিশোর। রবিন!
অবাক হয়ে ব্রেক চাপলো রবিন। টিম! উত্তেজিত। সাইকেল থেকে নেমে ঠেলে নিয়ে তার দিকে এগোলো রবিন। কি ব্যাপার, টিম? কিছু হয়েছে?
পেছনের দরজা খুলে লাফ দিয়ে নামলো ছোটখাটো একজন মানুষ। হয়নি, তবে আমাদের কথা না শুনলে অনেক কিছুই হবে, কড়া গলায় বললো সে। খবরদার, পালানোর চেষ্টা কোরো না।
সরি, রবিন, অস্বস্তিতে গলা কাঁপছে টিমের। তোমার কাছে নিয়ে আসতে বললো ওরা। মাকে ঘরে তালা আটকে রেখে এসেছে।
হয়েছে হয়েছে, অতো ব্যাখ্যা করতে হবে না, ধমক দিলো লোকটা। এই, তোমার সাইকেল ছাড়ো। ওঠো গাড়িতে।
চট করে চারপাশে চোখ বোলালো একবার রবিন। নির্জন পথ। সাহায্যের জন্যে যে ডাকবে, সে উপায় নেই। দৌড় দিয়েও সুবিধে করতে পারবে না। সহজেই ধরে ফেলবে তাকে।
হ্যান্ডেল ধরে সাইকেলটা কেড়ে নেয়া হলো তার কাছ থেকে। পিঠে জোরে এক ধাক্কা দিয়ে লোকটা বললো, দাঁড়িয়ে আছো কেন? জলদি ওঠো। টিম, তুমিও।
গাড়িতে আলো নেই। অন্ধকারে উঠে বসলো রবিন। তার পাশে টিম। সাইকেলটা ভ্যানে তুলে দরজা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিলো লোকটা। বন্দি হলো দুই কিশোর।
আমাদের ক্ষতি করবে না বলেছে, নিচু কণ্ঠে বললো টিম। ওরা শুধু তথ্য চায়। ঘড়ি আর মেসেজগুলো সম্পর্কে। আমি তেমন কিছু বলতে পারিনি, তাই তোমাদের কাছে নিয়ে আসতে বাধ্য করলো। বললো, তোমাদের যে-কোনো একজনকে হলেই চলবে। ইয়ার্ডের ওপর অনেকক্ষণ থেকেই চোখ রাখছিলো। তুমি আর মুসা বেরোতেই পিছু নিলো।
মৃদু ঝাঁকুনি খেতে খেতে ছুটছে ভ্যান। গন্তব্য দুজনের কাছেই অজানা।
কারা ওরা? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
একজন, লারমার। আরও দুজন আছে। বেঁটে লোকটার নাম ডিংগো। আর লম্বা আরেকজন আছে, নাম মারকো।
ডিংগো আর মারকো! ওরা দুজনই কাল কিশোরদেরকে ধরেছিলো। একটা মেসেজের অর্ধেকটা ছিঁড়ে রেখে দিয়েছে।
হ্যাঁ, ওরাই। কটা মেসেজ, মানে কী, জানতে চায়। মূল্যবান কোনো জিনিসের ইঙ্গিত রয়েছে মেসেজে। ওদের ধারণা, জিনিসটা কি, কোথায় লুকানো আছে জানি আমরা।
কে বললো আমরা জানি? কিশোরের অনুমান, দামী জিনিস আছে, ব্যস।
আজ বিকেলে ডিংগো আর মারকো এসেছে লারমারের সঙ্গে দেখা করতে। অনেকক্ষণ কথা বলেছে। তারপর এসে ধরলো আমাকে, যা যা জানি বলার জন্যে। বলতে বাধ্য করলো। সরি, রবিন, না বলে উপায় ছিলো না। খুব শয়তান লোক। আমাকে মেরে ফেললেও বলতাম না, কিন্তু মার ওপর অত্যাচার করার ভয়। দেখালো…
আরে না না, তোমার দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। আমি হলেও তা-ই করতাম। তোমার মাকে তালা দিয়ে রেখেছে বললে না?
হ্যাঁ, আমরা যে বাড়িতে থাকি, মানে মিস্টার ক্লকের বাড়িতে। এরাও ক্লক ক্লকই করছিলো। আড়ি পেতে শুনেছি ওদের কথা। লারমার বললো, সে এই বাড়িতে উঠেছে গোপন জায়গা খুঁজতে। এমন একটা জায়গা, যেখানে দামী জিনিস লুকানো থাকতে পারে। রবিন, প্লীজ, তুমি যা জানো বলে দিও। নইলে আমার মাকে ছাড়বে না। বলবে তো?
মুশকিল কি জানো, আমি নিজেই কিছু জানি না, সত্যি কথাই বললো রবিন। একটা মেসেজের সমাধান করেছি। তাতে বলা হয়েছে বইটা দেখতে। কোন বই, জানি না। তাই তিনি কোন
বলতে না পারলে খুব রেগে যাবে ওরা, শঙ্কিত হয়ে উঠলো টিম। ওরা ধরেই নিয়েছে, তোমরা মেসেজের সমাধান করে ফেলেছো। তোমাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে। জেনেছে, আগেও অনেক জটিল রহস্যের সমাধান তোমরা করেছে।
সমাধান আসলে কিশোর করেছে, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো রবিন। ওদেরকে বিশ্বাস করাতে হবে, সত্যিই আমি কিছু জানি না। তাহলেই হয়তো ছেড়ে দেবে। আটকে রেথে তো লাভ নেই, অযথা ঝামেলা বাড়াতে চাইবে না। ওরা।