দুই বন্ধুকে বিদায় দিয়ে কিশোর ঢুকেছে রান্নাঘরে। টেবিল সাফ করে বাসন পেয়ালা ধুতে সাহায্য করেছে চাচীকে। একের পর এক হাই তুলছে।
দেখে মেরিচাচী বললেন, যা, তুই ঘুমোতে যা। আমি একাই পারবো।
সোজা নিজের ঘরে এসে কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়লো কিশোর। ভেবেছিলো, শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়বে। এতো ক্লান্তিতেও ঘুম এলো না। মনে এসে ভিড় জমালো হাজারো ভাবনা। কি আছে মেসেজগুলোতে?
আই সাজেস্ট ইউ সী দা বুক। কি বই? দ্বিতীয় মেসেজে কি আছে জবাবটা? : ভাবনা যতো বাড়ছে, দূর হয়ে যাচ্ছে ঘুম। না, হবে না। দ্বিতীয় মেসেজটার সমাধান না করে ঘুমোতে পারবে না। উঠে বসলো সে।
আবার কাপড় পরে নেমে এলো নিচতলায়। চাচা-চাচী টেলিভিশন দেখছিলেন, অবাক হয়ে তাকালেন।
কি-রে, কিশোর, মেরিচাচী জিজ্ঞেস করলেন। ঘুমোসনি?
ঘুম আসছে না। কতগুলো বাজে ভাবনা ঢুকেছে মাথায়। জঞ্জালের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসি ওগুলো। নইলে ঘুমোতে পারবো না।
তোর মাথা সত্যি খারাপ হয়ে গেছে…।
মেরিচাচীর কথা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এলো কিশোর। বারান্দা থেকে নেমে রওনা হলো ওয়ার্কশপের দিকে। মেইন গেট বন্ধ। চলে এলো বেড়ার কাছে। একটা বিশেষ জায়গায় আঙুলের চাপ দিতেই নিঃশব্দে উঠে গেল দুটো সবুজ বোর্ড। হেডকোয়ার্টারে ঢোকার অনেকগুলো গোপন পথের এটা আরেকটা, সবুজ ফটক এক। বেরিয়ে পড়েছে সরু প্রবেশ পথ? ওখান দিয়ে ঢুকলো ওয়ার্কশপে। তারপর দুই সুড়ঙ্গের মুখের ঢাকনা সরিয়ে পাইপের ভেতর দিয়ে চলে এলো মোবাইল হোমে। অফিসে ঢুকলো।
মাথার ওপরের আলোটা জ্বেলে দিয়ে ডেস্কের ড্রয়ার থেকে বের করলো মেসেজগুলো। সে আর মুসা গিয়ে মিস্টার হিরাম বারকেনের কাছ থেকে যেটা এনেছে, সেটা নিয়ে বসলো।
বার বার পড়লো লেখাগুলো। সেই সাথে চলেছে গভীর ভাবনা। ধীরে ধীরে আসতে আরম্ভ করেছে ধারণাগুলো। প্রথম মেসেজটা সমাধান করতে পারায়, দ্বিতীয়টা সহজ হয়ে গেল। সঠিক পথ দেখালো ওকে প্রথমটা-ই।
প্রথম লাইনের শুরুতে একটা ফুল নেয়ার জন্যে বলা হচ্ছে। কাগজে লিখলো। সেঃ টেইকওয়ান লিলি। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো লেখাটার দিকে। এলিকে মেরে ফেলতে বলা হয়েছে। কিভাবে? হঠাৎ বুঝে ফেললো। ওয়ান লিলি-র ওয়ান এর প্রথম দুটো অক্ষর আর লিলি-র শেষ দুটো অক্ষর বাদ দিলেই হয়ে যায় ই-এল আই, এলি। এলিকে মারতে বলা হয়েছে। দুটো শব্দের মাঝের তিনটে, অক্ষর কেটে দিলো সে। বাকি চারটে অক্ষর একসাথে করতেই হয়ে গেল ওনলি।
ওনলি! একা একাই চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। পেয়েছি! এবার দ্বিতীয় লাইন। বলছেঃ পজিটিভলি নাম্বার ওয়ান।
প্রথম মেসেজটায় আয়্যাম ফোর বলে ডি বুঝিয়েছে। এটাতেও হয়তো ওয়ান বলে আ বোঝাতে চেয়েছে। ওনলির পাশে লিখলো আ। তার মনে হলো, তৃতীয় লাইনে ব্রম শব্দটার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। কারণ, ঝাড়ু নিয়ে মৌমাছি তাড়াতে বলা হয়েছে। তারমানে ঝাড়ুটাই এখানে প্রধান। বী মানে মৌমাছি, ইংরেজি দ্বিতীয় অক্ষরের উচ্চারণও বী বী-টাকেই তাড়াতে বলা হয়েছে। ব্রম থেকে বী বাদ দিলে হলো রুম।
ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে কিশোর। অনর্গল কথা বলছে নিজের সঙ্গে। জোরে জোরে। একা গভীর মনোযোগের কাজ করার সময় এরকম করে মাঝে মাঝে।
এরপর আসছে, বললো সে। হোয়াট ইউ ডু উইদ ক্লথস, অলমোস্ট। কাপড় দিয়ে কি করি আমরা? পরি। পরা ইংরেজি, ওয়্যার। বানান, ডাবুলিউ-ই-এ আর। ওনলি আ রুম-এর সঙ্গে ওয়্যার মেলে না। তাহলে কি মেলে? আরেকটা ওয়্যার, কিংবা হোয়্যার। উচ্চারণ প্রায় একই, কিন্তু বানান আর মানে আলাদা। লিখে ফেললো প্রথম তিনটে শব্দের পাশেঃ ডাবলিউ-এইচ-ই-আর-ঈ। বললো, তাহলে দাঁড়ালো, ওনলি আ রুম হোয়্যার: হ্যাঁ, পরিষ্কার হচ্ছে আস্তে আস্তে।
পাঁচ নম্বর লাইনের মানে বের করা এতো সহজ হলো না। লাইনটার মানে, মা-ও নয়, বোন-ও নয়, ভাই-ও নয়, বাবা হতে পারে। ফাদার বসালে কিছু হয় না। ড্যাড, পপ বসিয়েও হলো না। পরিবারের প্রধান যদি ধরা হয় ফাদারকে? হেড অভ দা ফ্যামিলি? নাহ, হচ্ছে না।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করলো সে। কি বলতে চাইছে? ফাদার ক্রিসমাস? না। ফাদার টাইম? আঁ, ফাদার টাইম! ঘড়ি নিয়ে কারবার যখন… ঠিক, ফাদার টাইম!
দ্রুত লিখে ফেললো ওনলি আ রুম হোয়্যার-এর পাশে ফাদার টাইম। বাকি। রইলো মাত্র একটা লাইন। ফাদার টাইম, অর্থাৎ বাবা ঘড়ি কি করে? সময় দেয়। আর কি করে। শব্দ করে। কিভাবে? মেকানিক্যাল হলে টিকটিক, ইলেকট্রিকে চললে গুঞ্জন না, ঠিক গুঞ্জনও বলা যায় না। আসলে শব্দটা সঠিক ভাবে বোঝানোর কোনো উপায় নেই। সেকথা বলাও হয়েছে, অলমোস্ট, নট কোয়াইট। তাহলে, গুঞ্জন ইংরেজি হলো হামস। লিখে ফেললো শব্দটা, হামস।
পুরো লাইনটা হলোঃ ওনলি আ রুম হোয়্যার ফাদার টাইমস হামস।
হ্যাঁ, ঠিক আছে, আপনমনে মাথা দোলালো কিশোর। শুধু একটা ঘর, যেখানে বাবা ঘড়ি গুঞ্জন করে। কথা হলো, কোথায় গুঞ্জন করে? ওই মুহূর্তে একটা ঘরের কথাই মনে হলো তার। মিস্টার ক্লকের সেই সাউণ্ডপ্রুফ ঘরটা, যেখানে অসংখ্য ঘড়ি রয়েছে। তবে মেসেজ থেকে বোঝা গেল না, কোন বইয়ের ঘড়ির গোলমাল কথা বলা হয়েছে। যাবে, পাওয়া যাবে, নিজেকে আশ্বস্ত করলো সে। ছেঁড়া মেসেজটা বের করলো। নম্বরগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। প্রথম লাইনে রয়েছেঃ ৩-২৭৪-৩৬৫-১৯৪৮-১২৭-১১১৫-৯