ইউ, মানে তুমি, বিড়বিড় করলো কিশোর। হাতের তালুতে চাপড় মারলো। সে। রবিন, ঠিকই বলেছো। আরেকটা শব্দ পাওয়া গেল .চলো, হেডকোয়ার্টারে। খাবার রেডি হতে দেরি আছে। ততোক্ষণে মানেগুলো বের করে ফেলি।
কাল করলে হতো না? মিনমিন করে বললো মুসা। কিন্তু কিশোর আর রবিন রওনা হতেই সে-ও চললো পিছু পিছু।
পাঁচ মিনিট পর ডেস্ক ঘিরে বসলো তিন গোয়েন্দা।
হ্যাঁ, তাহলে কি পাওয়া গেল? শুরু করলো কিশোর। প্রথম লাইনঃ ইটস কোয়ায়েট দেয়ার ঈভন ইন আ হারিকেন। ধরলাম এই লাইন দিয়ে আই বোঝানো হয়েছে। শব্দটা লিখে নিলো একটা কাগজে। দ্বিতীয় লাইনঃ জাস্ট আ ওয়ার্ড অভ অ্যাডভাইস, পোলাইটলি গিভেন। পরামর্শ বলতে চেয়েছে। কাগজে লিখলো ইংরেজিতে, সাজেশন। এখন তৃতীয় লাইনের ওল্ড ইংলিশ বোম্যান লাভড ইট দিয়ে যদি হয় ইউ… প্রথম দুটো শব্দের পাশাপাশি লিখলো এই শব্দটাও। তাহলে হলোঃ আই সাজেশন ইউনাহ, হলো না। তার চেয়ে বলিঃ আই সাজেস্ট ইউ…।
আই সাজেস্ট ইউ, চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। ক্লান্তি আর ক্ষুধার কথা ভুলে গেছে। বেমালুম, হচ্ছে, কিশোর, হচ্ছে! খাইছে, পরের শব্দটা কি? ক
বিগার দ্যান আ রেইনড্রপ; স্মলার দ্যান অ্যান ওশন। জলরাশি বোঝাতে চেয়েছে মনে হয়। জলরাশি তো কত রকমই আছে, নদী-নালা খাল-বিল, পুকুর, হ্রদ, সাগর…
দাঁড়াও, দাঁড়াও, হাত তুললো রবিন। বলেছে, বৃষ্টির ফোঁটার চেয়ে বড়, মহাসাগরের চেয়ে ছোট, সাগরই ধরে নিলাম। কি দাঁড়ালো? সাগর। সী। এস-ই এ, কিন্তু উচ্চারণ এস-ডাবল-ই, সী-এর মতো…
সী, মানে দেখা, বলতে বলতে শব্দটা লিখে নিলো কিশোর।
এখন পাঁচ নম্বর, রবিন বললো। আয়্যাম ফোর। হাউ ওল্ড আর ইউ? হ্যাঁ, এটা বেশ কঠিন। কি বোঝাতে চেয়েছে?
আমার বয়েস চার। তোমার কতো?
এটা তো বাংলা মানে হলো। কিন্তু ইংরেজি শব্দটা কি?
ওই আগের লাইনগুলোর মতোই ঘুরিয়ে বলেছে। বর্ণমালার চার নম্বর। অক্ষরটার কথা বলেনি তো?
চার নম্বরটা কি? উত্তেজিত কণ্ঠে বললো মুসা। বেশ মজা পাচ্ছে এখন। ডি। তাতে কি?
তাতে? অনেকে ডি-এর উচ্চারণ দি-এর মতো করে। যদি ধরি টি-এইচ-ই, দি, বা দা, বা দ্য, লিখে ফেললো শব্দটা, তাহলে মেলে। আর মাত্র একটা শব্দ বের করতে পারলেই ইট সিটস অন আ শেলফ লাইক আ ওয়েল-ফেড-এলফ। কি বোঝা যায়? দুই সহকারীর দিকে তাকালো গোয়েন্দাপ্রধান।
ই-এল-এফ, এল মানে তো হলো একজাতের ভূত, রবিন বললো।
শেলফে ভূতের মতো কি বসে থাকে? মুসার প্রশ্ন। ছারপোকা? তেলাপোকা? টিকটিকি…
এলফ শব্দটাও ব্যবহার করেছে দ্বিধায় ফেলার জন্যে, বললো কিশোর। রবিন, লাইব্রেরিতে শেলফের দিকে তাকালেই কি চোখে পড়ে? এফের মতো বেঁটে মোটা মোটা ভূত…
মোটা মোটা বই! উত্তেজনায় লাফ দিয়ে টুল থেকে উঠে পড়লো রবিন।
হ্যাঁ, বই।
আর ওয়েল-ফেড, মানে পেট-পুরে-খাওয়া বলে বোঝাতে চেয়েছে অক্ষরে বোঝাই..ঠিক, বই-ই। আর কোনো সন্দেহ নেই।
শব্দটা লিখে নিয়ে বললো কিশোর, তাহলে, ছয়টা শব্দ দিয়ে একটা পুরো লাইন হলো। আই সাজেস্ট ইউ সী দা বুক।
বাহ্, চমৎকার, চুটকি বাজালো মুসা। খুব সহজ এর মানে। বইতে কিছু দেখার পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু কি দেখবো? কোন বইতে দেখবো? আর দেখার পর ওটা দিয়ে কি করবো?
জানা যাবে। আরও দুটো মেসেজ আছে। ওগুলোর মানে বের করতে পারলেই…
কিশোওর! মুসাআ! বাইরে থেকে ডাক শোনা গেল মেরিচাচীর। এইমাত্র দেখলাম এখানে…কোথায় গিয়ে ঢুকলি?।
দূর, এতো তাড়াতাড়ি সেরে ফেললো? বিরক্ত কণ্ঠে বললো কিশোর। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়ালো। আজ আর হচ্ছে না। কাল সকালে চেষ্টা করবো। চলো।
.
১৪.
খেতে খেতে আলোচনা চললো।
বইটা কি বই? একই প্রশ্ন আবার করলো মুসা। বাইবেল?
মনে হয় না, মাথা নাড়লো কিশোর। বড় একটা মাংসের বড়া নিজের প্লেটে তুলে নিয়ে ছুরি দিয়ে কাটতে কাটতে বললো, আন্দাজে কিছু বলে লাভ নেই। কাল অন্য মেসেজগুলোর মানে বের করতে পারলেই…
কী বলছিস তোরা? মুখ তুললেন রাশেদ পাশা। নতুন কোনো কেস পেয়েছিস নাকি?
কতগুলো অদ্ভুত মেসেজ পেয়েছি, চাচা। তোমার আনা ওই চেঁচানো ঘড়িটা দিয়েই শুরু। একটা মেসেজের মানে অবশ্য বের করে ফেলেছি…
এই বকবক না করে চুপচাপ খা তো! ধমক লাগালেন মেরিচাচী। এই বেশি ভেবে ভেবেই অকালে পাগল হবি। কতোবার বলেছি, এতো ভাববি না। সারা দিন গতর খাটাবি, পেট ভরে খাবি, রাতে নাক ডেকে ঘুমাবি। শরীর-মন দুটোই ভালো থাকবে, বাচবিও বেশি দিন। বড় করে এক টুকরো কেক কেটে মুসার পাতে দিতে দিতে বললেন, এই ছেলেটাই ভালো। খেতে পারে, খাটতেও পারে, কথা বলে। কম…
হেসে ফেললো কিশোর। তা ঠিক। বেশি খেলে ঘুম তো আসবেই। এই এখন আমার যেমন আসছে। আজ মেরে ফেলেছো, চাচী। সারা শরীর ব্যথা হয়ে। গেছে।
আরে না, কি যে বলো? মেরিচাচীর পক্ষ নিলো মুসা। বেশি খেলে ঘুম আসবে কেন? বলতে না বলতেই মস্ত এক হাই তুললো সে।
রবিন আর রাশেদ পাশাও হাসতে শুরু করলেন। চেষ্টা করেও গম্ভীর হয়ে থাকতে পারলেন না মেরিচাচী।
খাওয়ার পর বারান্দায় বেরোলো তিন গোয়েন্দা।
আবার যাবে নাকি হেডকোয়ার্টারে? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
না, আজ আর না, বললো কিশোর। কাল সকালে।
বিদায় নিয়ে সাইকেলে চাপলো মুসা আর রবিন। রওনা হলো যার যার বাড়ি। দুটো ব্লক একসাথে এসে আলাদা হয়ে দুজনে চললো দুদিকে খেয়াল করলো, ইয়ার্ডের গেট থেকেই ওদের পিছু নিয়েছিলো একটা ছোট ডেলিভারি ভ্যান। এখন অনুসরণ করছে রবিনকে।