.
১৩.
পরদিন সকালে স্যালভিজ ইয়ার্ডে যাওয়ার জন্যে তাড়াহুড়ো করে নাস্তা সারছে রবিন, এই সময় এলো ফোন। লাইব্রেরিয়ান ফোন করেছেন, যেখানে সে পার্টটাইম চাকরি করে। কয়েক ঘন্টা কাজ করে দেয়ার অনুরোধ জানালেন।
সেদিন রবিনের অফ ডে, ইচ্ছে করলে মানা করে দিতে পারে। ইয়ার্ডে রহস্যময় মেসেজ নিয়ে গবেষণা করবে কিশোর আর, মুসা, একথা ভেবে একবার ভাবলো না-ই করে দেয়। শেষে ভাবলো, হয়তো জরুরী দরকার, নয়তো কোনো কারণে আটকে গেছেন লাইব্রেরিয়ান। বললো, বিশ মিনিটের মধ্যে হাজির হবে।
নাস্তা সেরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রবিন। লাইব্রেরিতে এসে জানলো, অ্যাসিসট্যান্ট লাইব্রেরিয়ানের শরীর খারাপ, আসতে পারবেন না।
দুপুর পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত রইলো রবিন। বিকেলটাও তাকে থেকে যেতে বললেন লাইব্রেরিয়ান। কি আর করা। থেকে গেল। সঙ্গে আনা স্যাণ্ডউইস দিয়ে খাওয়া সেরে রেফারেন্স বই খুলে বসলো।
প্রথমেই হারিকেনের ওপর লেখা অধ্যায়টা খুললো। রহস্যময় মেসেজে রয়েছে হারিকেনের উল্লেখ। পড়তে পড়তে একসময় উত্তেজিত হয়ে উঠলো সে, নোট লিখে রাখলো। তারপর বের করলো মধ্যযুগীয় ইংরেজ তীরন্দাজদের ওপর লেখা অধ্যায়। আবার উত্তেজিত হয়ে নোট লিখলো নোটবইয়ে। এরপর পড়লো সাগরের ওপর লেখা লেখাটা। কারণ মেসেজে ওশন শব্দটা রয়েছে। নোট করার মতো কিছু পেলো না এখানে। লাঞ্চের সময় শেষ। বই বন্ধ করে উঠে গেল কাজ করার জন্যে।
পাঁচটার আগে ছাড়া পেলো না রবিন। লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে সাইকেলে চেপে সোজা চললো স্যালভিজ ইয়ার্ডে। দুপুরে বিশেষ কথাগুলো জানার পর থেকে এতোক্ষণ উত্তেজনা চেপে রাখতে খুব কষ্ট হয়েছে তার। এখন আর তর সইছে না।
ইয়ার্ডে ঢুকে বুঝলো, সকালে না এসে ভালোই করেছে। সারাটা দিন মুসা আর কিশোরকে গাধার খাটুনি খাটতে হয়েছে। কয়েক ট্রাক মাল কিনে এনেছেন রাশেদ পাশা। সেগুলো গোছানো তখনও শেষ করতে পারেনি।
উফফ, মরে গেছি, রবিনকে দেখেই বলে উঠলো কিশোর। সকালে মুসা। এলো। সবে হেডকোয়ার্টারে ঢুকবো ঢুকবো করছি, এই সময় চাচা নিয়ে এলো মালগুলো। বোরিস আর রোভারেরও অবস্থা কাহিল আজ।
টিমের কোনো খবর আছে? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
ফোন করেছিলো। কাল যাওয়ার পরই নাকি লারমার ধরে জিজ্ঞেস করেছে, এতোক্ষণ কোথায় কি করেছে টিম। ভয়ে বলে দিতে বাধ্য হয়েছে সে। এখানে যা যা শুনে গেছে সব। শুনে নাকি আরও রেগে গেছে লারমার।
রাগলো কেন?
জানে না।
মেসেজগুলো আমাদের হাতে পড়েছে জেনেই হয়তো রেগেছে। আমরা সাবধান করে ফেললে হয়তো তার কোনো অসুবিধে হবে। নোটবই বের করলো রবিন। কিশোর, কি জেনেছি জানো…
আরে, রবিন এসে গেছো? পেছন থেকে বলে উঠলেন মেরিচাচী, কখন। এসেছেন বুঝতেই পারেনি ওরা। ছিলে কোথায়? নিশ্চয় লাইব্রেরিতে। যাক, এসেছো ভালো হয়েছে। নাও, বলতে বলতে ইয়া বড় এক খাতা তার হাতে গুঁজে দিলেন তিনি। মালের লিস্টটা করে ফেলো তো। ভুলটুল কোরো না। আমি যাই, রাতের খাবার লাগবে এতোগুলো লোকের…
এক মুহূর্ত আর দাঁড়ালেন না তিনি। ছেলেদেরকে কোনোরকম প্রতিবাদের। সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়লেন সেখান থেকে।
নাও, শুরু করো, দুহাত নাড়লো মুসা। আমরা তো মরেছি। তুমি আর বাদ থাকো কেন?
বলো, খাতাটা খুলে কলম নিয়ে তৈরি হলো রবিন।
একটা রকিং চেয়ার, মুসা বললো।
একটা রকিং—চেয়ার। তারপর?
এক সেট বাগান করার যন্ত্রপাতি। মরচে পড়া
এক সেট…বাগান…করার…যন্ত্রপাতি…
আরও এক ঘন্টা কাজ চললো। ক্লান্ত হয়ে ওখানে ঘাসের ওপর বসে পড়লো কিশোর। মুসা শুয়েই পড়লো। রবিন বসলো ওদের পাশে। তার আবিষ্কারের কথা জানানোর জন্যে নোটবই বের করলো আবার। এই শোনো, মেসেজটার মানে বের করতে হবে না?
আমি আর আজ ওসবে নেই, জোরে হাত নাড়লো মুসা। তোমরা পারলে করোগে। আমার একটা আঙুল নড়ানোরও ক্ষমতা নেই।
আমিও ঠিকমতো ভাবতে পারবো না এখন, কিশোর বললো। যা করার কাল সকালে করবো।
কিন্তু কয়েকটা সূত্র পেয়েছি আমি, বললো রবিন। অন্তত দুটো লাইনের সমাধান তো হবেই। মিলে যায়…
সূত্র? বাতাসে খামচি মারলো মুসা। শব্দটাই শুনিনি কখনও।
আচ্ছা, এক কাজ করা যাক না, মুসাকে বললো কিশোর। ওর কথাগুলো তো শুনতে পারি আমরা। তাতে কোনো কষ্ট হবে না। রবিন, বলো, শুনি।
হারিকেনের ওপর একটা লেখা পড়লাম দুপুরে। লিখেছে, হারিকেনের সব চেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো ওটার কেন্দ্র। একেবারে শান্ত। অথচ ওই জায়গাকে কেন্দ্র করেই চারপাশে ঘন্টায় একশো মাইল বেগে বইতে থাকে ঝড়।
থামলে কেন? বলে যাও।
হারিকেনের ওই কেন্দ্রকে বলা হয় আই, বাংলায় চোখ। কিছু বুঝলে? আই-এর উচ্চারণ আই, অর্থাৎ আমির মতো। এবং এই আই হলো মেসেজের পয়লা শব্দ।
আমি এখন পয়লা শব্দ যেটা শুনতে চাই, সেটা খাবার, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে পেটে হাত বোলালো মুসা।
রবিন, মুসার কথায় কান দিলো না কিশোর, সোজা হয়ে গেছে পিঠ। ঠিক বলেছো! আর কি জেনেছো?
বোম্যান। আগের দিনে ইংরেজ তীরন্দাজরা তীর বানাতে ইউ গাছ দিয়ে…
ইউ গাছ? ফোড়ন কাটলো মুসা। গ্রীক দেবতারা দিয়ে যেতো নাকি? নামও তো শুনিনি।
কটা গাছের নামই বা তুমি জানো? ইউ হলো একজাতের চিরশ্যামল গাছ। বানান, ওয়াই-ই-ডাবলিউ। উচ্চারণ ওয়াই-ও-ইউ দিয়ে তৈরি শব্দ ইউ-এর মতো।