তাছাড়া আর কি? জবাব দিলো কিশোর। মিস্টার ক্লক আর মিস্টার মিলার, দুজনেই রহস্য ভালোবাসেন। ধাঁধা পছন্দ করেন। এমনও হতে পারে; কথাগুলোর মানে জানা আছে মিস্টার মিলারের, আর সেজন্যেই ওভাবে লিখেছেন মিস্টার ক্লক। নিজেরা ঠিকই বুঝতে পারবেন, অথচ অন্য কেউ পারবে না।
তোমার কি মনে হয়? হাত নাড়লো মুসা। তুমি পারবে?
আমার তো মনে হচ্ছে ক্রসওয়ার্ড পাজলস জাতীয় কিছু। প্রতিটি লাইনে একটি করে বিশেষ শব্দ পাওয়া যাবে, ছয় লাইনে ছয়টা। আর ছয়টা শব্দ দিয়ে হবে একটা বাক্য, যেটার মানে বোঝা যাবে সহজেই।
তাহলে তৈরি করে ফেলো বাক্যটা। প্রথম লাইন থেকেই শুরু করো। বলা হচ্ছে, হারিকেনের সময়ও শান্ত থাকে। হারিকেনের সময় কোন জায়গাটা সব চেয়ে শান্ত থাকে?
আমি জানি, বলে উঠলো টিম। স্টর্ম সেলার। ঝড়ের সময় যেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয় মানুষ।
তার চেয়েও নিরাপদ ব্যাংকের ভল্ট, তিক্ত কণ্ঠে বললো রবিন।
কি জানি, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর, ভল্ট হতেও পারে। আসলেই তো নিরাপদ! এখানে দামী জিনিসের আভাস যখন পাওয়া যাচ্ছে।
দূর, হেঁয়ালি করে কথা বলো না তো! রেগে গেল মুসা।
হেঁয়ালি কোথায়? দামী জিনিস না হলে মেসেজগুলোর জন্যে পাগল হয়ে উঠেছে কেন কিছু লোক? আর দামী জিনিস ব্যাংকের ভল্টেই সব চেয়ে নিরাপদ। এবার দুনম্বর লাইনঃ জাস্ট আ ওয়ার্ড অভ অ্যাডভাইস, পোলাইটলি গিভেন। এখানে একটা শব্দই বিশেষভাবে চোখে লাগে, অ্যাডভাইস! মানে, উপদেশ। অ্যাডভাইসের আর কি কি মনে হয়? প্রতিশব্দ? মুসা, প্লীজ, ডিকশনারীটা দেবে?
বইয়ের তাক থেকে ডিকশনারী এনে দিলো মুসা।
নীরবে পাতা ওল্টালো কিশোর। এই যে, অ্যাডভাইসের প্রতিশব্দ, ওপিনিয়ন! দেখা যাক, মেলে কিনা? ব্যাংক ভল্ট…ওপিনিয়ন.. নাহ্, ঠিক হচ্ছে না।
তা তো হচ্ছেই না, জোর দিয়ে বললো মুসা। ভদ্র ভাষায় আমার পরামর্শ হলো…
মুসাআ! হাত তুললো কিশোর।
কড়া চোখে তার দিকে তাকালো মুসা। থামবো? কেন? আমার পরামর্শ…
তাকে অবাক করে দিয়ে তুড়ি বাজালো হঠাৎ কিশোর। ঠিক বলেছো! পরামর্শ! বলছে পোলাইটলি গিভেন অ্যাডভাইস। পরামর্শও এক ধরনের উপদেশ, ভদ্রভাবে দেয়া উপদেশ। মুসা, দিয়েছ সমাধান করে লাইনটার।
চোখ মিটমিট করছে গোয়েন্দা-সহকারী। যতোটা ভেবেছি, ততোটা কঠিন নয় তাহলে! আশ্চর্য!…কিন্তু আমি এখনও ব্যাংক ভল্টের সঙ্গে পরামর্শ মেলাতে পারছি না।
আমিও না। দেখি, বাকি শব্দগুলো বের করলে মেলে কিনা।
তিন নম্বর লাইন হলো, রবিন বললো, ওল্ড ইংলিশ বোম্যান লাভড ইট। কি ভালোবাসতো? বোম্যানরা একটা জিনিসই ভালোবাসে, সেটা তীর-ধনুক। সে ইংরেজই হোক, আর অন্য দেশীই হোক, আগের দিনেরই হোক, বা এখনকারই হোক।
বোম্যানের আরেকটা মানে যদি করা হয়? ভুরু কুঁচকে, মাথা নেড়ে বললো কিশোর। যদি ধরা হয়, তীরন্দাজ? তাহলে তো যুদ্ধও ভালোবাসবে।
ব্যাংক ভল্ট…পরামর্শ…তীরন্দাজ! চেঁচিয়ে উঠলো টিম, আরো ঘোল্য হয়ে। যাচ্ছে মগজ! মাথাটা এবার সত্যি খারাপ হবে!
কি জানি, ভ্রূকুটি করলো কিশোর। কিন্তু…
বাধা পড়লো কথায়। বাইরে থেকে শোনা গেল মেরিচাচীর কণ্ঠ, ডাকছেন। কিশোওর! কোথায় তোরা? খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেল।
চমৎকার! টেবিলে চাপড় মারলো মুসা। এই হলো গিয়ে একটা কথার মতো কথা। চুলোয় যাক মেসেজ। চলো খেয়ে নিই আগে।
টিমকে খেয়ে যাবার অনুরোধ করলো কিশোর। রাজি হলো না সে। বললো তাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলে দিয়েছে মা। আরেকদিন খাবে।
ঠিক আছে, যাও তাহলে, কিশোর বললো। যোগাযোগ রাখবো। আর হ্যাঁ, লারমারের ওপর চোখ রেখো। বলা যায় না, সে-ই হয়তো তোমাদের পিছু। নিয়েছিলো। ঘড়ি চুরি করেছে।
রাখবো, ঘাড় নাড়লো টিম। লোকটাকে আমিও পছন্দ করি না। দেখলেই মনে হয়, কিছু একটা শয়তানীর তালে আছে।
মুখ খুলতে যাচ্ছিলো কিশোর, বাধা পড়লো আবার। টেলিফোন বাজছে। রিসিভার তুলে নিলো। তিন গোয়েন্দা। কিশোর পাশা বলছি।
হাল্লো। কণ্ঠটা প্রথমে চিনতে পরলো না কিশোর। হিরাম বারকেন। হ্যারিসন ক্লকের মেসেজ নিতে আজ বিকেলে এসেছিলে আমার বাড়িতে।
হ্যাঁ, স্যার!
তখন থেকেই ভাবছি তোমাদের জানাবো কিনা। তোমরা যাওয়ার পর একটা ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনা?
আরেকজন এসেছিলো মেসেজ চাইতে। লম্বা, কালো চুল, দক্ষিণ আমেরিকার লোক বলে মনে হলো। সঙ্গে তার এক বন্ধু, বেঁটে। বললো, ক্লক নাকি ওদের পাঠিয়েছে।
নিশ্চয় মেসেজ দিতে পারেননি। আমাদেরকেই তো দিয়ে দিয়েছেন।
না, পারিনি। ওরা চাপাচাপি করতে লাগলো কাকে দিয়েছি বলার জন্যে। তোমাদের কার্ড দেখিয়ে দিয়েছি ওদের। নাম ঠিকানা লিখে নিলো। তারপর থেকেই ভাবছি, কাজটা কি উচিত হলো? ওদের ভালো লোক মনে হয়নি আমার, বিশেষ করে লম্বাটাকে। মারকো। এতো বেশি ভদ্র, বিনয়…
দিয়ে দিয়েছেন ঠিকানা, কি আর করা। যাকগে, যা হবার হবে। কষ্ট করে আবার আমাদের ফোন করবেন, অনেক ধন্যবাদ।
লাইন কেটে গেল। রিসিভার রেখে বন্ধুদের দিকে তাকালো কিশোর। মারকো আর ডিংগো এখন আমাদের নাম-ঠিকানা জানে। লারমার জানে। তিনজনেই ঘড়িটা চায়, মেসেজগুলো চায়। লারমার ঘড়িচোর না হলে, অন্য আরেকটা দল আছে। সবাই ইনটারেসটেড। লোক কেউই সুবিধের নয় ওরা। আমাদের বিপদটা বুঝতে পারছো আশা করি?