হেডকোয়ার্টারেই রয়েছে তখন রবিন আর টিম, তবে তিন গোয়েন্দার নয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। নতুন ডিউটি অফিসার রবিনকে চেনে না। দুজনকে নিয়ে ঢুকলো চীফের অফিসে। বয়সের কোন
আরে, রবিন তুমি? বলে উঠলেন ইয়ান ফ্লেচার।
চীফকে দেখে হাঁপ ছাড়লো রবিন। হ্যাঁ, স্যার, ধরে আনা হয়েছে।
কি করেছিল?
কি করেছিলো, জানালো ডিউটি অফিসার।
সরি, রবিন, তোমাদের কাছ থেকে এটা আশা করিনি, আন্তরিক দুঃখিত মনে হলো ফ্লেচারকে। খুব অন্যায় করেছে। এতো জোরে গাড়ি চালানো। অন্যের তো বটেই, নিজেরও ক্ষতি হতে পারতো।
ইচ্ছে করে করিনি, স্যার। আমাদের তাড়া করা হয়েছিলো। আরেকটা গাড়ি। ধরে ফেলেছিলো আমাদের। সময়মতো ইনি না গেলে, ডিউটি অফিসারকে দেখালো রবিন। কিছু একটা করতে আমাদের।
তাড়া করেছিলো? হাসি ফুটলো চীফের মুখে। নতুন কোনো কেস-টেস?
হ্যাঁ, স্যার, একটা চেঁচানো ঘড়ি।
বলে চেঁচানো ঘড়ি! আশ্চর্য তো! ঘড়ি আবার চেঁচায় কিভাবে?
আমাদের গাড়িতেই আছে, স্যার। বললে এনে দেখাতে পারি।
অফিসারের দিকে চেয়ে ইঙ্গিত করলেন ফ্লেচার। যাও ওদের সঙ্গে। নিয়ে এসো।
ফিরে এলো খানিক পরে। খালি হাতে। মাথা নাড়লো অফিসার, নেই। ঘড়ি নেই। ওরা বলছে একটা ব্যাগ ছিলো সেটাও দেখলাম না।
আমার বিশ্বাস, স্যার, মুখ কালো হয়ে আছে রবিনের, চুরি করে নিয়ে গেছে!
.
১২.
এতো দেরি করছে কেন ওরা? মুসা বললো।
মিস্টার বারকেনের কাছে পাওয়া মেসেজটা টেবিলে রেখে ঝুঁকে দেখছিলো কিশোর, সোজা হয়ে তাকালো। যাই, দেখি, আসছে কিনা।
সর্ব-দর্শনে গিয়ে চোখ রাখলো সে। জানালো, টিমের গাড়ি সবে ঢুকেছে ইয়ার্ডে। .
কিছুক্ষণ পর সাঙ্কেতিক টোকা পড়লো দুই সুড়ঙ্গের দরজায়।ট্র্যাপোর খুলে দিলো মুসা। উঠে এলো রবিন আর টিম। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে ওদের।
মেসেজ পেয়েছো? জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ, তা পেয়েছি, বসতে বসতে বললো রবিন। কিচ্ছু বোঝা যায় না।
দেখি? হাত বাড়ালো কিশোর। ঘড়িটা কই?
নেই।
নেই মানে? তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে গোয়েন্দাপ্রধানের দৃষ্টি। হারিয়ে ফেলেছো?
চুরি হয়ে গেছে, টিম জানালো, পুলিশ স্টেশনের বাইরে গাড়ি পার্ক করেছিলাম…
পুলিশ স্টেশন? মুসার প্রশ্ন। সেখানে কি করছিলে? ডাকাতে ধরেছিলো নাকি?
বেশি জোরে চালাচ্ছিলাম বলে পুলিশে ধরেছিলো। আগেই পিছু নিয়েছিলো একটা গাড়ি, পাহাড়ের মাঝামাঝি আসতেই ভাড়া করলো। ছুটলাম…
কি হয়েছিলো, জানানো হলো মুসা আর কিশোরকে।
ছেড়ে দিলেন আমাদেরকে চীফ, বলা শেষ করলো রবিন। বলে দিয়েছেন, জরুরী কিছু জানলে, কিংবা বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই যেন তাকে জানাই।
হুঁ, আনমনে মাথা ঝোঁকালো কিশোর। জানানোর সময় এখনও হয়নি। কিছুই জানি না এখনও। পুলিশ বিশ্বাস করবে না, হাসবে। ভাববে, হ্যারিসন। ক্লকের রসিকতা। সাহায্য তো পাবোই না, বরং বেকায়দায় পড়ে যেতে পারি।
মারকো আর ডিংগোর কথা বললো কিশোর, মাঝে মাঝে কথা যোগ করলো মুসা।
তাহলে বুঝতেই পারছো, কিশোর বললো! মেসেজ আর ঘড়ির ব্যাপারে ইনটারেস্ট আছে আরও অনেকের। হতে পারে, তোমাদেরকে যে তাড়া করেছে, সে-ই ঘড়িটা চুরি করেছে। পুলিশের সাইরেন শুনে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো কোথাও, তারপর সুযোগ বুঝে গিয়ে হাজির হয়েছে থানার কাছে। কেউ নেই দেখে টুক করে তোমাদের গাড়ি থেকে ব্যাগটা তুলে নিয়ে গেছে।
কিন্তু সেই লোকটা কে? রবিন বললো। ঘড়ি আর মেসেজের ব্যাপারে এতো আগ্রহ কেন?
লারমারের কথা ভুলে গেছো? সে জানে ঘড়ির কথা। আরও কাউকে বলে থাকতে পারে। এক কান দুকান হতে হতে দশ কান হতে বাধা কোথায়? না। জেনে ভুল করে মারকো আর ডিংগোকেও অনেক কথাই বলে এসেছি আমরা। ঘড়ি আর মেসেজ তো বটেই, আমরা কি করছি, সেটাও জেনে গেছে ওরা।
দূর, আমার এসব ভাল্লাগছে না! বাতাসে থাবা মারলো মুসা। তা রবিনের মেসেজে কি লেখা? প্রলাপ-ই?
রবিনের আনা মেসেজটা টেবিলে রাখলো কিশোর। প্রলাপ নয়। তবে একই রকম কঠিন।
কেন ভণিতা করছো? গুঙিয়ে উঠলো মুসা। এটাকে শুধু কঠিন বলে? হাতুড়ি, বলো, হাতুড়ি, মাথায় লাগলেই খুলি খতম, মগজ ঘোলা।
হয়নি, হাসলো কিশোর। হাতুড়ি নয়। ডাবল ব্যারেল শটগান। মাথায় লাগলে খুলি, মগজ সব উড়ে যাবে। এবার খুশি তো?
হ্যাঁ, এইবার ঠিক বলেছো, খুশি হয়ে মাথা দোলালো মুসা।
কাজের কথায় আসি এবার। দেখা যাক, শটগানের ভেতর থেকে কিছু। বেরোয় কিনা। রবিন, মিস্টার মিলার আর মিস রোবিডের সাথে যা যা কথা হয়েছে, সব খুলে বলল। কিছু বাদ দেবে না।
বলতে থাকলো রবিন। কিশোর শুনছে, চুপচাপ, কোনো প্রশ্ন নেই। নোট করে নিচ্ছে মনের খাতায়। রবিনের কথা শেষ হলে বিড়বিড় করলো আনমনে, তাহলে, মিস্টার মিলার হাসপাতালে, অসুস্থ। মিস্টার ক্লক তাঁর কাছেই ঘড়িটা পাঠিয়েছিলেন, মেসেজগুলো জোগাড় করে রহস্যের সমাধানের জন্যে। এখন প্রশ্ন হলো, সমাধান করলে কি বেরোবে?
নিশ্চয় এমন কিছু, যাতে চমকে যাবেন মিস্টার মিলার, রবিন বললো। ঘড়ির নিচে লাগানো মেসেজে তো তাই বলা হয়েছে।
হয়েছে। কিন্তু কি দেখে চমকাবে? কি ঘটবে? সেটাই বুঝতে হবে এখন আমাদের। দেখি চেষ্টা করে, মেসেজগুলোর মানে বুঝতে পারি কিনা।
টেবিলে রাখা মেসেজটার দিক থেকে চোখ ফেরালো টিম। মেসেজ?? নিঃসন্দেহ হতে পারছে না সে। একে মেসেজ বলছো? কোনো ধরনের কোড?