আরি, কিশোর, বলে উঠলো মুসা। মেসেজটা তো ছিঁড়ে ফেলেছো!
হাতের দিকে তাকালো কিশোর। তাই তো! অর্ধেকটা ছিঁড়ে নিয়ে এসেছে। বাকি অর্ধেক নিশ্চয় রয়ে গেছে মারকোর হাঙে।
গেল! নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো মুসা।
ফিরে গিয়ে নিয়ে আসবো নাকি? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো কিশোর।
আবার! আর পারবো না। একবারই ছাড়া পেয়েছি অনেক কষ্টে।
নাহ, গিয়েও আর লাভ নেই। এতোক্ষণ নিশ্চয় বাকি অর্ধেক লুকিয়ে ফেলেছে। মারকো। জিজ্ঞেস করলে স্রেফ অস্বীকার করবে।
আর কোথাও যাবো? জিজ্ঞেস করলো হ্যানসন। নাকি সোজা ইয়ার্ডে?
না, যাবো বললো কিশোর। ভুল বারকেনের ওখানে গিয়েছিলাম আমরা জেসিয়াস নয়, আমাদের দরকার হিরাম বারকেনকে, এখন বুঝতে পারছি। ঠিকানা বলে সিটে হেলান দিলো সে।
আচ্ছা, কিশোর, মুসা বললো। মেসেজের জন্যে এতো আগ্রহ কেন। ব্যাটাদের?
বুঝতে পারছি না। মিস্টার কুকের ব্যাপারে এমন কিছু জানে হয়তো, যা আমরা জানি না। মেসেজগুলোকে মূল্যবান ভাবছে। কেন ভাবছে, সেটা আমাদের জানতে হবে।
কিভাবে?
মেসেজের মর্ম উদ্ধার করে।
যদি পারা যায়! নিষ্প্রাণ হাসি হাসলো মুসা। তততদিনে চুল-দাড়ি পেকে সব সাদা হয়ে যাবে আমাদের, মরার সময় হয়ে যাবে। তাছাড়া পুরো মেসেজটা থাকলেও এক কথা ছিলো, ছিঁড়ে তো এনেছে মাত্র অর্ধেকটা।
চেষ্টা তো করতে হবে, বলে চুপ হয়ে গেল কিশোর।
গাড়ি থামলো। বোধহয় এই জায়গাই, হ্যানসন বললো। এবার কোনো বিপদ আশা করছেন? আমি আসবো?
না। বিপদে পড়লে জোরে জোরে চিল্লাবো। মুসা, এসো যাই।
স্প্যানিশ ধাঁচের ছোট্ট সুন্দর একটা বাড়ি, বাগানে ঘেরা। গোলাপের যত্ন করছেন এক বৃদ্ধ। পায়ের শব্দে মুখ ফিরিয়ে তাকালেন।
মিস্টার হিরাম বারকেন? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
মাথা ঝাঁকালেন বৃদ্ধ। হ্যাঁ, আমি। হাতের দস্তানা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করলেন, কি চাও? অটোগ্রাফ? মৃদু হাসলেন তিনি। বহু বছর পরে আবার অটোগ্রাফ…আ স্ক্রীম অ্যাট মিডনাইট-এ গোয়েন্দার অভিনয় করার পর কতো লোক যে এসেছিলোনাটকটা নিশ্চয় শোনননি? নাকি?
না, স্যার। খুব জমজমাট নাটক হয়েছিলো, তাই না?
খালি জমজমাট! রোম খাড়া করে দিয়েছিলো কতো লোকের। আর চেঁচাতেও পারতো বটে হ্যারি ক্লক। হ্যারি আর হেনরি, দুজনে মিলেই লিখেছিলো। হ্যারির পুট, আর হেনরির কলম। ঘুরিয়ে, পেঁচিয়ে এমন এক কাহিনী দাঁড় করিয়েছিলো…যাকগে, ওসব পুরনো ইতিহাস। তা, তোমাদের অটোগ্রাফ… খাতার জন্যে হাত বাড়ালেন মিস্টার বারকেন।
অটোগ্রাফ নয়, স্যার…
তাহলে কি? কিছুটা নিরাশই মনে হলো ভদ্রলোককে, তবে হাসি মলিন হলো না। চাদা? নাকি নতুন ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন?
না, ওসব না, স্যার। মেসেজ। মিস্টার কুকের মেসেজ।
ও, মেসেজ! উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন আবার বারকেন। নিশ্চয়। বহুদিন ক্লকের কোনো খবর নেই, বছর বছর ক্রিস্টমাস কার্ড ছাড়া। এই প্রথম এলো চিঠি। এসো, ঘরে এসো, দেখি খুঁজে পাই কিনা।
চমৎকার সাজানো গোছানো একটা ঘরে ওদেরকে নিয়ে এলেন বারকেন। সবার আগে চোখে পড়ে পুরনো স্টাইলের বিশাল এক টেপ রেকর্ডার। শেলফে সাজানো সারি সারি টেপের বাক্স।
ডেস্কের ড্রয়ার থেকে একটা খাম বের করলেন তিনি। এই যে। খুলে পড়েছি। সেই পুরনো হ্যারিসন কুক, দুর্বোধ্য সব কথাবার্তা। একটা শব্দও বুঝিনি।
মেসেজটা হাতে নিলো কিশোর। ঝুঁকে এলো মুসা। লেখা রয়েছেঃ
টেক ওয়ান লিলি; কিল মাই ফ্রেণ্ড এলি।
পজিটিভলি নাম্বার ওয়ান।
টেক আ ব্রুম অ্যাণ্ড সোয়্যাট আ বী।
হোয়াট ইউ ডু উইদ ক্লথস, অলমোস্ট।
নট মাদার, নট সিসটার, নট ব্রাদার; বাট পারহ্যাপস ফাদার।
হাইমস? হামস? হোমস? অলমোস্ট, নট কোয়াইট।
খাইছে! এটা কবিতা না, দাঁত ভাঙার মেশিন?
কিংবা মাথা ভাঙার হাতুড়ি, হেসে বললেন বারকেন। মানে বোঝার অনেক চেষ্টা করেছি, বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি শেষে। যতদূর জানি, এলি নামে হ্যারির কোনো বন্ধু ছিলনা। অথচ পড়ে মনে হয়, বন্ধু এলিকে খুন করে তার, বুকে একটা পদ্ম রেখে দেয়ার কথা ভাবছে, তাই না? শব্দ করে হাসলেন। সাথে একটা নোটও লিখে দিয়েছে। কেউ নিতে এলে যেন মেসেজটা তাকে দিয়ে দিই। ও, ভালো কথা, তোমাদের পরিচয়ই জানা হলো না এখনও।
নিশ্চয়ই, পকেট থেকে কার্ড বের করে দিলো কিশোর।
কার্ডটা পড়লেন মিস্টার বারকেন। হাত মেলালেন দুই গোয়েন্দার সঙ্গে। তোমরা গোয়েন্দা জেনে খুশি হলাম। একটা কথা, হ্যারির ব্যাপারে যখন আগ্রহ, নিশ্চয় তার দুএকটা নাটক শুনতে চাইবে? মানে, নাটকে তার চিৎকার। আজকালকার ছেলে তোমরা, টেলিভিশন দেখে অভ্যাস। রেডিওতে নাটকের মজা যে কী, জানো না। শুনবে? ওই যে টেপগুলো দেখছো, অনেক নাটক রেকর্ড করা আছে ওগুলোতে। আমার অভিনয় করা সমস্ত নাটক। প্রত্যেকটাতে আছে হ্যারিসন ক্লকের কণ্ঠ।
লোভ হলো দুই গোয়েন্দার। রেডিওর নাটকের কথা অনেক শুনেছে ওরা। রাশেদ পাশাও মাঝে মাঝেই বলেন। সময় থাকলে এই সুযোগ ছাড়তো না, কিন্তু। এখন মোটেই সময় নেই ওদের। মিস্টার বারকেনকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে, শুড় বাই জানিয়ে মেসেজটা নিয়ে বেরিয়ে এলো ওরা। গাড়িতে এসে উঠলো।
হ্যানসনকে ইয়ার্ডে ফিরে যেতে বলে মুসার দিকে তাকালো কিশোর। টিম। আর রবিন কি করেছে কে জানে। সবগুলো মেসেজ একসাথে পেলে সমাধান। করতে সুবিধে হতে গিয়ে এখন ওদেরকে হেডকোয়ার্টারে পেলেই হয়। আর