কিন্তু… দ্বিধা করছে কিশোর। পকেট থেকে বের করলো সংখ্যা লেখা কাগজটা।
দেখলো মারকো। শুধুই তো নম্বর! হতাশ মনে হলো তাকে। কোড-টোড হতে পারে। মানে কি?
জানি না। আরেকটা মেসেজ দেখলে হয়তো বোঝা যাবে। মিস্টার বারকেনের মেসেজ।
হয়তো। বেশ, সব দায়িত্ব এখন আমার। এই ঘড়ি আর মেসেজগুলো তোমাদের জন্যে নয়, তোমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। আর কোনো মেসেজ থাকলে দিয়ে দাও। আমিই সব সামলাবো।
আর নেই, সামান্য ফ্যাকাসে হয়ে গেছে কিশোরের চেহারা। লম্বা লোকটার হাব-ভাব ভালো ঠেকছে না তার। দেখুন, ঘড়ি আর মেসেজ দিয়ে দিন, প্লীজ। ওগুলো আমাদের। আমরা তদন্ত…
চুপ! খেঁকিয়ে উঠলো মারকো। ডিংগো, ধরো ব্যাটাদের। দেখি, কোথায়। কি লুকিয়ে রেখেছে!
চোখের পলকে পেছন থেকে মুসার গলা জড়িয়ে ধরলো জেসিয়াস বারকেন ওরফে ডিংগো। বেঁটে, হাড্ডি সর্ব, রগ বের হওয়া প্যাকাটির মতো হাতে যে এতো জোর, ভাবতেও পারেনি গোয়েন্দা-সহকারী।
.
ঠিক ওই সময়, অনেক দূরে রবিন আর টিমও পড়েছে গোলমালে।
বাড়ি ফিরে চলেছে ওরা। রকি বীচের মাইলখানেক দূরে সান্তা মনিকা পর্বতের ভেতর দিয়ে চলে গেছে পথ। ওখানটায় এসে পেছনের গাড়িটা লক্ষ্য করলো রবিন। ঘন নীল শরীর, সাদা ছাত। দেখেছে আরও আগেই, গুরুত্ব দেয়নি। হঠাৎ গতি বাড়িয়ে দ্রুত ছুটে আসছে।
টিম! উত্তেজিত কণ্ঠে বললো রবিন। মনে হয় পিছু নিয়েছে। ধরতে আসছে এখন।
পারলে ধরুক, বলতে বলতেই গ্যাস প্যাডালে পায়ের চাপ বাড়িয়ে দিলো টিম।
লাফ দিয়ে আগে বাড়লো পুরনো গাড়িটা। শাঁ করে একটা মোড় পেরিয়ে তীব্র গতিতে নেমে চললো ঢালু পথ বেয়ে।
আবার পেছনে তাকালো রবিন। নীল গাড়িটাও গতি বাড়িয়েছে। দ্রুত কমছে দূরত্ব। ইতিমধ্যেই একশো গজের ভেতরে এসে গেছে।
প্যাডালে পায়ের চাপ আরও বাড়ালো টিম। মারাত্মক গতিবেগ। কিন্তু তার পরেও ছাড়াতে পারছে না নীল গাড়িটাকে, এগিয়েই আসছে, কমছে মাঝখানের ফাঁক।
আরেকটা তীক্ষ্ণ মোড় নিলো টিম। আরেকটু হলেই পথের ধার দিয়ে খাদে পড়ে গিয়েছিলো সেডান। কোনোমতে সোজা করে আবার পথের ওপর নিয়ে এলো। ওটাকে। মুখ থেকে রক্ত সরে গেছে। ভালোমতো চালাতে শিখিনি এখনও। আর যা রাস্তা খালি মোড়…নাহ, পারলাম না। ধরে ফেলবে।
হাল ছেড়ো না, সাহস দিলো রবিন। রকি বীচে ঢুকলে তখন আর আসতে। সাহস করবে না।
চেষ্টা করছি। সাইড দেবো না। আগে যেতে না পারলে থামাতে পারবে না আমাদের।
গতি কমিয়ে পথের মাঝ দিয়ে গাড়ি চালালো টিম।
ফিরে চেয়ে আছে রবিন। এদিক ওদিক সরে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে নীল গাড়িটা। স্টীয়ারিঙে ঝুঁকে থাকা মানুষটাকে পরিচিত লাগছে, কিন্তু চিনতে পারছে না।
নির্জন পথ ধরে ছুটে চলেছে দুটো গাড়ি। সামনে পথের ওপর একটা ছোট গর্ত দেখে এড়াতে গেল টিম, এই সুযোগে পাশে চলে এলো পেছনের গাড়িটা। সরতে সরতে সেডানটাকে নিয়ে এলো একেবারে পথের ধারে। আর সরার জায়গা। নেই। ধাক্কা লাগলেই এখন পড়ে যাবে খাদে।
থামতেই হবে! চেঁচিয়ে বললো টিম। কায়দা করে ফেলেছে হারামজাদা!
গ্যাস প্যাডাল থেকে পা সরিয়ে ব্রেক চাপলো সে। সেডানটা থামতে শুরু করতেই পাশের গাড়িটাও গতি কমালো।
কালো চশমা পরা লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রয়েছে রবিন। চেনার চেষ্টা করছে। কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারলো না।
থেমে গেল সেডান। পাশে থামলো নীল গাড়ি। হঠাৎ আবার খেপা ঘোড়ার মতো লাফিয়ে আগে বাড়লো, শাঁ শাঁ করে ছুটে হারিয়ে গেল পথের বাঁকে।
তাজ্জব কাণ্ড! অবাক হয়েছে টিম। পিছু নিলো, থামলো, এখন পালালো…
বুঝতে পারলো কারণটা। পেছনে শোনা যাচ্ছে সাইরেনের শব্দ। এগিয়ে। আসছে দ্রুত। কিছুক্ষণ পরে ঘ্যাঁচ করে এসে পাশে থামলো একটা পুলিশের গাড়ি। নেমে ওদের দিকে এগিয়ে এলো একজন অফিসার, বর্ষার মেঘলা আকাশের মতো থমথমে চেহারা। হাত বাড়ালো, দেখি লাইসেন্স!
১১.
ধরে রাখো, ছেড়ো না, আদেশ দিলো মারকো।
মুসার হাত মুচড়ে পিঠের ওপর নিয়ে এসেছে ডিংগো।
টেবিল থেকে একটা কাগজ কাটার ছুরি তুলে নিয়ে কিশোরের বুকে ঠেকিয়েছে মারকো। ভয়ানক কণ্ঠে বললো, দাও, যতোগুলো মেসেজ আছে।
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। মুসা দেখতে পাচ্ছে না তাকে। সে চুপ, থাকলো না। ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। কারাতের স্কুলে শিখেছে, কি করে কব্জি ছাড়াতে হয়। হঠাৎ মাছের মতো মোচড় দিয়ে উঠলো তার শরীরটা। সোজা হয়ে গেল হাত। সামনের দিকে ঝটকা দিয়ে ঝুঁকে গেল মাথা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুসার পিঠের ওপর দিয়ে উড়ে চলে গেল ডিংগো। বাড়ি খেলো মারকোর গায়ে। তাকে নিয়ে দড়াম করে পড়লো মাটিতে।
জলদি ভাগো! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। মেঝেতে মাথা ঠুকে গেছে মারকোর, চিত হয়ে আছে। তার বুকের ওপর চেপে রয়েছে ডিংগো। দুজনেরই হতবিহ্বল অবস্থা। মারকোর হাত থেকে মেসেজটা টেনে নিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিলো কিশোর। একই সময়ে দরজায় পৌঁছলে মুসা। ধাক্কা লেগে গেল দুজনের।
ঘড়ি! চিৎকার করে বললো মুসা। ফেলে এসেছো!
থাকুক, থামলো না কিশোর। ওটা লাগবে না।
হাঁপাতে হাঁপাতে এসে গাড়িতে উঠলো ওরা। কিশোর বললো, হ্যানসন, গাড়ি ছাড়ুন, কুইক!
তিন গোয়েন্দার সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয় হ্যাঁনসনের, জানে এই সব জরুরী মুহূর্তে কি করতে হয়। বিন্দুমাত্র দেরি করলো না সে, প্রশ্ন করলো না, ছেড়ে দিলো গাড়ি।