না। এক বাতিল মালের দোকান থেকে কেনা হয়েছে। নিচে একটা মেসেজ ছিলো, দেখেছেন?
মেসেজ? নূকুটি করলেন মহিলা। না, দেখিনি। পাওয়ার পরদিনই ফেলে দিয়েছি। ঘড়িটার সঙ্গে ছোট একটা চিঠিও পাঠিয়েছিলো। ওটাও ফেলে দিয়েছি।
কি লেখা ছিলো মনে আছে? ব্যাপারটা জরুরী।
ছিলো?…ছিলো, ঘড়িটা কাজে লাগালে নাকি অনেক টাকার মাল পাবে। মাথামুণ্ড কিছু বুঝিনি। রসিকতার আর সময় পেলো না লোকটা। এদিকে আমার। স্বামী হাসপাতালে মরে, টাকার অভাব, এই সময় কোনো ভালো মানুষ ওসব কথা লেখে? বুঝলাম না, এভাবে আমাদের ভয় পাইয়ে দিয়ে কি আনন্দ সে পেতে চেয়েছে। থেমে আবার ভ্রূকুটি করলেন মিসেস মিলার। কিন্তু তোমার এসব জানার কি দরকার? ঘড়ি নিয়ে তোমার এতো আগ্রহ কেন?
দরকার আছে, ম্যাডাম। মিস্টার ক্লক নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। হয়তো এই ঘড়িতেই রয়েছে সূত্র। কোত্থেকে ওটা পাঠানো হয়েছে, কিছু বুঝতে পেরেছেন?
না। অবাকই লেগেছে। হ্যারিসন ক্লক যে নিখোঁজ হয়েছে, খবরটা আমিও শুনেছি। ভাবছি…এহহে ফোন বাজছে। যাই। যা যা জানি, সব বলেছি তোমাদেরকে। গুডবাই, বয়েজ।
দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
টিমের দিকে ঘুরলো রবিন। হও আরও গোয়েন্দা! ভিখিরির মতো বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে..যত্তোসব! তিক্ত কণ্ঠে বললো সে। তেমন কিছু জানাও গেল না। শুধু জানলাম, মিস্টার ক্লক ঘড়িটা পাঠিয়েছিলো। ওটা অসুস্থ মিলারের হাতে পড়েনি। মিসেস মিলার পেয়ে ফেলে দিয়েছেন। মেসেজের মানে বুঝলাম না।
এই, গোয়েন্দাগিরিতে মজা পাচ্ছে টিম, অপমান গায়েই মাখেনি, এখানে। দাঁড়িয়ে না থেকে, চলো না মিস জেনি রোবিডের ওখানে যাই। তিনি হয়তো কিছু বলতে পারবেন।
কিন্তু মিস রোবিডও বিশেষ কিছু জানাতে পারলেন না। উত্তর হলিউডের উডল্যাণ্ড হিল-এ ছোট্ট একটা বাড়িতে থাকেন তিনি। নানা রকম গাছের ঝোপ আর ঘন কলা ঝাড়ের ওপাশে কটেজটা খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হলো ওদের। হালকা-পাতলা মানুষ। রবিনের মনে হলো, কথা বলার সময় পাখির মতো কিচিরমিচির করেন। ধূসর চুল, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা, পোশাক-আশাকে মনে হয় এইমাত্র বেরিয়ে এলেন রূপকথার জগত থেকে।
দুজনকে আদর করে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসালেন লিভিং-রুমে! সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন আর সুদৃশ্য কুশনে বোঝাই ঘরটা দেখে রবিনের মনে হলো, এখানে কিছু রাখলে জীবনেও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। রবিনের প্রশ্ন শুনেই চশমা কপালের ওপর ঠেলে তুলে দিয়ে ডেস্কের ভেতর খুঁজতে শুরু করলেন তিনি, আর পাখি-কণ্ঠে একনাগারে কিচির-মিচির করে চললেন, ভাবতেই পারিনি ওটার জন্যে কেউ আসবে। মেসেজটা নিতে। আমি ভেবেছি রসিকতা, মিস্টার কুকের রসিকতা। খুব রসিক লোক, স্টুডিওতে সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। আমিও তখন। রেডিওতে কাজ করতাম। একদিন গায়েব হয়ে গেল ক্লক। আর কোনো হদিস পেলাম না। তারপর হঠাৎ ওই চিঠি। সঙ্গে আরেকটা ছোট, কাগজ, মেসেজ। চিঠিতে বলেছে, কেউ মেসেজ নিতে এলে যেন দিয়ে দেয়া হয়। অবশ্যই, যদি ঘড়ির কথা বলে। আরে, রাখলাম কোথায়? চশমাটাও তো পাচ্ছি না। দেখবো কিভাবে?
চশমা কোথায় আছে, বললো রবিন। তাড়াতাড়ি আবার ওটা নাকের ওপর। টেনে নামালেন মিস রোবিড়। ড্রয়ারের ছোট একটা খোপে ঢুকে গেল হাত, বেরিয়ে আসতে দেখা গেল দুআঙুলে ধরে রেখেছেন একটা খাম। এই যে। আমি জানি ওখানে রেখেছি। যাবে কোথায়? এই তো, পেলাম। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, হ্যারিসন ক্লকের কথা। রসিক লোক ছিলো। ভালো লোক। আমার বন্ধু। কিন্তু ওর কণ্ঠ নিশ্চয় রেডিওতে শোনোনি তোমরা?
না, ম্যাডাম, শুনিনি। তবে রসিকতা নিয়েই তদন্ত করছি আমরা। জানতে চাই, তিনি কি বলতে চেয়েছেন। মেসেজটার জন্যে অনেক, অনেক ধন্যবাদ।
আরে না না, এর জন্যে আবার ধন্যবাদ কেন? যখন খুশি চলে আসবে। তোমরা, আমার সাধ্যমতো সাহায্য করবো। হাজার হোক, ক্লকের রসিকতা নিয়ে। গবেষণা করছো। ওর সঙ্গে দেখা হলে আমার কথা বোলো। যা দারুণ চিৎকার। করতে পারতো না.ও! ওর চিৎকার শোনার জন্যে লোকে সব কাজ বাদ দিয়ে। রেডিওর সামনে বসে থাকতো। একটা নাটকের কথা তো বিশেষভাবে মনে আছে। হেনরি মিলারের আ স্ক্রীম অ্যাট মিডনাইট গল্পের ওপর ভিত্তি করে। কি চমৎকার ভয় যে পাওয়াত না, কি বলবো! আর মিলারও লেখক বটে! ধাঁধা, সূত্র, রহস্যে তার জুড়ি নেই। খুউব বুদ্ধি। ওহহো, ভুলেই গিয়েছি। তোমাদেরকে চা খেতেই তো বললাম না? খাবে না? আচ্ছা, ঠিক আছে, আরেক সময় এলে খেও। যাবে? তাড়াহুড়ো বেশি? বেশ, যাও। বাচ্চাদের স্বভাবই ওরকম। সব কিছুতেই তাড়া।
বাইরে বেরিয়ে হাঁপ ছাড়লো দুই কিশোর।
মেরে ফেলেছিলো আরেকটু হলে। গাড়িতে উঠে হাসলো টিম। এতো বকতে পারে! থামে না। তবে কাজ হয়েছে। কি লেখা আছে মেসেজে, দেখি?
খাম খুলে একটা কাগজের টুকরো বের করলো রবিন। আগ্রহে ঝুঁকে এলো। টিম। হাঁ করে তাকিয়ে আছে দুজনে।
লেখা রয়েছেঃ
ইটস কোয়ায়েট দেয়ার ঈভ ইন আ রিকেন।
জাস্ট আ ওয়ার্ড অভ অ্যাডভাইস, পোলাইটলি গিভেন।
ওল্ড ইংলিশ বোম্যান লাভড ইট।
বিগার দ্যান আ রেইনড্রপ; স্মলার দ্যান অ্যান ওশন।
আয়্যাম ফোর। হাউ ওল্ড আর ইউ?
ইট সিটস অন আ শেলফ লাইক আ ওয়েল-ফেড-এলফ।