- বইয়ের নামঃ ঘড়ির গোলমাল
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
ঘড়ির গোলমাল
০১.
ঘড়ির ভেতর থেকে শোনা গেল চিৎকার!
আতঙ্কিত কণ্ঠ। শুরু হলো মৃদু ভাবে, জোড়ালো হতে লাগলো, তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর। কিশোর পাশার মনে হলো, কানের পর্দা ছিঁড়ে যাবে। শিরশির করে উঠলো শিড়দাঁড়া। জীবনে যতো ভয়ঙ্কর চিৎকার শুনেছে সে, তার মধ্যে এটা অন্যতম।
পুরনো চেহারার একটা ঘড়ি, বিদ্যুতে চলে। চলে কিনা সেটা দেখার জন্যেই প্লাগটা সকেটে ঢুকিয়েছিলো, সঙ্গে সঙ্গে ওই চিৎকার। কর্ড ধরে একটানে প্লাগটা বের করে আনলো সকেট থেকে। থেমে গেল। চিৎকার। হাঁপ ছাড়লো সে।
পেছনে শোনা গেল পদশব্দ। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে কাজ করছিলো তার দুই সহকারী, মুসা আমান আর রবিন মিলফোর্ড, পাশে এসে যেন ব্রেক কষে দাঁড়ালো।
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করলো রবিন। কে, চিৎকার করলো?
খাইছে! মুসা বললো, উদ্বিগ্ন। কিশোর, ব্যথাট্যাথা পেয়েছো?
মাথা নাড়লো গোয়েন্দাপ্রধান। শোনো, অস্বাভাবিক শব্দ। বলেই আবার প্লগ ঢোকালো সকেটে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো রক্ত-পানি-করা চিৎকার। টেনে প্লাগ খুলে চিৎকার থামালো।
মারছে? অস্বস্তিতে হাত নাড়লো মুসা। একে শুধু অস্বাভাবিক বলছো কেন? নিশ্চয় ঘড়ির ভূত!
হ্যাঁ, সত্যি অস্বাভাবিক, গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে একমত হলো রবিন। ঘড়ি এরকম চিৎকার করে বলে শুনিনি। দেখো, সুইচ টিপলে পাখা গজিয়ে না উড়ে চূলে যায়
হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে ঘড়িটা দেখছে কিশোর। সন্তুষ্ট হয়ে বললো, মম!
হুম্ কি? এই, কী? ভুরু নাচালো মুসা।
অ্যালার্মের লিভারটা অন করা, জানালো কিশোর। দেখি অফ করে আবার প্লগ ঢুকিয়ে… বলতে বলতেই প্লাগটা সকেটে ঢোকালো। আর চিৎকার করলো না। মৃদু গুঞ্জন তুলে চলতে শুরু করলো ঘড়ি।
দেখি এবার অন করে, আবার বললো সে। লিভার অন করতেই চিৎকার করে উঠলো ঘড়ি, তাড়াতাড়ি অফ করে দিলো কিশোর। যাক, একটা রহস্যের সমাধান হলো। ঘন্টা বাজানোর বদলে চিৎকার করে এই ঘড়িটা।
রহস্য দেখলে কোথায় এতে? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
ঘড়ি চিৎকার করে, এটা রহস্য নয়? কিশোরের হয়ে জবাব দিলো রবিন। আর, কেন চিৎকার করে সেটাও বোঝা গেল।
কেন নয়, সুধরে দিলো কিশোর। বলো, কখন। অ্যালার্ম লিবার সেট করলে চিৎকার করে। কেন করে, সেই রহস্যের সমাধান এখনও হয়নি।
তারমানে, তদন্ত? মুসা বললো। একটা ঘড়ির ব্যাপারে কি তদন্ত করবে? প্রশ্ন করবে ওটাকে? জবাব না দিলে চাপাচাপি করবে?
মুসার কথায় কান দিলো না কিশোর। বললো, কেন চিৎকার করে বোঝার চেষ্টা করবো। নিশ্চয় কোনো কারণ আছে।
আগ্রহী মনে হলো রবিনকে। কিন্তু শুরুটা করবে কিভাবে?
জবাব না দিয়ে টুলকিটের জন্যে হাত বাড়ালো কিশোর। তিন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত ওয়ার্কশপে রয়েছে ওরা। কিট থেকে একটা স্ক্রু-ড্রাইভার বের করে ঘড়ির পেছনের কভার খুলতে শুরু করলো। খুলে, এক নজর দেখেই আবার বললো, হুমম!
আবার হুমম কেন? মুসার প্রশ্ন।
স্ক্রু-ড্রাইভারের মাথা নেড়ে ঘড়ির ভেতরে দেখালো কিশোর। যন্ত্রপাতির মাঝে বসানো আধুলির সমান গোল একটা ডিস্ক। চিৎকারের এটাই কারণ। অ্যালার্ম বেলের বদলে এটা বসিয়ে দিয়েছে কেউ।
কেন? রবিনের প্রশ্ন।
সেটাই তো রহস্য। জানতে হবে কে করেছে কাজটা।
কিভাবে? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
দূর, নিরাশ ভঙ্গিতে হাত নাড়লো কিশোর। গোয়েন্দা কোনোদিনই হতে পারবে না তুমি। ভাবতেই জানো না ঠিকমতো…
দাঁড়াও দাঁড়াও, বলি। প্রথমে জানতে হবে ঘড়িটা কোত্থেকে এসেছে।
হ্যাঁ, এই তো মাথা খুলছে।
পুরনো জঞ্জালের মাঝে পেয়েছে। তারমানে রাশেদ আংকেল ওটা কিনে এনেছেন। হয়তো বলতে পারবেন কোন জায়গা থেকে কিনেছেন।
রোজই তো কতো মাল কেনেন, রবিনের কণ্ঠে সন্দেহ। তাঁর মনে আছে?
থাকতে পারে। জঞ্জালের মাঝে পেয়েছি, কথাটা ঠিক নয়। আধ ঘন্টা আগে একটা বাক্স আমার হাতে দিয়েছে চাচা। পেয়েছি ওটার ভেতরেই। আরও কি কি যেন আছে। দেখি।
বেঞ্চের ওপর রাখা একটা শক্ত মলাটের বাক্স। ভেতর থেকে বেরোলো একটা স্টাফ করা পেঁচা-পালক বেশির ভাগই খসে গেছে। পুরনো একটা কাপড় ঝাড়ার ব্রাশ পাওয়া গেল। আরও আছে একটা ভাঙা টেবিল-ল্যাম্পের অর্ধেকটা, চলটা ওঠা একটা ফুলদানী, দুটো বইয়ের দুমড়ানো প্লাস্টিক-কভার, আর আরও কিছু টুকিটাকি। প্রায় সবগুলো জিনিসই বাতিল, ব্যবহারের অযোগ্য।
দেখে তো মনে হয় ঘর পরিষ্কার করেছিলো কেউ, কিশোর বলল। বাক্সে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলো। বেকার বা ভিখিরি কেউ সেটা কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করেছে পুরনো মালের দোকানে, সেখান থেকে কিনে এনেছে চাচা।
কেন যে কিনলেন? অবাক লাগছে মুসার। ঘড়িটা ছাড়া তো আর সবই বেকার। কোনো কাজে লাগবে না। তবে ঘড়ি বটে একখান। ভাবো একবার, সকালে অ্যালার্মের বদলে ওই ভূতুরে চিৎকার শুনে জেগে ওঠার কথা
হুমম! তৃতীয়বার বললো কিশোর। ভালো না। খুব খারাপ। কাউকে ভয় পাওয়ানোর জন্যে যথেষ্ট। হার্টের অবস্থা খারাপ হলে মারাও যেতে পারে। মেরে ফেলতে চাইলে শুধু তার বেডরুমে ঘড়িটা রেখে দিয়ে এলেই হলো। সহজেই খুন, অথচ কেউ কিছু সন্দেহ করতে পারবে না।