ফিরে তাকালো কিশোর আর রবিন। রবিকে দেখে যেন অবাক হয়েছে।
আরে, রবি, কখন এলে? কিশোর বললো।
নিশ্চয় কেউ বলেছে তোমাদেরকে এসব কথা! প্রশ্নের জবাব না দিয়ে গরম হয়ে বললো রবি।
না, রবি, মাথা নাড়লো কিশোর। আমরা গোয়েন্দা। তদন্ত করে জেনেছি। তারমানে, সত্যি জেনেছি?
মাথা ঝোঁকালো রবি। হ্যাঁ, প্রত্যেকটা বর্ণ। এমনকি কোহেনের কথাও। ছদ্মনামে ঢুকেছে। টাকার দরকার, তাই একটা পদ তৈরি করে নিয়ে কারনিভলে কাজ করতে এসেছে। সার্কাসের চেয়ে কারনিভলের আয় কম, বেতনও কম, তারপরেও এসেছে। আমাদের এখানে যে কাজ করছে, পরিচিত কাউকে জানতে দিতে চায় না। আমরাও ওর আসল নাম জানি না। তবে স্ট্রং ম্যান হিসেবে খুব ভালো, একথা বলা যায়।
তা হতে পারে। কিন্তু, রবি, তোমাদের কারনিভলে যে গোলমাল করছে। কেউ, এটা তো ঠিক? কে করছে, সেটা বের করতে চাই আমরা। যদি তোমার। বাবা অনুমতি দেন।
এক এক করে তিন গোয়েন্দার মুখের দিকে তাকালো রবি। আগে বলো, কি করে জানলে? যাদু বিশ্বাস করি না আমি।
ভূতে বলেছে, রহস্যময় হাসি হাসলো কিশোর। খুলে বললো, কিভাবে জেনেছে।
রবিন আর মুসার মুখেও হাসি.। রবিকে তাজ্জব করে দিতে পারার আনন্দে।..
দারুণ হে! সত্যি তোমরা জাতগোয়েন্দা! না বলে পারলো না রবি। কারনিভলের গণ্ডগোলের হোতা কে, বের করতে পারবে তোমরা। কিন্তু বাবাকে। নিয়েই মুশকিল। বাইরের সাহায্য নিতে রাজি হবে না।
তাহলে খুব শীঘ্রি কারনিভল খোয়াতে হবে তাকে, কিশোর বললো।
বুঝি, বিমর্ষ হলো রবি। আগামী হপ্তায় বেতন দিতে না পারলে…,.থেমে গেল সে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। বেশ, বাবা না নিলে না নিক, আমি নেবো তোমাদের সাহায্য। আমি জানি কি কারণে বাবাকে কারনিভল খোয়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমার জন্যে!
.
০৭.
আমার নানী, রবি বললো। বাবাকে দেখতে পারে না, বিষণ্ণ হয়ে গেল। খুব ছোটবেলায় মা মরেছে আমার। অ্যাকসিডেন্ট। মায়ের স্নেহ পাওয়ারও সুযোগ। হয়নি আমার… গলা ধরে এলো তার।
দুঃখ করো না, রবি, সান্তনা দিলো কিশোর। তোমার বাবা আছে, আমার তো তা-ও নেই। দুজনেই মারা গেছে মোটর দুর্ঘটনায়।
এক মুহূর্ত অস্বস্তিকর নীরবতার পর রবি বললো, নানী বাবাকে দেখতে পারতো না, তার কারনিভলও পছন্দ করতো না। মা বাবাকে বিয়ে করুক, এটাও চায়নি। তাই বাবাকে দূষতে লাগলো নানী। বাবার জন্যেই নাকি মারা গেছে তার মেয়ে। বললো, কারনিভলে থাকা হতে পারে না আমার। মা মারা যাওয়ায় খুব দুঃখ পেয়েছিলো বাবা, কাজকর্ম ঠিকমতো করতো না, ফলে কারনিভলের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেল। নানী চাইলো আমি তার কাছে থাকি। মোটামুটি ধনীই বলা যায় তাকে। তা ছাড়া বাবা এক জায়গায় থাকতে পারে না, ব্যবসার খাতিরে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতে হয়। ছায়া নামলো রবির চেহারায়। যতোই বড় হলাম, নানীর ওপর বিতৃষ্ণা বাড়লো আমার। খারাপ নয় মহিলা, আমাকে অনেক আদর করে, কিন্তু আমি দেখতে পারি না। একটাই কারণ, দুনিয়ার সব কিছুতেই তার ভয়, আমাকে বাইরে বেরোতে দিতো না, কিছু করতে দিতো না। আমার ইচ্ছে বাবার কাছে কারনিভলে চলে যাই। নানী যেতে দেয় না। শেষে এ-বছরের গোড়ার দিকে পালিয়ে চলে এলাম বাবার কাছে। কি সাংঘাতিক, পাগলের মতো ছুটে এলো নানী। বাবাকে ভয় দেখালো, কেস করে দেবে। বাবা বললোঃ ঠিক আছে, রবি যদি যেতে চায়, আমার কোনো আপত্তি নেই, নিয়ে যান। আমি যেতে চাইলাম না। আইনত নানীও কিছু করতে না পেরে ফিরে গেল।
শাসিয়ে-টাসিয়ে গেছেন? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
হ্যাঁ। বাবাকে বলে গেছে, আমাকে কিছুতেই কারনিভলে থাকতে দেবে না। মায়ের মতো মরতে দেবে না আমাকে। কোর্টে গিয়ে নালিশ করবে, আমার খাওয়া-পরা জোটানোর সাধ্য নেই বাবার। নানীর ভয়েই অনেকটা পালিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে এসেছে বাবা। প্রাণপণে খাটছে টাকা রোজগারের জন্যে, যাতে আদালতে নানীর নালিশ না টেকে। কিন্তু যে-হারে অ্যাকসিডেন্ট হচ্ছে, কারনিভলই খোয়াতে হবে বাবাকে!
তুমি সত্যি বিশ্বাস করো, তোমার নানী এসব করাচ্ছেন।
জানি না, কিশোর, ধীরে ধীরে বললো রবি, নানী করাচ্ছে ভাবতেও খারাপ লাগে আমার। বাবাকে দেখতে পারে না, কিন্তু আমাকে তো ভীষণ আদর করে। নানী ছাড়া বাবার শত্রু আর কে থাকবে, বলো?
একটা ব্যাপার পরিষ্কার, তোমার ক্ষতি চান না তোমার নানী। কিশোর যুক্তি দেখালো, দুর্ঘটনায় তোমারও ক্ষতি হতে পারতো। তিনিই যদি করাবেন, এসব কথা কি তিনি ভাবেননি? নিচের ঠোঁটে একবার চিমটি কাটলো সে। রবি, আমার বিশ্বাস, এরকম কিছু তিনি করাতে পারেন না। হয়তো অন্য শত্রু আছে তোমার বাবার, যার কথা তুমি জানো না। কার্নিভল ধ্বংস করার পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে।
কে করছে জানি না, কিশোর। তবে একথা ঠিক, শীঘ্রি তাকে ঠেকাতে না পারলে বাবাকে শেষ করে দেবে। ঐ তৃতীয় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে আছে কারনিভলের সবাই।
ততীয়টা তো ঘটেই গেছে? অবাক হলো কিশোর।
মাথা নাড়লো রবি। না, কিরে বেরিয়ে যাওয়াটাকে দুর্ঘটনা ধরছে না ওরা। কারণ তাতে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি নাহলে দুর্ঘটনা ধরা হয় না। কাজেই তৃতীয়টার অপেক্ষায় আছে।
খুব খারাপ কথা, রবিন বললো। সর্বনাশ হয়ে যাবে তো। আতঙ্ক নার্ভাস করে ফেলে মানুষকে, আর নার্ভাস হলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটায় মানুষ।