সেটাও পড়লেন কনর। হু, আসল গোয়েন্দা বলেই মনে হচ্ছে। পুলিশ তো আর মিছে কথা বলবে না। সে যাই হোক, ইয়াং ম্যান, এখানে কোনো কেস নেই। তোমাদের জন্যে। কোনো রহস্য নেই। তুমি ভুল করেছে।
কিশোর পাশা ভুল করে না, স্যার, ঘোষণা করলো রবিন।
ওরকম জোর দিয়ে কিছু বলা যায় না, হেসে বললেন কনর। বলতে পারো, সাধারণত ভুল করে না। একেবারেই ভুল করে না, এটা হতে পারে না। মানুষ মাত্রেই ভুল করে।
কিন্তু, বাবা…, বলতে গিয়ে বাধা পেলো রবি।
কনর বললেন, থামো, রবি, অনেক হয়েছে। ওসব কথা আর শুনতে চাই না, উঠে দাঁড়ালেন তিনি। কিশোর ভুল করেছে। তবে আমাদের অনেক উপকার করেছে ওরা, পুরস্কার একটা অবশ্যই দিতে হয়। কারনিভলের তিনটে ফ্রি পাস। তিনটে কার্ড বের করে দিলেন তিন গোয়েন্দার হাতে। কী, খুশি হয়েছে তো?
নিশ্চয়, বললো বটে, হাসি দেখা গেল না গোয়েন্দাপ্রধানের মুখে।
আরি! দরজার দিকে হাত তুলে চেঁচিয়ে উঠলো রবিন।
সবাই তাকালো। পেছনের দরজার পর্দায় মস্ত ছায়া পড়েছে। লম্বা এলোমেলো চুল, চাপ দাড়ি, পেশীবহুল চওড়া কাঁধ।
ওই যে ছায়া! দাঁতের ফাঁক দিয়ে হিসহিস শব্দ বেরোলো মুসার।
ডাকলেন কনর।
ঘরে ঢুকলো একজন লোক। হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো ছেলেরা। স্বাভাবিক উচ্চতা, কিন্তু দেখার মতো মাংসপেশী। ঠেলে ফুলে উঠেছে নগ্ন কাঁধের। পেশী। পরনে কালো-সোনালি রঙের আটো পাজামা, গায়ের সঙ্গে মিশে রয়েছে। পায়ে চকচকে বুট। কালো অগোছালো চুল-দাড়ি কেমন যেন বন্য করে তুলেছে। চেহারাটাকে।
ও আমাদের স্ট্রং ম্যান, পরিচয় করিয়ে দিলেন কনর, ওয়ালশ কোহেন। একটা রহস্যের তাহলে সমাধান হয়ে গেল, বয়েজ। কারনিভলে, একজন মানুষ। নানারকম কাজ করে, কোহেনও ব্যতিক্রম নয়। সে আমাদের সিকিউরিটি ইনচার্জ। তোমাদের ঘোরাফেরা দেখে নিশ্চয় সন্দেহ হয়েছিল তার, চুপ করে গিয়ে। দেখে এসেছে কি করছো।
ঠিকই বলেছেন, স্বীকার করলো কোহেন। মোটা, ভারি গলা।
মাথা ঝোকালেন কনর। তো, ছেলেরা, কোহেনের সঙ্গে আমার জরুরী কথা আছে। রবিরও শুটিং গ্যালারিতে যাওয়া দরকার। তোমরা ঘোরো গিয়ে, যা ইচ্ছে দেখো। ফ্রি পাস আছে, কোথাও পয়সা দিতে হবে না।
থ্যাংক ইউ, স্যার, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। ইশারায় রবিন আর মুসাকে। আসতে বলে পা বাড়ালো দরজার দিকে। বাইরে বেরিয়ে সোজা চলে এলো। ট্রেলারের পেছনে।
কি করছো? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
আমি শিওর, কিছু একটা ঘটছে এখানে, নিচু গলায় বললো কিশোর। কোহেনকে সন্দেহ হচ্ছে আমার। প্রহরীর মতো লাগে না। এমনভাবে তাঁবুর কাছে আড়ি পেতে ছিলো, যেন চোর। আর রবিও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তার বাবা থামিয়ে দিয়েছেন। কাজেই জানালার কাছে দাঁড়িয়ে শুনবো কি হচ্ছে।
সরো! বলতে বলতেই দুজনকে ঠেলে আড়ালে নিয়ে এলো মুসা।
ট্রেলার থেকে নেমে দ্রুত গ্যালারির দিকে চলে গেল রবি, কোনোদিকে তাকালো না। পা টিপে টিপে, জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো ছেলেরা।
কোহেনের ভারি গলা শোনা গেল, কিংও. ছুটলো। এরপর কি ঘটবে, কনর? হয়তো শেষ পর্যন্ত বেতনই দিতে পারবেন না আমাদের।
আগামী হপ্তায়ই বেতন পাবে। এতো চিন্তা করো না।
আপনাকে আর কি বলবো? জানেনই কারনিভলের লোকেরা কুসংস্কারে। বিশ্বাসী। আজকের শো তেমন জমছে না। আরও অঘটন ঘটবে।
কোহেন, শোনো। তুমি…।
ভেতরে পায়ের শব্দ। ছেলেদের মাথার ওপরে বন্ধ হয়ে গেল জানালা। আর কথা শোনা গেল না। দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। সরে চলে এলো তিন গোয়েন্দা।
সত্যিই গণ্ডগোল, বলে উঠলো মুসা। কিন্তু আমরা কি করতে পারি? মিস্টার। কনর আমাদের পাত্তাই দিলেন না।
কিশোর চিন্তিত। রবিকেও কিছু বলতে দিলো না। যাকগে, পাস আছে। আমাদের। নজর রাখতে পারবো। রবিন, কাল লাইব্রেরিতে গিয়ে পত্রিকা ঘাটবে। দেখবে, অন্যান্য শহরে কারনির্ভুলটা কেমন জমিয়ে এসেছে। গত কয়েক দিনের কাগজ দেখলেই চলবে। কাল ভাৰবো, কি করা যায়।
.
০৬.
সেরাতে ভালো ঘুম হলো না মুসার। মনে ভাবনা। তিন গোয়েন্দাকে তদন্ত করতে দেয়ার জন্যে কিভাবে রাজি করানো যায় মিস্টার কনরকে? সকাল পর্যন্ত ভেবেও কোনো উপায় বের করতে পারলো না। শেষে চেষ্টা ক্ষান্ত দিলো। রবিন কিংবা কিশোর উপায় বের করে ফেলবে। নাস্তার টেবিলে এসে দেখলো খাওয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছেন মিস্টার আমান।
বাবা, এতো তাড়াতাড়ি উঠেছে আজ? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ, ডেভিস ক্রিস্টোফার ডেকেছেন। নতুন একটা ছবি করবেন। জরুরী কাজ নাকি আছে, কফির কাপে লম্বা চুমুক দিলেন। কিন্তু এদিকে যে একটা গোলমাল হয়ে গেল।
কী?
তোমার মাকে কাল রাতে কথা দিয়েছি, আজ বাগান সাফ করে দেবো। তোমার তো স্কুল ছুটি, কাজও নেই। দাও না আমার কাজটা করে।
মনে মনে গুঙিয়ে উঠলো মুসা। মুখে বললো,.বেশ, দেবো।
লাঞ্চের আগে বেরোতে পারলো না। বাগান সাফ করে, দুপুরের খাওয়া খেয়ে, সাইকেল নিয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ডে চললো মুসা। হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে দেখলো, কিশোর ডেস্কেই রয়েছে।
কোনো উপায় বের করতে পারলে? ভূমিকা নেই, সরাসরি জিজ্ঞাসা।
নাহ, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো মুসা। তুমি?
আমিও না, মুখ গোমড়া করে রেখেছে কিশোর। দেখি, রবিন কি জেনে আসে। তার জন্যেই বসে আছি।