জানি না, বিড়বিড় করলো কিশোর।
কে করেছে ভাবছো? কারনিভলের কেউ?
মনে হয়। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছো, ট্রেলারের কাছ থেকে বেশ দূরে চলে গিয়েছিলো? যেন, পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তাকে সেখানে।
মারকাস? জবাবটা নিজেই দিয়ে দিলো মুসা, না, সে নয়। তালা জোর করে খোলার দরকার হতো না তার। নিশ্চয় চাবি আছে।
ধোঁকা দেয়ার জন্যে করতে পারে। রবি গিয়ে বলার পর তবে তার টনক, নড়লো। আরও আগে খোঁজ করলো না কেন সিংহটার? বিশেষ করে, কয়েক মিনিট পরেই যখন খেলা দেখানোর কথা?
জবাব খুঁজে পেলো না দুই সহকারী।
ভ্রূকুটি করে কিশোর বললো আবার, সমস্যাটা হলো, প্রায় কিছুই জানি না আমরা এখনও। কে, কেন করেছে আন্দাজই করতে পারছি না। তবে…
তবে কী? বাধা দিয়ে বললো মুসা। রহস্য মনে করছো নাকি এটাকে? তদন্ত করার কথা ভাবছো?
হ্যাঁ, ভাবছি…, শুরু করেই থেমে গেল সে। ঠোঁটে আঙুল রেখে কথা বলতে নিষেধ করলো। বুড়ো আঙুল নেড়ে দেখালো তাঁবুর পেছন দিকে।
বিশাল একজন মানুষের ছায়া পড়েছে তাঁবুর দেয়ালে। চওড়া কাঁধ। কেমন হেলে রয়েছে মাথাটা, তাঁবুর গায়ে কান ঠেকিয়ে ভেতরের কথা শুনছে যেন। ছায়া দেখে মনে হয় না গায়ে কাপড় আছে।
জলদি বেরোও, ফিসফিস করে বললো কিশোর।
তাঁবুর পেছন দিয়ে পথ নেই। সামনে দিয়েই বেরোলো ওরা। ঘুরে তাড়াতাড়ি চলে এলো তাঁবুর এক কোণে, পেছনে কে আছে দেখার জন্যে।
কেউ নেই।
পালিয়েছে, রবিন বললো।
এই সময় পেছনে শোনা গেল পায়ের শব্দ। এই যে, কানের কাছে গমগম করে উঠলো ভারি কণ্ঠ, তোমরা এখানে কি করছো?
চমকে উঠলো তিনজনেই। ঢোক গিললো মুসা। ফিরে তাকিয়ে দেখলো বিশালদেহী একজন মানুষ। কালো চোখ। কাঁধে ফেলা লম্বা, ভারি একটা হাতুড়ি।
আ-আ-আমরা…, তোতলাতে শুরু করলো মুসা।
রবি এসে দাঁড়ালো মানুষটার পেছনে। তিন গোয়েন্দাকে দেখে উজ্জ্বল হলো: চোখ। বাবা খুঁজে পেলো তাহলে তোমাদের।
তোমার বাবা? আবার ঢোক গিললো মুসা।
হ্যাঁ, খোকা, হাসি ফুটলো তার মুখে, হাতুড়িটা নামিয়ে রাখলেন মাটিতে, হাতল ধরে রেখেছেন। ধন্যবাদ জানানোর জন্যে খুঁজছিলাম তোমাদের। কিংকে সামলে মহা-অঘটন থেকে বাঁচিয়েছো। রাফনেকদের সাহায্য করছিলাম, তাই তখন আমাকে খুঁজে পায়নি রবি।
তোমাদেরকে পুরস্কার দিতে চায় বাবা, রবি বললো।
পুরস্কারের কথায় কানা বেড়ালটার কথা মনে পড়লো মুসার। খাইছে! আমার। বেড়াল! দ্রুত চারপাশে তাকালো সে, বেড়ালটা খুঁজলো। নেই।
বেড়াল? অবাক হলেন মিস্টার কনর।
শুটিং গ্যালারিতে পুরস্কার পেয়েছিলো, বাবা, রবি জানালো। ফার্স্ট প্রাইজ।
সিংহের তাঁবুতে ফেলে এসেছে হয়তো, মুসাকে বললো রবিন।
কিন্তু তাঁবুতে তন্নতন্ন করে খুঁজেও বেড়ালটা পাওয়া গেল না। শুটিং . গ্যালারিতে চললো সবাই। সেখানেও নেই ওটা। এমনকি মুসা যেখানে কিংকে শুইয়েছে সেখানেও নেই।
ছিলো তো, কোথায় রেখেছে, মনে করতে পারছে না মুসা, আমার হাতেই ছিলো। সিংহটাকে যখন দেখলাম, তখনও ছিলো। ভয়ে হয়তো হাত থেকে ছেড়ে দিয়েছি, কেউ তুলে নিয়ে গেছে।
নীরবে ভাবছিলো কিশোর। কড়ে আঙুল কামড়াচ্ছিল। দাঁতের ফাঁক থেকে সরিয়ে নিয়ে বললো, মনে করতে পারছো না?
আস্তে মাথা নাড়লো মুসা।
এতো মন খারাপ করছো কেন? মিস্টার কনর বললেন। আরেকটা পুরস্কার দেবো। বেড়ালের চেয়ে ভালো কিছু।
আর চেপে রাখতে পারলো না কিশোর। বলে ফেললো, মিস্টার কনর, আপনার কারনিভলে কোনো গোলমাল চলছে?
গোলমাল? কালো চোখের তারা স্থির নিবদ্ধ হলো কিশোরের ওপর। কেন, একথা কেন?
এই সিংহের তাঁবুতে আমরা কথা বলছিলাম। এই সময় তার পেছনে একটা লোকের ছায়া দেখলাম, মনে হলো আমাদের কথা আড়িপেতে শুনছে সে।
তোমাদের কথা আড়িপেতে শুনেছে? ভুরু কোঁচকালেন তিনি। তারপর, হেসে উঠলেন। ভুল করেছো। কিং তোমাদের ঘাবড়ে দিয়েছে। ভয় পেলে হয় ওরকম। উল্টোপাল্টা দেখে লোকে, শোনে
জানি, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। কিন্তু ব্যাপারটা আমাদের কল্পনা নয়। তিনজনেই দেখেছি। আর কিংও নিজে থেকে ছাড়া পায়নি, ট্রেলারের দরজা খুলে। দেয়া হয়েছিলো।
কি যেন ভাবলেন মিস্টার কারসন। এসো, আমার ট্রেলারে। শো দেখানোর জায়গা থেকে খানিক দূরে মাঠের মধ্যে পার্ক করা রয়েছে কারনিভলের লোকদের ট্রাক, ট্রেলার, কার। একটা ট্রাকের পেছনে লাগানো ট্রেলারে থাকে বাপ-ছেলে, মিস্টার কনর- আর রবি। ট্রেলারের ভেতরে দুটো বাংক, কয়েকটা চেয়ার, একটা ডেস্ক–তাতে কাগজপত্র ছড়ানো, ছোট একটা আলমারি, বড় ঝুড়িতে নানারকম বাতিল জিনিস ছেঁড়া স্টাফ করা একটা কুকুর, একটা বেড়াল, কিছু ভাঙা পুতুল।
বাতিল মাল কিনে সারিয়ে নিই আমি, গর্বের সঙ্গে বললো রবি। পরে পুরস্কার দিই।
বসো, ছেলেদের বললেন কনর। সব খুলে বলো আমাকে।
বলার তেমন কিছু নেই, স্যার, কিশোর বললো। তবে কিংকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, এটা ঠিক। জোর করে তালা খোলার চিহ্ন আছে।
এমনভাবে কথা বলছে, যেন অভিজ্ঞ গোয়েন্দা, হাসলেন মিস্টার কনর।
গোয়েন্দাই, স্যার, পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে দিলো কিশোর। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছি আমরা।
কার্ডটা পড়ে মাথা দোলালেন কনর। ভালো। মজার হবি…
ঠিক হবি নয়, স্যার, আমরা সিরিয়াস। বলে পকেট থেকে বের করে দিলো আরেকটা কাগজ, পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারের দেয়া সার্টিফিকেট।